বাণী

দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যেথা থাকে
ভিখারিনী বেশে সেথা দেখেছি মোর মাকে
		মোর অন্নপূর্ণা মাকে॥
অহংকারের প্রদীপ নিয়ে স্বর্গে মাকে খুঁজি
মা ফেরেন ধূলি পথে যখন ঘটা করে পূজি
ঘুরে ঘুরে দূর আকাশে প্রণাম আমার ফিরে আসে
যথায় আতুর সন্তানে মা কোল বাড়ায়ে ডাকে॥
নামতে নারি তাদের কাছে সবার নীচে যারা
তাদের তরে আমার জগন্মাতা সর্বহারা।
অপমানের পাতাল তলে লুকিয়ে যারা আছে
তোর শ্রীচরণ রাজে সেথা নে মা তাদের কাছে
আনন্দময় তোর ভুবনে আনব কবে বিশ্বজনে
আমি দেখব জ্যোতির্ময়ী রূপে সেদিন তমসাকে
		আমার অন্নপূর্ণা মাকে॥

বাণী

কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ আমার হৃদয় গগনে।
এসো প্রিয়া এসো বঁধূ-বেশে এই বিদায়-গোধূলি-লগনে।।
	দিনের চিতার রক্ত-আলোকে
	শুভ-দৃষ্টি গো হবে চোখে চোখে,
আমার মরণ-উৎসব-ক্ষণে শঙ্খ বাজুক সঘনে।।
চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া হের খুঁজিছে মোদেরে তারাদল,
সজল-বসনা বাদল-পরীর নয়ন করিছে ছল ছল।।
	মরণে তোমারে পাইব বলিয়া 
	জীবনে করেছি আরাধনা প্রিয়া,
এসো মায়ালোক-বিহারিণী মোর কুহেলি-আঁধার-স্বপনে।।

বাণী

আমিনা-দুলাল নাচে হালিমার কোলে
তালে তালে সোনার বুকে সোনার তাবিজ দোলে।।
সে কাঁদিলে মুক্তা ঝরে হাসলে ঝরে মানিক
	ঈদের চাঁদে লেগে আছে সেই খুশির খানিক।
তাঁর কচি মুখে খোদার কালাম আধো আধো বলে।।
	দেখেছিল লুকিয়ে সে নাচ কোটি গ্রহতারা
	আসমানে তাই ঘোরে তারা আজো দিশাহারা
সেদিন নেচেছিল বিশ্বভুবন ইয়া মোহাম্মদ ব’লে।।
	কোরানের আয়াতে লেখা সেই নাচেরই ছন্দ
	তকবীরের ধ্বনিতে বাজে তাহারি আনন্দ
আমি থাকলে সেদিন হতাম ধূলি তাঁহার পায়ের তলে।।

বাণী

ইরানের বুলবুলি কি এলে পথ ভুলে
গোলাপের স্বপ্ন ল’য়ে সিন্ধু নদী-কূলে।
চন্দনের গন্ধে কবি মিশালে হেনার সুরভি
তোমার গানে মরুভূমির দীর্ঘশ্বাস দুলে।।
কোন সাকির আঁখির করুণা নাহি পেয়ে
মরুচারী হে বিরহী, এলে মেঘের দেশে ধেয়ে।
	হেথা 	কাজল আঁখি নিরখি’
		তৃষ্ণা তব জুড়াল কি,
লালা ফুলের বেদনা ভুলিবে কি পলাশ ফুলে।।

বাণী

টলমল টলমল পদভরে
বীরদল চলে সমরে॥
খরধার তরবার কটিতে দোলে
রণন ঝনন রণ-ডঙ্কা বোলে
ঘন তূর্য-রোলে শোক-মৃত্যু ভোলে
দেয় আশিস সূর্য সহস্র করে॥
চলে শ্রান্ত দূর-পথে মরু দুর্গম পর্বতে
চলে বন্ধুবিহীন একা, মোছে রক্তে ললাট-কলঙ্ক-লেখা।
কাঁপে মন্দিরে ভৈরবী -  এ কি বলিদান!
জাগে নিঃশঙ্ক শঙ্কর ত্যজিয়া শ্মশান!
দোলে ঈশান মেঘে কাল প্রলয় নিশান!
বাজে ডম্বরু, অম্বর কাঁপিছে ডরে॥

বাণী

গভীর রাতে জাগি’ খুঁজি তোমারে।
দূর গগনে প্রিয় তিমির–‘পারে।।
জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে
আঙিনায় ফুটে’ ফুল ঝ’রে পড়ে আছে,
বাণ–বেঁধা পাখি সম আহত এ প্রাণ মম —
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।।
মৌনা নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে,
এসো প্রিয়, এই বেলা বক্ষে নীরবে।
কত কথা কাঁটা হ’য়ে বুকে আছে বিঁধে
কত আভিমান কত জ্বালা এই হৃদে,
দেখে যাও এসো প্রিয় কত সাধ ঝ’রে গেল —
কত আশা ম’রে গেল হাহাকারে।।

১. দেখিবে এসো প্রিয়