বাণী

কেন	মনোবনে মালতী-বল্লরি দোলে - জানি না।
কেন	মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব-তলে - জানি না।।
কেন	ঊর্মিলা-ঝরনার পাশে
সে	আপন মঞ্জরি-ছায়া দেখে' হাসে,
কেন	পাপিয়া কুহু মুহু মুহু বোলে, জানি না।।
চৈতালি-চাঁপা কয়, মালতী শোন
শুনেছিস বুঝি মধুকর গুঞ্জন,
তাই বুঝি এত মধু সুরভি উথলে —
মধু-মালতী বলে, জানি না, জানি না।।

বাণী

কথার কুসুমে গাঁথা গানের মালিকা কার।
ভেসে এসে হতে চায় গো আমার গলার হার।।
		আমি তারে নাহি জানি
		তার সুরের সূত্রখানি,
তবু বিজড়িত হয় কেন গো, আমার কঙ্কনে বারবার।।
তার সুরের তুলির পরশে, ওঠে আমার ভুবন রাঙ্গি’,
কোন বিস্মৃত জনমের যেন কত স্মৃতি ওঠে জাগি’।
		আমার রাতের নিদে
		তার সুর এসে প্রাণে বিঁধে,
যার সুর এত চেনা, কবে দেখা পাবো সেই অচেনার।।

বাণী

কেন		প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া
		কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া গো।
আমি		যত ভুলি ভুলি করি, তত আঁকড়িয়া ধরি
		শ্যামের সে রূপ ভোলা কি যায়, নিখিল শ্যামল যার শোভায়
		আকাশে সাগরে বনে কান্তারে লতায় পাতায় সে রূপ ভায়।
আমার		বঁধুর রূপের ছায়া বুকে ধরি’ আকাশ-আরশি নীল গো
বহে		ভুবন প্লাবিয়া কালারে ভাবিয়া কালো সাগর-সলিল গো। সখি গো —
		যদি ফুল হয়ে ফুটি তরু-শাখে, সে যে পল্লব হয়ে ঘিরে থাকে। সখি গো —
আমি		যেদিকে তাকাই হেরি ও-রূপ কেবল
সে যে		আমারি মাঝারে রহে করি’ নানা ছল
সে যে		বেণী হয়ে দোলে পিঠে চপল চতুর।
সে যে		আঁখির তারায় হাসে কপট নিঠুর।
		তারে কেমনে ভুলিব, সখি কেমনে ভুলিব।
থাকে		কবরী-বন্ধে কালো ডোর হয়ে কাল্‌ফণী কালো কেশে গো
থাকে		কপালের টিপে, চোখের কাজলে কপোলের তিলে মিশে’ গো!
আমার 	এ-কূল ও-কূল দু’কূল গেল।
		কূলে সই পড়িল কালি সেও কালো রূপে এলো।
রাখি		কি দিয়া মন বাঁধিয়া, বাঁধিয়া বাঁধিয়া বাঁধিয়া গো।।

বাণী

কোকিল, সাধিলি কি বাদ।
নিশি অবসান হল না মিটিতে সাধ।।
	মিলনের মোহ কেন
	ডাকিয়া ভাঙিলি হেন,
তুই রে সতিনী যেন — চন্দ্রাবলীর ফাঁদ।।
	সারা নিশি অভিমানে
	চাহিনি শ্যামের পানে,
জেগে দেখি কুহু-তানে — নাহি শ্যামচাঁদ।।
	ননদিনী কুটিলা কি
	পাঠায়েছে তোরে পাখি,
সুরের বাসরে ডাকি’ — আনিলি বিষাদ।।

বাণী

	কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জরি-কর্ণে।
	আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে।।
	মোরে চেন কি?
মোর	আঁচলে চাঁপা, হেনা যুঁই অতসী।
মোর	বনের সাজিতে ভরা পলাশ বকুল
	নব আমের মুকুল,
মম	উত্তরী ঝলমল কিশলয়ে পর্ণে।।
	আনি’ মলয়-গিরি হ’তে চন্দন-গন্ধ
	হৃদয়-উদাস-করা সমীর সুমন্দ,
	ছড়াই আবির হাসি জোছনার স্বর্ণে।।

বাণী

করুণ কেন অরুণ আঁখি দাও গো সাকি দাও শারাব
হায় সাকি এ আঙ্গুরী খুন নয় ও হিয়ার খুন–খারাব।।
আর সহে না দিল্‌ নিয়ে এই দিল–দরদির দিল্‌লাগী,
তাইতে চালাই নীল পিয়ালায় লাল শিরাজি বে–হিসাব।।
হারাম কি এই রঙিন পানি আর হালাল এই জল চোখের?
নরক আমার হউক মঞ্জুর বিদায় বন্ধু!লও আদাব।।
দেখ্‌ রে কবি, প্রিয়ার ছবি এই শারাবের আর্শিতে,
লাল গেলাসের কাঁচ্‌–মহলার পার হ’তে তার শোন্‌ জবাব্‌।।