বাণী

পুরুষ	:	এলে তুমি কে, কে ওগো
		তরুণা অরুণা করুণা সল চোখে।
স্ত্রী	:	আমি তব মনের বনের পথে
		ঝিরি ঝিরি গিরি-নির্ঝরিণী
		আমি যৌবন-উন্মনা হরিণী মানসলোকে।।
পুরুষ	:	ভেসে যাওয়া মেঘের সজল ছায়া
		ক্ষণিক মায়া তুমি প্রিয়া
		স্বপনে আসি' বাজায়ে বাঁশি স্বপনে যাও মিশাইয়া।
স্ত্রী	:	বাহুর বাঁধনে দিই না ধরা —
		আমি স্বপন-স্বয়ম্বরা
		সঙ্গীতে জাগাই ইঙ্গিতে ফোটাই
		তোমার প্রেমের যুঁই-কোরকে।
পুরুষ	:	আধেক প্রকাশ 
স্ত্রী	:	আধেক গোপন
পুরুষ	:	আধো জাগরণ 
স্ত্রী	:	আধেক স্বপন
উভয়ে	:	খেলিব খেলা ছায়া-আলোকে।।

বাণী

উম্মত আমি গুনাহগার তবু ভয় নাহি রে আমার।
আহমদ আমার নবী যিনি খোদ্ হবিব খোদার।।
যাঁহার উম্মত্ হ’তে চাহে সকল নবী,
তাঁহারি দামন ধরি’ পুলসরাত হব পার।।
	কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে
	যবে ‘নফ্‌সি য়্যা নফ্‌সি’ রবে,
‘য়্যা উম্মতী’ ব’লে একা কাঁদিবেন আমার মোখতার।।
কাঁদিবেন সাথে মা ফাতেমা ধরিয়া আরশ্ আল্লার।
হোসায়নের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।
দোজখ্ হয়েছে হারাম যে-দিন পড়েছি কলেমা।
যেদিন হয়েছি আমি কোরানের নিশান-বর্দার।।

বাণী

আমাদের ভাল কর, হে ভগবান,
সকলের ভাল কর, হে ভগবান।।
আমাদের সব লোকে বাসিবে ভালো
আমরাও সকলেরে বাসিব ভালো,
রবে না হিংসা-দ্বেষ, দেহ ও মনের ক্লেশ
মাটির পৃথিবী হবে স্বর্গ সমান - হে ভগভান।।
জ্ঞানের আলোক দাও, হে ভগবান!
বিপুল শক্তি দাও, হে ভগবান।
তোমারি দেওয়া জ্ঞানে চিনিব তোমায়
তোমার শক্তি হবে কর্মে সহায়,
ধর্ম যদি সাথি হয়, রবেনাক দুঃখ-ভয়
বিপদে পড়িলে তুমি করো যেন ত্রাণ - হে ভগবান।।

বাণী

		তোর নামেরই কবচ দোলে দোলে আমার বুকে, হে শঙ্করী।
		কি ভয় দেখাস্? আমি তোকেও ভয় করি না, ভয় করি না ভয়ঙ্করী।।
			মৃত্যু প্রলয় তাদের লাগি
			নয় যারা তোর অনুরাগী।
		(মাগো) তোর শ্রীচরণ আশ্রয় মোর (দেখে) মরণ আছে ভয়ে মরি’।।
		তোর যদি না হয় মা বিনাশ, আমিও মা অবিনাশী;
(আমি)	তোরই মাঝে ঘুমাই জাগি, তোরই কোলে কাঁদি হাসি।
			তোর চরণ ছেড়ে পলায় যারা (মা)
			মায়ার জালে মরে তারা
		তোর মায়া-জাল এড়িয়ে গেলাম মা তোর অভয়-চরণ ধরি, মা।।

বাণী

গহন বনে শ্রীহরি নামের মোহন বাঁশি কে বাজায়।
ভুবন ভরি’ সেই সুরেরি সুরধুনি বয়ে যায়।।
সেই নামেরি বাঁশির সুরে, বনে পূজার কুসুম ঝুরে
সেই নামেরি নামাবলি, গ্রহ তারা আকাশ জুড়ে
অন্ত বিহীন সেই নামেরি সুর-স্রোতে কে ভাসবি আয়।।

চলচ্চিত্রঃ ধ্রুব (কাহিনীকার: গিরিশ ঘোষ)

বাণী

অ-মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খাঁদা নাকে নাচ্‌ছে ন্যাদা-নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
ওঁর নাক্‌টাকে কে করল খ্যাঁদা র‍্যাঁদা বুলিয়ে?
চাম্‌চিকে-ছা ব’সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে!
বুড়ো গুরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছেঁদা দিয়ে টুকিকে দেয় ‌‘টু’!
ছোড়্‌দি’ বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক্‌! থুঃ
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দাদু বুঝি চীনাম্যান মা, নাম বুঝি চ্যাংচু?
তাই বুঝি ওঁর মুখ্‌টা অমন চ্যাপ্টা সুধাংশু!
জাপান দেশের নোটিশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়-নাক,
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপ্টা নাকেই বাজ্‌তো সাতটা শাঁখ,
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাব্‌ড়া করেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চ’লতে বেঁজির ছা,
দাড়ির জালে প’ড়ে যাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি-বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙতে ‘আল্‌মানক্‌’
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক ক’রেছে ‘ট্যান’!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন-হাসিকে।
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু-দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!

‘খাঁদু-দাদু’

[সঞ্চিতা, কাজী নজরুল ইসলাম, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ২০০৫]