দেশাত্মবোধক

  • আজ ভারতের নব আগমনী

    বাণী

    আজ ভারতের নব আগমনী জাগিয়া উঠেছে মহাশ্মশান
    জাগরণী গায় প্রভাতের পাখি ফুলে ফুলে হাসে গোরস্থান॥
    	ট’লেছে অটল হিমালয় আজি
    	সাগরে শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি’
    হলাহল শেষে উঠেছে অমৃত বাঁচাইতে মৃত মানব-প্রাণ॥
    	আঁধারে ক’রেছে হানাহানি যারা
    	আলোকে চিনেছে আত্মীয় তা’রা
    এক হয়ে গেছে খ্রিস্টান, শিখ, হিন্দু, পারসি, মুসলমান।
    	এই তাপসীর চরণের তলে
    	লভিয়াছে জ্ঞান শিক্ষা সকলে 
    আবার আসিবে তারা দলে দলে করিতে পুণ্য-তীর্থ-স্নান॥
    
  • এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়

    বাণী

    এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
    ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি॥
    রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
    আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
    ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি॥
    কেতকী-কদম-যূথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা,
    পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
    তড়াগে পুকুরে থই থই করে শ্যামল শোভার নবনী॥
    শাপলা শালুক সাজাইয়া সাজি শরতে শিশির নাহিয়া,
    শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগামনী-গীত গাহিয়া।
    অঘ্রাণে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনি॥
    শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,
    ভাটিয়ালি গাও মাঝিদের সাথে গো, কীর্তন শোনো রাতে মা।
    ফাল্গুনে রাঙা ফুলের আবিরে রাঙাও নিখিল ধরণী॥
    
  • ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি

    বাণী

    ও ভাই	খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
    		আমার দেশের মাটি।।
    			এই দেশেরই মাটি জলে
    			এই দেশেরই ফুলে ফলে
    		তৃষ্ণা মিটাই মিটাই ক্ষুধা পিয়ে এরি দুধের বাটি।।
    			এই মায়েরই প্রসাদ পেতে
    			মন্দিরে এর এঁটো খেতে
    		তীর্থ ক’রে ধন্য হতে আসে কত জাতি।
    ও ভাই	এই দেশেরই ধূলায় পড়ি’
    		মানিক যায় রে গড়াগড়ি
    ও ভাই	বিশ্বে সবার ঘুম ভাঙালো এই দেশেরই জিয়ন-কাঠি।।
    			এই মাটি এই কাদা মেখে
    			এই দেশেরই আচার দেখে
    		সভ্য হ’লো নিখিল ভুবন দিব্য পরিপাটি।
    ও ভাই	সন্ন্যাসিনী সকল দেশে
    		জ্বাল্‌লো আলো ভালোবেসে
    মা		আঁধার রাতে এক্‌লা জাগে আগ্‌লে রে এই শ্মশান-ঘাঁটি।।
    

  • ওরে আজ ভারতের নব যাত্রা পথের

    বাণী

    ওরে	আজ ভারতের নব যাত্রা পথের
    	বাঁশি বাজলো, বাজলো বাঁশি
    	ফেলে তরুর ছায়া ভুলে ঘরের মায়া
    	এলো তরুণ পথিক ছুটে রাশি রাশি॥
    	তারা আকাশকে আজ চাহে লুটে নিতে
    	তারা মন্থর ধরায় চাহে দুলিয়ে দিতে
    	তারা তরুণ তরুণ প্রাণ জাগায় মৃতে
    	সাহস জাগায় চিতে তাদের অট্টহাসি॥
    	মোরা প্রাচীরের পরে রে প্রাচীর তুলে
    	ভাই হয়ে ভাইকে হায় ছিলাম ভুলে।
    	আজ ভেঙে প্রাচীর হল ঘরের বাহির
    	একই অঙ্গনে দাঁড়ালো উন্নত শির
    	এলো মুক্ত গগন তলে প্রাণ পিয়াসি
    	এলো তরুণ পথিক ছুটে রাশি রাশি॥
    
  • কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান

    বাণী

    কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান
    জয় আর্যাবর্ত, জয় ভারত, জয় হিন্দুস্থান।।
    শিরে হিমালয় প্রহরী, পদ বন্দে সাগর যাঁর,
    শ্যাম বনানী কুন্তলা রানী জন্মভূমি আমার।
    	ধূসর কভু উষর মরুতে,
    	কখনো কোমল লতায় তরুতে,
    কখনো ঈশানে জলদ-মন্দ্রে বাজে-মেঘ বিষাণ।।
    সকল জাতি সকল ধর্ম পেয়েছে হেথায় টাই
    এসেছিল যারা শত্রুর রূপে, আজ সে স্বজন ভাই।।
    	বিজয়ীর বেশে আসিল যাহারা,
    	আজি মা’র কোলে সন্তান তারা,
    (তাই) মা’র কোল নিয়ে করে কাড়াকাড়ি হিন্দু মুসলমান।।
    জৈন পার্শী বৌদ্ধ শক্তি খ্রিস্টান বৈষ্ণব
    মা’র মমতায় ভুলিয়া বিরোধ এক হয়ে গেছে সব।
    	ভুলি’ বিভিন্ন ভাষা আর বেশ
    	গাহিছে সকলে আমার স্বদেশ
    শত দল মিলে’ শতদল হ’য়ে করিছে অর্ঘ্য দান।।
    
  • কারার ঐ লৌহকপাট

    বাণী

    কারার ঐ লৌহ-কপাট
    ভেঙ্গে ফেল্ কর্‌ রে লোপাট রক্ত-জমাট
    শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী!
    ওরে ও তরুণ ঈশান!
    বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ! ধ্বংস-নিশান
    উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥
    গাজনের বাজনা বাজা!
    কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা
    মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে?
    হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান প’রবে ফাঁসি? সর্বনাশী —
    শিখায় এ হীন্ তথ্য কে রে?
    ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা, দেরে দে প্রলয়-দোলা গারদগুলা
    জোরসে ধ’রে হ্যাঁচকা টানে।
    মার্‌ হাঁক হায়দরী হাঁক্ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক
    মৃত্যুকে ডাক জীবন-পানে॥
    নাচে ঐ কাল-বোশেখী, কাটাবি কাল ব’সে কি?
    দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’।
    লাথি মার, ভাঙ্‌রে তালা! যত সব বন্দী-শালায় —
    আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্ উপাড়ি॥
    

    সিনেমাঃ ‘চট্রগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’

  • জননী মোর জন্মভূমি

    বাণী

    জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায়ে নোয়াই মাথা।
    স্বর্গাদপি গরীয়সী স্বদেশ আমার ভারত-মাতা।।
    তোমার স্নেহ যায় ব’য়ে মা শত ধারায় নদীর স্রোতে
    ঘরে ঘরে সোনার ফসল ছড়িয়ে পড়ে আঁচল হ’তে,
    স্নিগ্ধ-ছায়া মাটির বুকে তোমার শীতল পাঁটী পাতা।।
    স্বর্গের ঐশ্বর্য লুটায় তোমার ধূলি-মাখা পথে
    তোমার ঘরে নাই যাহা মা, নাইক তাহা ভূ-ভারতে,
    ঊর্ধ্বে আকাশ নিম্নে সাগর গাহে তোমার বিজয়-গাথা।।
    আদি জগদ্ধাত্রী তুমি জগতেরে প্রথম প্রাতে
    শিক্ষা দিলে দীক্ষা দিলে, করলে মানুষ আপন হাতে,
    তোমার কোলের লোভে মা গো রূপ ধ’রে আসেন বিধাতা।।
    ছেলের মুখের অন্ন কেড়ে খাওয়ালি মা যাদের ডেকে
    তারাই দিল তোর ললাটে চির-দাসীর তিলক এঁকে,
    দেখে শুনে হয় মা মনে, নেইক বিচার, নেই বিধাতা।।
    
  • জাগো দুস্তর পথের নব যাত্রী

    বাণী

    জাগো	দুস্তর পথের নব যাত্রী
    		জাগো জাগো!
    ঐ	পোহাল তিমির রাত্রি।।
    	দ্রীম দ্রীম দ্রীম রণ-ডঙ্কা
    	শোন বোলে নাহি শঙ্কা!
    	আমাদের সঙ্গে নাচে রণ-রঙ্গে
    	দনুজ-দলনী বরাভয়-দাত্রী।।
    	অসম্ভবের পথে আমাদের অভিযান
    	যুগে যুগে করি মোরা মানুষেরে মহীয়ান।
    	আমরা সৃজিয়া যাই নতুন যুগভাই
    	মোরা নবতম ভারত-বিধাত্রী।।
    	সাগরের শঙ্খ ঘন ঘন বাজে,
    	রণ-অঙ্গনে চল কুচকাওয়াজে।
    	বজ্রের আলোকে মৃত্যুর মুখে
    	দাঁড়াব নির্ভীক উগ্র সুখে
    	ভারত-রক্ষী মোরা নব শাস্ত্রী।।
    

  • ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান

    বাণী

    ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান, ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে।
    জাগো জাগো তন্দ্রা-অলস রে, সাজো সাজো রণ-সাজে।।
    দিকে দিকে ওঠে গান, অভিযান অভিযান!
    আগুয়ান আগুয়ান হও ওরে আগুয়ান
    ফুটায়ে মরুতে ফুল-ফসল।
    জড়ের মতন বেঁচে কি ফল? কে র’বি প’ড়ে লাজে।।
    বহে স্রোত জীবন-নদীর, চল চঞ্চল অধীর,
    তাহে ভাসিবি কে আয়, দূর সাগর ডেকে যায়।
    হ’বি মৃত্যু-পাথার পার, সেথা অনন্ত প্রাণ বিরাজে।।
    	পাঁওদল্‌ রণে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
    	পাঁওদল আগে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
    মরুতে ফোটাতে পারে ওই পদতল প্রাণ-শতদল।
    	বিঘ্ন-বিপদে করি’ সহায়
    	না-জানা পথের যাত্রী আয়,
    স্থান দিতে হবে আজি সবায়, বিশ্ব-সভা-মাঝে।।
    
  • তোরা সব জয়ধ্বনি কর

    বাণী

    	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
    	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
    ঐনূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
    	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
    	আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,
    	সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
    	মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে
    	বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!
    				ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!
    				তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
    	দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,
    	দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
    		বিন্দু তাহার নয়ন –জলে
    		সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
    			কপোল–তলে!
    	বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –
    			হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”
    			তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
    মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
    জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে।
    		এবার মহা–নিশার শেষে
    		আসবে ঊষা অরুণ হেসে
    			করুণ্ বেশে!
    দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!
    			আলো তার ভরবে এবার ঘর!
    			তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
    
  • ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে

    বাণী

    ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে
    ভুলে আছিস দেশ জননী কেমন ক’রে॥
    ব্যথিত বুকে মাগো তোমার মন্দির গড়ি
    করি পূজা আরতি মাগো যুগ যুগ ধরি’
    ধূপ পুড়িয়া মাগো চন্দন শুকায়ে যায়
    এসো মা এসো পুন রানীর মুকুট প’রে॥
    দুঃখের পসরা মা আর যে বহিতে নারি
    কাঁদিয়া কাঁদিয়া শুকায়েছে আঁখি-বারি
    এ গ্লানি লাজ মাগো সহিতে নাহি পারি
    বিশ্ব বন্দিতা এসো দুখ-নিশি-ভোরে॥
    অতীত মহিমা ল’য়ে এসো মহিমাময়ী
    হীনবল সন্তানে কর মা ভুবনজয়ী
    দুখ তপস্যা মা কবে তব হবে শেষ
    আয় মা নব আশা রবির প্রদীপ ধ’রে॥
    
  • দুর্গম গিরি কান্তার মরু

    বাণী

    দুর্গম গিরি, কান্তার–মরু, দুস্তর পারাবার হে!
    লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।
    দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ —
    ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত।
    কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
    এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।
    তিমির রাত্রি, মাতৃ–মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
    যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
    ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
    ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।
    অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
    কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ–মুক্তি–পণ।
    ’হিন্দু না ওরা মুসলিম’– ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
    কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।।
    গিরি–সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ —
    পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
    কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
    করে হানাহানি, তবু চল টানি’– নিয়েছ যে মহাভার।।
    ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান —
    আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান!
    আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
    দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।।
    

  • নমঃ নমঃ নমো বাঙলাদেশ মম

    বাণী

    নমঃ নমঃ নমো		বাঙলাদেশ মম
    চির মনোরম		চির মধুর
    বুকে নিরবধি		বহে শত নদী
    চরণে জলধির		বাজে নূপুর।।
    গ্রীষ্মে নাচে বামা		কালবোশেখি ঝড়ে
    সহসা বরষাতে		কাঁদিয়া ভেঙ্গে পড়ে
    শরতে হেসে চলে		শেফালিকা-তলে
    গাহিয়া আগমনী		গীতি বিধুর।।
    হরিত অঞ্চল		হেমন্তে দুলায়ে
    ফেরে সে মাঠে মাঠে		শিশির ভেজা পায়ে
    শীতের অলস বেলা		পাতা ঝরারি খেলা
    ফাগুনে পরে সাজ		ফুল-বধূর।।
    এই দেশের মাটি		জল ও ফুলে ফলে
    যে রস যে সুধা		নাহি ভূমণ্ডলে
    এই মায়েরি বুকে		হেসে খেলে সুখে
    ঘুমাবো এই বুকে		স্বপ্নাতুর।।
    
  • বল্ নাহি ভয় নাহি ভয়

    বাণী

    বল্‌	নাহি ভয় নাহি ভয়!
    বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!
    তুই	নির্ভর কর্‌ আপনার ‘পর আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর্‌
    ওরে	যে যায় যাক্ সে, তুই শুধু বল্ ‘আমার হয়নি লয়’!
    বল্‌	‘আমি আছি’, আমি পুরুষোত্তম, আমি চির-দুর্জয়!
    বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
    যে	গেল সে নিজেরে নিঃশেষ করি’ তোদের পাত্র দিয়ে গেল ভরি’!
    ঐ	বন্ধ মৃত্যু পারেনি ক’ তাঁরে পারেনি করিতে লয়!
    তাই	আমাদের মাঝে নিজেরে বিলায়ে সে আজি শান্তিময়
    বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
    ওরে	রুদ্র তখনি ক্ষুদ্রেরে গ্রাসে আগেই যবে সে ম’রে থাকে ত্রাসে
    ওরে	আপনার মাঝে বিধাতা জাগিলে বিশ্বে সে নির্ভয়
    এই	ক্ষুদ্র কারায় কভু কি ভয়াল ভৈরব বাঁধা রয়?
    বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
    ওরে	আত্ম-অবিশ্বাসী, ভয়ে-ভীত! কেন হেন ঘন অবসাদ চিত
    বল্‌	পর-বিশ্বাসে পর-মুখপানে চেয়ে কি স্বাধীন হয়?
    তুই	আত্মাকে চিন্, বল আমি আছি,’ ‘সত্য আমার জয়’!
    বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
    
  • ভাই হয়ে ভাই চিনবি আবার গাইব কি আর

    বাণী

    		ভাই হয়ে ভাই চিনবি আবার গাইব কি আর এমন গান!
    সেদিন	দুয়ার ভেঙে আসবে জোয়ার মরা গাঙে ডাকবে বান।।
    তোরা		স্বার্থ-পিশাচ যেমন কুকুর তেমনি মুগুর পাস রে মান।
    সেই		কলজে চুঁয়ে গলছে রক্ত দলছে পায়ে ডলছে কান।।
    ওরে		তোরা করিস লাঠালাঠি সিন্ধু-ডাকাত লুটছে ধান!
    তাই		গোবর-গাদা মাথায় তোদের কাঁঠাল ভেঙে খায় শেয়ান।।
    ছিলি		সিংহ ব্যাঘ্র, হিংসা-যুদ্ধে আজকে এমন ক্ষিন্ন প্রাণ।
    মুখের		গ্রাস ঐ গিলছে শেয়াল, তোমরা শুয়ে নিচ্ছ ঘ্রাণ।।
    তোরা		বাঁদর ডেকে মানলি সালিশ ভাইকে দিতে ফাটলো প্রাণ!
    সালিশ	নিজেই, ‘খা ডালা সব’, বোকা তোদের এই দেখান।।
    তোরা		নাক কেটে নিজ পরের যাত্রা ভঙ্গ করিস বুদ্ধিমান
    তোদের	কে যে ভালো কে যে মন্দ সব শিয়ালই এক সমান।।
    শুনি		আপন ভিটের কুকুর রাজা, তার চেয়েও হীন তোদের প্রাণ।
    তাই		তোদের দেশ এই হিন্দুস্থানে নাই তোদেরই বিন্দু স্থান।।
    আজ		সাধে ভারত-বিধাতা কি চোখ বেঁধে ঐ মুখ লুকান!
    তোরা		বিশ্বে যে তার রাখিসনে ঠাঁই কানা গরুর ভীন বাথান।।
    তোরা		করলি কেবল অহরহ নীচ কলহের পরল পান।
    আজ		বুঝলি নে হায় নাড়ি-ছেড়া মায়ের পেটের ভায়ের টান।।
    
  • ভারতের দুই নয়ন তারা হিন্দু-মুসলমান

    বাণী

    ভারতের দুই নয়ন তারা হিন্দু-মুসলমান
    দেশ জননীর সমান প্রিয় যুগল সন্তান।।
    তাইতো মায়ের কোল নিয়ে ভাই
    ভা’য়ে ভা’য়ে বাধে লড়াই
    এই কলহের হবেই হবে মধুর অবসান
    এক দেশেরই অন্নজলে এক দেহ এক প্রাণ।।
    আল্লা বলে কোরান তোমায়, এলা বলে বেদ,
    যেমন পানি, জলে রে ভাই শুধু নামের ভেদ।
    মোদের মাঝে দেয়াল তুলতে যে চায়
    জানবে মোদের শত্রু তাহায় (জানবে রে)
    বিবাদ ক’রে এনেছি হায় অনেক অকল্যাণ
    মিলনে আজ উঠুক জেগে নব-হিন্দুস্থান।
    		জেগে উঠুক হিন্দুস্থান।।
    
  • ভোল লাজ ভোল গ্লানি জননী

    বাণী

    ভোল লাজ ভোল গ্লানি জননী মুক্ত আলোকে জাগো।
    কবে সে ঘুমালি মরণ-ঘুমে মা আর তো জাগিলি না গো।।
    চরণে কাঁদে মা তেমনি জলধি
    বক্ষ আঁকড়ি কাঁদে নদ-নদী,
    ত্রিশ কোটি সন্তান নিরবধি — 
    			কাঁদে আর ডাকে মা গো।।
    যে তিতিক্ষা যে শিক্ষা ল’য়ে
    অতীতে ছিলি মা রাজরানী হয়ে,
    ল’য়ে সে-মহিমা পুন নির্ভয়ে — 
    			বিশ্ব-বুকে-দাঁড়া গো।।
    বিশ্বের এই খল কোলহলে
    তুই আয় কল্যাণ-দীপ জ্বেলে’,
    বিরোধের শেষে তুই শান্তি মা — 
    			মৃত্যু শেষে সুধা গো।।
    
  • শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা

    বাণী

    শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা, আয় রে আয়
    গিরি–দরি, বনে–মাঠে, প্রান্তরে রূপ ছাপিয়ে যায়।।
    ধানের ক্ষেতে, বনের ফাঁকে, দেখে যা মোর কালো মা–কে
    ধূলি–রাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিনী বীণ বাজায়।।
    ভীরু মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় পল্লীগ্রামে এক্‌লাটি
    বিজনমাঠে গ্রাম সে বসায় নিয়ে কাদা, খড়, মাটি
    কালো মেঘের ঝারি নিয়ে করুণা–বারি ছিটায়।।
    কাজলা–দীঘির পদ্মফুলে যায় দেখা তার পদ্ম–মুখ
    খেলে বেড়ায় ডাকাত–মেয়ে বনে লয়ে বাঘ–ভালুক
    ঝড়ের সাথে নৃত্যে মাতে বেদের সাথে সাপ নাচায়।।
    নদীর স্রোতে পাথর নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে তার
    সাঁঝের বারান্দাতে দাঁড়ায় টীপ প’রে সন্ধ্যা–তারার।
    ঊষার গাঙে ঘট ভরিতে যায় সে মেয়ে ভোর বেলায়।
    হরিত শস্যে লুটায় আঁচল ঝিল্লিতে নূপুর বাজে
    ভাটিয়ালি গায় ভাটির স্রোতে গায় বাউল মাঠের মাঝে (মা)।
    গঙ্গা–তীরে শ্মশান–ঘাটে কেঁদে কভু বুক ভাসায়।।
    

  • স্বদেশ আমার জানি না তোমার

    বাণী

    স্বদেশ আমার! জানি না তোমার শুধিব মা কবে ঋণ।
    দিনের পরে মা দিন চ’লে যায় এলো না সে শুভদিন।।
    		খাই দাই আর আরামে ঘুমাই
    		পাগলের যেন ব্যথা-বোধ নাই
    ললাট-লিখন বলিয়া এড়াই ভীরুতা, শক্তি ক্ষীণ।
    অভাগিনী তুমি, সন্তান তব সমান ভাগ্যহীন।।
    কত শতাব্দী করেছি মা পাপ মানুষেরে করি ঘৃণা
    জানি মা মুক্তি পাব না তাহার প্রায়শ্চিত্ত বিনা।
    		ক্ষুদ্র ম্লেচ্ছ কাঙাল ভাবিয়া
    		রেখেছি যাদেরে চরণে দাবিয়া
    তাদের চরণ-ধূলি মাখি যদি আসিবে সে শুভদিন
    নূতন আলোকে জাগিবে পুলকে জননী ব্যথা-মলিন।।
    

  • স্বপনে দেখেছি ভারত-জননী

    বাণী

    স্বপনে দেখেছি ভারত-জননী
    			তুই যেন রাজরাজেশ্বরী।
    নবীন ভারত! নবীন ভারত!
    			স্তব-গান ওঠে ভুবন ভরি’।।
    শস্যে ফসলে ডেকেছে মা বান
    মাঠে ও খামারে ধরে নাকো ধান
    মুখভরা হাসি, হসিভরা প্রাণ
    			নদী ভরা যেন পণ্যতরী।।
    পড়ুয়ারা পড়ে বকুল-ছায়ে
    সুস্থ সবল আদুল গায়ে
    মেয়েরা ফিরিছে মুক্ত বায়ে
    			কল-গীতে দিক মুখর করি’।
    ভুলিয়া ঈর্ষা ভোগ আসক্তি
    ধরার ক্লান্ত অসুর-শক্তি
    এসেছে শিখিতে প্রেম ও ভক্তি
    			নব-ভারতের চরণ ধরি’।।