বাণী

আমি	বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্ণি,
আমি	ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি	উন্মন মন উদাসীর,
আমি	বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি	বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি	অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি	অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
	চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি	গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি	চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি	চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি	যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি	উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি	পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি	আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি	মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি	তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি	সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি	অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
	মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
	ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
	মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি	শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি	পরশুরামের কঠোর কুঠার,
	নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
	মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত,
যবে	উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না —
	অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না —
	বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত।
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি	স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি	খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	চির-বিদ্রোহী বীর —
	বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
	শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
বল	বীর, বল বীর।

বাণী

	বর্ণচোরা  ঠাকুর এলো রসের নদীয়ায়
	তোরা দেখবি যদি আয়
তারে	কেউ বলে শ্রীমতি রাধা কেউ বলে সে শ্যামরায়।।
	কেউ বলে তার সোনার অঙ্গে রাধা-কৃষ্ণ খেলেন রঙ্গে;
ওগো	কেউ বলে তায় গৌর-হরি কেউ অবতার বলে তায়।।
তার	ভক্ত তারে ষড়ভুজ শ্রী নারায়ণ বলে,
কেউ	দেখেছে শ্রীবাসের ঘরে কেউ বা নীলাচলে।
	দুই হাতে তার ধনুর্বাণ ঠিক যেন শ্রীরাম,
	দুই হাতে তার মোহন বাঁশি যেন রাধা-শ্যাম,
	আর দু'হাতে দণ্ড ঝুলি নবীন সন্ন্যাসীরই প্রায়।।

বাণী

বরণ করেছি তারে সই বারণ ক’রো না
মরম সঁপেছি তারে নিতে মরণ যাতনা।।
	গোপনে সঁপেছি মন
	গোপনে করি যতন,
কাঁদে প্রাণ তারি তরে, মিলিতে বাসনা।।

বাণী

বুল্‌বুলি নীরব নার্গিস–বনে।
ঝরা বন–গোলাপের বিলাপ শোনে।।
শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে,
তরুণ ইরান–কবি কাঁদে নিরজনে।।
উদাসীন আকাশ থির হ’য়ে আছে,
জল–ভরা মেঘ ল’য়ে বুকের কাছে।
সাকির শরাবের পিয়ালার ‘পরে
সকরুণ অশ্রুর বেল ফুল ঝরে,
চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন–আননে।।

বাণী

	বরষা ঋতু এলো এলো বিজয়ীর সাজে
বাজে	গুরু গুরু আনন্দ ডম্বরু অম্বর মাঝে।।
বাঁকা	বিদ্যুৎ তরবারি ঘন ঘন চমকায়
	হানে তীর বৃষ্টি অবিরল ধারায়
শুনি’	রথ-চক্রের ধ্বনি অশনির রোলে
			সিন্ধু তরঙ্গে মঞ্জির বাজে।।
	ভীত বন-উপবন লুটায়ে লুটায়ে
	প্রণতি জানায় সেই বিজয়ীর পায়ে।
তার	অশান্ত গতিবেগ শুনি’ পুব হাওয়াতে
	চলে মেঘ-কুঞ্জর-সেনা তারি সাথে
	তূণীর কেতকীর জল-ধনু হাতে
	চঞ্চল দুরন্ত গগনে বিরাজে।।

বাণী

ব্রজপুর-চন্দ্র পরমসুন্দর, কিশোর লীলা-বিলাসী
	সখি গো, আমি তা’রই চিরদাসী।
অমৃত-রস-ঘন শ্যামল শোভন, প্রেম-বৃন্দাবন-বাসী॥
	চাঁচর চিকুরে শিখী-পাখা যার,
	গলে দোলে বন-কুসুম হার
ললাটে তিলক, কপোলে অলক অধরে মৃদু মৃদু হাসি॥
	মকর কুন্ডল দোলে শ্রবণে,
	বোলে মণি-মঞ্জরি রাতুল চরণে
চির অশান্ত, চপল কান্ত বিশ্ব সে রূপ-পিয়াসি॥
	বক্ষে শ্রীবৎস কৌস্তুভ শোভে,
	করে মুরলী ভোলে মধুর রবে,
পীত বসনধারী সেই মাধবে যেন যুগে যুগে ভালবাসি॥