বাণী

বল সখি বল ওরে স'রে যেতে বল।
মোর মুখে কেন চায় আঁখি-ছলছল,
	ওরে স'রে যেতে বল।।
পথে যেতে কাঁপে গা শরমে জড়ায় পা,
মনে হয় সারা পথ হয়েছে পিছল
	ওরে স'রে যেতে বল।।
জল নিতে গিয়ে সই ওর চোখে চেয়ে রই
সান-বাঁধা ঘাট যেন কাঁপে টলমল
	ওরে স'রে যেতে বল।।
প্রথম বিরহ মোর
চায় কি ও চিত-চোর;
চাঁদিনী চৈতী রাতে আনে সে বাদল
	স'রে যেতে বল
	ওরে স'রে যেতে বল।।

বাণী

বনকুসুম-তনু তুমি কি মধুমতী!
ঢল ঢল নয়নে রস-ঘন মিনতি।।
রুমুঝুমু ঘুমুরে ঘুমুঘুমু বিবশা
নিথর বসুমতী, নিশিমদ-অলসা,
মুরছিত চরণে শত মদন রতি।।
রস-ছলছল গো তব মধু কলসে
ঝরঝর ঝরনা অনুখন বরষে,
অরুণিত নয়না মধুর রসবতী।।

১. বধুরম মধুরম মধুর রসবতী।।

বাণী

বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ গাই তাঁরি গান পথ বেভুল।।
লায়লী প্রেমে মজনু পাগল আমি পাগল লা-ইলা’র,
প্রেমিক দরবেশ আমায় চেনে অরসিকে কয় বাতুল।।
হৃদয়ে মোর খুশির বাগান বুলবুলি তায় গায় সদাই,
ওরা খোদার রহম মাগে আমি খোদার ইশ্‌ক্‌ চাই।
আমার মনের মস্‌জিদে দেয় আজান হাজার মোয়াজ্জিন
প্রাণের ‘লওহে’ কোরান লেখা রুহ্‌ পড়ে তা রাত্রি দিন।
খাতুনে জিন্নত মা আমার হাসান হোসেন চোখের জেল,
ভয় করি না রোজ-কেয়ামত পুল সিরাতের কঠিন পুল।।

বাণী

ব্রজপুর-চন্দ্র পরমসুন্দর, কিশোর লীলা-বিলাসী
	সখি গো, আমি তা’রই চিরদাসী।
অমৃত-রস-ঘন শ্যামল শোভন, প্রেম-বৃন্দাবন-বাসী॥
	চাঁচর চিকুরে শিখী-পাখা যার,
	গলে দোলে বন-কুসুম হার
ললাটে তিলক, কপোলে অলক অধরে মৃদু মৃদু হাসি॥
	মকর কুন্ডল দোলে শ্রবণে,
	বোলে মণি-মঞ্জরি রাতুল চরণে
চির অশান্ত, চপল কান্ত বিশ্ব সে রূপ-পিয়াসি॥
	বক্ষে শ্রীবৎস কৌস্তুভ শোভে,
	করে মুরলী ভোলে মধুর রবে,
পীত বসনধারী সেই মাধবে যেন যুগে যুগে ভালবাসি॥

বাণী

বাদলা রাতে চাঁদ উঠেছে কৃষ্ণ মেঘের কোলে রে।
ব্রজ পুরে তমাল-ডালের ঝুলনাতে দোলে রে।।
	নীল চাঁদ আর সোনার চাঁদে
	বাঁধা বন-মালার ফাঁদে রে
এই চাঁদ হেসে আরেক চাঁদের অঙ্গে পড়ে ঢ’লে রে।।
যুগল শশী হেরি গোপী কহে, বাদলা রাতই ভালো রে,
গোকুল এলো ব্রজে নেমে ধরা হল আলো রে।
	দেব-দেবীরা চরণ-তলে
	বৃষ্টি হয়ে পড়ে গ’লে রে,
বেদ-গাথা সব নূপুর হয়ে রুনুঝুনু বোলে রে।।

বাণী

আমি	বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্ণি,
আমি	ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি	উন্মন মন উদাসীর,
আমি	বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি	বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি	অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি	অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
	চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি	গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি	চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি	চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি	যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি	উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি	পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি	আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি	মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি	তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি	সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি	অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
	মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
	ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
	মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি	শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি	পরশুরামের কঠোর কুঠার,
	নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
	মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত,
যবে	উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না —
	অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না —
	বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি	সেই দিন হব শান্ত।
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি	স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি	খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি	চির-বিদ্রোহী বীর —
	বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
	শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল	বীর -
	বল উন্নত মম শির!
বল	বীর, বল বীর।