বাণী

বনের তাপস কুমারী আমি গো, সখি মোর বনলতা।
নীরবে গোপনে দুইজনে কই আপন মনের কথা।।
যবে 	গিরিপথে ফিরি সিনান করিয়া,
	লতা টানে মোর আঁচল ধরিয়া,
হেসে বলি, ওরে ছেড়ে দে, আসিছে তোদের বন-দেবতা।।
ডাকি যদি তারে আদর করিয়া — ওরে বন বল্লরি,
আনন্দে তার ফোটা ফুলগুলি অঞ্চলে পড়ে ঝরি'।
	লুকায়ে যখন মোর দেবতায়
	আবরিয়া রাখে কুসুমে পাতায়,
চরণে আমার (ও সে) আসিয়া জড়ায় যবে হই ধ্যানরতা।।

বাণী

বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল
চাই না হেনা, আনো আমের মুকুল।।
গোলাপ বড় গরবী এনে দাও করবী
চাইতে যূথী আন টগর — কি ভুল।।
কি হবে কেয়া, দেয়া নাই গগনে;
আনো সন্ধ্যামালতী গোধূলি-লগনে।
গিরি-মল্লিকা কই’ চামেলি পেয়েছে সই
চাঁপা এনে দাও, নয় বাঁধব না চুল।।

বাণী

বুল্‌বুলি নীরব নার্গিস–বনে।
ঝরা বন–গোলাপের বিলাপ শোনে।।
শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে,
তরুণ ইরান–কবি কাঁদে নিরজনে।।
উদাসীন আকাশ থির হ’য়ে আছে,
জল–ভরা মেঘ ল’য়ে বুকের কাছে।
সাকির শরাবের পিয়ালার ‘পরে
সকরুণ অশ্রুর বেল ফুল ঝরে,
চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন–আননে।।

বাণী

বেদিয়া বেদিনী ছুটে আয়,আয়,আয়
ধাতিনা ধাতিনা তিনা ঢোলক মাদল বাজে
	বাঁশিতে পরান মাতায়।।
দলে দলে নেচে নেচে আয় চলে
আকাশের শামিয়ানা তলে
বর্শা তীর ধনুক ফেলে আয় আয় রে
	হাড়ের নূপুর প'রে পায়।।
বাঘ-ছাল প'রে আয় হৃদয়-বনের শিকারি
ঘাগরা প'রে প'রে পলার মালা আয় বেদের নারী
মহুয়ার মধু পিয়ে ধুতুরা ফুলের পিয়ালায়।।

বাণী

বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর
বহিছে তরলতর পুবালি পবন।
মেঘলা যামিনী, দামিনী চমকায়
কালো মেয়ের ভীরু প্রেমের মতন।।
আমি ভুলে গেছি, মেঘেরা ভোলেনি
সেই কালো চোখ, সেই বিনুনী-বেণী,
প্রিয়ার দূতী সম, স্বরণে আনে মম
এসেছিল একদিন এমন শুভ-লগন।।
আর কিছু ছিল কি, ছিল না ত’ স্মরণে,
শুধু জানি দুই জন ছিনু এই ভুবনে।
সহসা মোদের মাঝে ছুটে এলো পারাপার
কে কোথায় হারাইনু, কূল নাহি পেনু আর,
মনে পড়ে বরষায়, তার সেই অসহায়
বিদায় বেলার আঁখি অশ্রু-সঘন।।

বাণী

বন-বিহারিণী	চঞ্চল হরিণী
চিনি আঁখিতে,	চিনি কানন
			নটিনী রে।।
ছুটে চলে যেন	বাঁধ ভাঙ্গা
			তটিনী রে।।
নেচে নেচে চলে	ঝর্ণার
			তীরে তীরে
ছায়াবীথি-তলে	কভু ধীরে চলে,
চকিতে পালায়	ছুটি, ছায়া হেরি,
			গিরি-শিরে।।

নাটকঃ‘সাবিত্রী’