বাণী

অন্তরে তুমি আছ চিরদিন ওগো অন্তর্যামী
বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি তা-ই পাই না তোমারে আমি।।
প্রাণের মতন, আত্মার সম
আমাতে আছ হে অন্তরতম
মন্দির রচি’ বিগ্রহ পূজি দেখে হাস তুমি স্বামী।।
সমীরণ সম, আলোর মতন বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
গন্ধ-কুসুমে সৌরভ সম প্রাণে-প্রাণে আছ জড়ায়ে।
তুমি বহুরূপী তুমি রূপহীন —
তব লীলা হেরি অন্তবিহিন।
তব লুকোচুরি খেলা সহচরী আমি যে দিবসযামী।।

বাণী

অধীর অম্বরে গুরু গরজন মৃদঙ বাজে।
রুমু রুমু ঝুম্ মঞ্জীর-মালা চরণে আজ উতলা যে॥
এলোচুলে দু’লে দু’লে বন-পথে চল আলি,
মরা গাঙে বালুচরে কাঁদে যথা বন্-মরালী।
		উগারি’ গাগরি ঝারি
		দে লো দে করুণা ডারি
ঘুঙট উতারি’ বারি ছিটা লো গুমোট সাঁঝে॥
তালীবন হানে তালি, ময়ুরী ইশারা হানে,
আসন পেতেছে ধরা মাঠে মাঠে চারা-ধানে।
মুকুলে ঝরিয়া পড়ি’ আকুতি জানায় যূথী
ডাকিছে বিরস শাখে তাপিতা চন্দনা-তুতি।
		কাজল-আঁখি রসিলি
		চাহে খুলি ঝিলিমিলি,
চল, লো চল সেহেলি, নিয়ে মেঘ-নটরাজে॥

নাটকঃ ‘সেতুবন্ধ’

বাণী

অনেক মানিক আছে শ্যামা তোর কালোরূপ-সাগরজলে
আমার বুকের মানিক কেড়ে রাখ্‌লি কোথায় দে মা ব’লে।।
কত লতার কোল ক’রে খালি, ফুলের অর্ঘ্য নিস্‌ মা কালি
(মোর) সারা বনের একটি কুসুম আছে কি ঐ চরণ-তলে।।
একখানি মুখ খুঁজি মাগো তোর কণ্ঠের মুন্ডমালায়
একটিবার মা সে মুখ দেখা, আবার কেড়ে পরিস্‌ গলায়।
			(না হয়) রাখিস্‌ পূজার থালায়।
অনন্ত তোর রূপের মাঝে, সে কোন্‌ রূপে মা কোথায় রাজে?
মোর নয়ন-তারা তারা হয়ে দোলে কি তোর বুকের কোলে।।

১. ফুলের অর্ঘ্য-এর পরিবর্তে কবি ‘পূজাঞ্জলি’ শব্দটিও ব্যবহার করেছেন।

বাণী

অ-মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খাঁদা নাকে নাচ্‌ছে ন্যাদা-নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
ওঁর নাক্‌টাকে কে করল খ্যাঁদা র‍্যাঁদা বুলিয়ে?
চাম্‌চিকে-ছা ব’সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে!
বুড়ো গুরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছেঁদা দিয়ে টুকিকে দেয় ‌‘টু’!
ছোড়্‌দি’ বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক্‌! থুঃ
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দাদু বুঝি চীনাম্যান মা, নাম বুঝি চ্যাংচু?
তাই বুঝি ওঁর মুখ্‌টা অমন চ্যাপ্টা সুধাংশু!
জাপান দেশের নোটিশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়-নাক,
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপ্টা নাকেই বাজ্‌তো সাতটা শাঁখ,
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাব্‌ড়া করেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চ’লতে বেঁজির ছা,
দাড়ির জালে প’ড়ে যাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি-বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙতে ‘আল্‌মানক্‌’
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক ক’রেছে ‘ট্যান’!
অ-মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!
বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন-হাসিকে।
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু-দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙাডেং-ড্যাং!

‘খাঁদু-দাদু’

[সঞ্চিতা, কাজী নজরুল ইসলাম, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ২০০৫]

বাণী

অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে;
তাই ত তোমার বহ্নি-রাগেও বেদন-বেহাগ বাজে॥
		দহন-বনের গহন-চারী —  
		হায় ঋষি — কোন্ বংশীধারী দেশি
নিঙ্‌ড়ে আগুন আনলে বারি, অগ্নি-মরুর মাঝে।
সর্বনাশা কোন্ বাঁশি সে বুঝতে পারি না যে॥
দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হানছিলে বৈশাখে,
হঠাৎ সে কার শুন্‌লে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।
		বজ্রে তোমার বাজল বাঁশি,
		বহ্নি হল কান্না-হাসি,
সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী — মন সরে না কাজে।
তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্তশিখা রাজে॥

বাণী

অন্ধকারে এসে তুমি অন্ধকারে গেছ চ’লে।
তোমার পায়ের রেখা জাগে শূন্য গৃহের অঙ্গন-তলে।।
		কেন আমায় জাগালে না
		আঘাতে ঘুম ভাঙালে না,
দ’লে কেন গেলে না গো যাবার বেলা চরণ-তলে।।
কৃষ্ণা তিথির চাঁদের মত এসেছিলে গভীর রাতে,
আলোর পরশ বুলিয়ে দিলে ঘুমন্ত মোর নয়ন-পাতে;
		তাই রজনীগন্ধা সুখে
		চেয়ে আছে উর্ধ্ব মুখে,
ফুলগুলিরে জাগিয়ে গেলে নিঠুর আমায় গেলে ছ’লে।।