ভীমপলশ্রী

  • অনাদরে স্বামী পড়ে আছি আমি

    বাণী

    অনাদরে স্বামী প’ড়ে আছি আমি তব কোলে তুলে নাও
    নিয়ে ধরণীর ধূলি আছি আমি ভুলি’ চরণের ধূলি দাও॥
    	বিভবে বিলাসে সংসার কাজে
    	অশান্ত প্রাণ কাঁদে বন্ধন মাঝে
    বৃথা দ্বারে দ্বারে চেয়েছি সবারে এবার তুমি মোরে চাও॥
    	যাহা কিছু প্রিয় জীবনের মম
    	হরিয়া লহ তুমি, লও প্রিয়তম।
    	সূর্যের পানে সূর্যমুখী ফুল
    	যেমন চাহিয়া রয় বিরহ-ব্যাকুল
    তেমনি প্রভু আমার এ মন তোমার পানে ফিরাও॥
    
  • আমার মনের বেদনা

    বাণী

    আমার মনের বেদনা
    বুঝিলে না, আমার মনের বেদনা ॥
    চাহিনি মালার ফুল
    বুঝিলে না আপনার ভূল
    মালা দিলে মন দিলে না ॥
    
  • আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী

    বাণী

    আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
    চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি (আহা)।।
    দুলে আলোছায়া বন-দুকূল
    ওড়ে প্রজাপতি কলকা ফুল
    কর্ণে অতসী স্বর্ণ-দুল
    	আলোক-লতার সাতনরি।।
    সোনার গোধূলি নামিয়া আয়
    আমার রূপালি ফুল-শোভায়
    আমার সজল আঁখি-পাতায়
    	আয় রামধনু রঙ ধরি'।
    কবি, তোর ফুলমালী কেমন
    ফাগুনে শুষ্ক পুষ্প-বন
    বরিবি বঁধুরে এলে চ্যমন (আহা)
    	রিক্ত হাতে কি ফুল ভরি'।।
    
  • কত আর এ মন্দির দ্বার হে প্রিয় রাখিব খুলি

    বাণী

    	কত আর এ মন্দির দ্বার, হে প্রিয়, রাখিব খুলি'
    	বয়ে যায় যে লগ্নের ক্ষণ, জীবনে ঘনায় গোধূলি।।
    	নিয়ে যাও বিদায়-আরতি, হ'ল ম্লান আঁখির জ্যোতি;
    	ঝরে যায় শুষ্ক স্মৃতির মালিকা-কুসুমগুলি।।
    	কত চন্দন ক্ষয় হ'ল হায়, কত ধূপ পুড়িল বৃথায়;
    	নিরাশায় সে পুষ্প কত ও পায়ে হইল ধূলি।।
    ও	বেদী-তলে কত প্রাণ — হে পাষাণ নিলে বলিদান;
    	তবু হায় দিলে না দেখা — দেবতা, রহিলে ভুলি'।।
    
  • কত কথা ছিল বলিবার

    বাণী

    কত কথা ছিল বলিবার, বলা হ’ল না।
    বুকে পাষাণ সম রহিল তারি বেদনা।।
    	মনে রহিল মনের আশা
    	মিটিল না প্রাণের পিপাসা,
    বুকে শুকালো বুকের ভাষা — মুখে এলো না।।
    	এত চোখের জল, এত গান
    	এত আদর সোহাগ অভিমান,
    কখন সে হ’ল অবসান — বোঝা গেল না।।
    	ঝরিল কুসুম যদি হায়!
    কেন স্মৃতির কাঁটাও নাহি যায়,
    বুঝিল না কেহ কাহারো মন বিধির ছলনা।।
    
  • কত যুগ যেন দেখিনি তোমারে

    বাণী

    কত যুগ যেন দেখিনি তোমারে দেখি নাই কতদিন।
    তুমি যে জীবন, তোমারে না হেরি’, হয়েছিনু প্রাণহীন।।
    তুমি যেন বায়ু, বায়ু যবে নাহি বয়
    আমি ঢুলে পড়ি আয়ু মোর নাহি রয়,
    তুমি যেন জল, বাঁচিতে পারিনা জল বিনা আমি মীন।।
    তুমি জানো নাগো তব আশ্রয় বিনা আমি কত অসহায়,
    তুমি না ধরিলে আমার এ তনু বাতাসে মিশায়ে যায়।
    তাই মোর দেহ পাগলের প্রায়
    তোমার অঙ্গ জড়াইতে চায়,
    তাই উপবাসী তনু মোর হের দিনে দিনে হয় ক্ষীণ।।
    
  • কানন গিরি সিন্ধু পার ফিরনু পথিক দেশ-বিদেশ

    বাণী

    কানন গিরি সিন্ধু–পার ফির্‌নু পথিক দেশ–বিদেশ।
    ভ্রমিনু কতই রূপে এই সৃজন ভুবন অশেষ।।
    তীর্থ–পথিক এই পথের ফিরিয়া এলো না কেউ,
    আজ এ পথে যাত্রা যার, কা’ল নাহি তার চিহ্ন লেশ।।
    রাত্রি দিবার রঙমহল চিত্রিত এ চন্দ্রতাপ
    দু’দিনের এ পান্থবাস এই ভুবন – এ সুখ–আবেশ।।
    ভোগ–বিলাসী ‘জমশেদের জল্‌সা ছিল এই সে দেশ,
    আজ শ্মশান, ছিল যেথায় “বাহ্‌রামের” আরাম আয়েশ।।
    
  • গগনে প্রলয় মেঘের মেলা

    বাণী

    গগনে প্রলয় মেঘের মেলা জীবন-ভেলা দোলে টলমল
    নীর অপার ভব পারাবার তীর না হেরে পরান বিকল
    	তীর না হেরে নয়নে পরান বিকল।।
    	দীন দয়াল ভীত দীন জনে
    	মাগে শরণ তব অভয় চরণে
    দুস্তর দুর্গম দুঃখ জলধি তরিতে চরণ-তরী ভরসা কেবল।।
    
  • দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার

    বাণী

    দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার ঘনশ্যাম তোমারি নয়নে।
    আমি হেরি যে নিখিল বিশ্বরূপ-সম্ভার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি পলকে ধর নাথ সংহার-বেশ
    		হও পলকে করুণা-নিধান পরমেশ।
    নাথ ভরা যেন বিষ অমৃতের ভান্ডার তোমার দুই নয়নে॥
    		ওগো মহা-শিশু, তব খেলা-ঘরে
    		একি বিরাট সৃষ্টি বিহার করে,
    সংসার চক্ষে তুমিই হে নাথ, সংসার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি নিমেষে রচি নব বিশ্বছবি
    		ফেল নিমেষে মুছিয়া হে মহাকবি,
    করে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড ভুবন-সঞ্চার তোমারি নয়নে॥
    		তুমি ব্যাপক ব্রহ্ম চরাচরে
    		জড় জীবজন্তু নারী-নরে,
    কর কমল-লোচন, তোমার রূপ বিস্তার হে আমারি নয়নে॥
    
  • নাহি কেহ আমার ব্যথার সাথী

    বাণী

    নাহি কেহ আমার ব্যথার সাথী,
    জ্বলি পিল্‌সুজে একা মোমের বাতি।
    পতঙ্গ সুখি, পুড়ে এক নিমেষে –
    পুড়িয়া মরি আমি সারা রাতি।।
    আসে যে সুখের দিনে বন্ধু রূপে,
    অসময়ে যায় স’রে চুপে চুপে।
    	উড়ে গেছে অলি
    	ফুল ঝরেছে বলি’ – 
    কাঁদি একাকী কণ্টক-শয্যা পাতি’।।
    কেহ কারো নয় তবু প্রাণ কাঁদে
    চকোর চাহে যেন সুদূর চাঁদে,
    শুধু বেদনা পাই প্রেম-মোহে মাতি’।।
    
  • পাষাণের ভাঙালে ঘুম

    বাণী

    	পাষাণের ভাঙালে ঘুম			কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়,
    	গলিয়া সুরের তুষার			গীতি –নির্ঝর ব’য়ে যায়।।
    	উদাসী বিবাগী মন			যাচে আজ বাহুর বাঁধন,
    	কত জনমের কাঁদন			ও –পায়ে লুটাতে চায়।।
    ওগো	তোমার চরণ ছন্দে মোর		মুঞ্জরিল গানের মুকুল
    	তোমার বেণীর বন্ধে গো		মরিতে চায় সুরের বকুল
    	চম্‌কে ওঠে মোর গগন		ঐ হরিণ–চোখের চাওয়ায়।।
    
  • পুরবের তরুণ অরুণ

    বাণী

    পুরবের তরুণ অরুণ পুরবে আস্‌লো ফিরে।
    কাঁদায়ে মহাশ্বেতায় হিমানীর শৈল-শিরে।।
    	কুহেলির পর্দা ডারি’
    	ঘুমাত রূপ-কুমারী,
    জাগালে স্বপনচারী — তাহারে নয়ন-নীরে।।
    তোমার ঐ তরুণ গলার শুনি গান সিন্ধু-পারে,
    দুলিছ মধ্যমণি সুরমার কণ্ঠ-হারে।
    	ধেয়ানী দিলে ধরা
    	হ’ল সুর স্বয়ম্বরা,
    এলে কি পাগল-ঝোরা — পাষাণের বক্ষ চিরে’।
    
  • প্রিয় তব গলে দোলে যে হার কুড়িয়ে পাওয়া

    বাণী

    প্রিয়	তব গলে দোলে যে হার কুড়িয়ে পাওয়া
    সে যে	হার নহে, হৃদয় মোর হারিয়ে যাওয়া।।
    	তোমারি মতন যেন কাহার সনে
    	সেদিন পথে চোখাচোখি হল গোপনে
    মন	চকিতে হরিল যে সেই চকিত চাওয়া।।
    ছিল	চৈতালি সাঁঝ, তাহে পথ নিরালা
    ছিনু	একেলা আমি, চলে একেলা বালা
    বহে	ঝিরিঝিরি ধীরি-ধীরি চিতী হাওয়া
    	চাহিল সে মুখে মোর ঘোমটা তুলে
    তার	নয়নে ও ঘটে জল উঠিল দুলে
    	চেয়ে দেখি মোর আঁখি সলিল ছাওয়া।।
    
  • ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল আমার মনের আঙিনায়

    বাণী

    ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল আমার মনের আঙিনায়
    ফুল-ফোটাতে কে এলে ফুল ঝরানো সাঁঝ-বেলায়।।
    	আজ কি মোর দিনের শেষে
    	উঠলো চাঁদ মধুর হেসে'
    কৃষ্ণা তিথির তৃষ্ণা মোর মিটলো ওই জোছনায়।।
    আজ যে আঁখি অশ্রুহীন কি দিয়ে ধোয়াই চরণ'
    সুন্দর বরের বেশে এলে কি আমার মরণ'!
    	দেখ বসন্তের পাখি
    	কোয়েলা গেছে ডাকি
    আনন্দের দূত তুমি ডাকিয়া ফুল ফোটায়।।
    

  • যায় ঝিলমিল্ ঝিলমিল্ ঢেউ তুলে

    বাণী

    যায়	ঝিল্‌মিল্ ঝিল্‌মিল্ ঢেউ তুলে দেহের কূলে
    	কে চঞ্চলা দিগঞ্চলা মেঘ-ঘন-কুন্তলা।
    	দেয় দোলা পুব-সমীরণে বনে বনে দেয় দোলা।।
    	চলে নাগরি দোলে ঘাগরি
    	কাঁখে বরষা-জলের গাগরি
    	বাজে নূপুর-সুর-লহরি
    	রিমি ঝিম্‌, রিম ঝিম্, রিম ঝিম্‌ চল-চপলা।।
    	দেয়ারই তালে কেয়া কদম নাচে
    	ময়ূর-ময়ূরী নাচে তমাল-গাছে।
    	এলায়ে মেঘ-বেণী কাল-ফণি
    	আসিল কি দেব-কুমারী নন্দন-পথ-ভোলা।।
    

  • যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন উঠিছে দুলে

    বাণী

    যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন উঠিছে দুলে'।
    তারি ঢেউ এ সঙ্গীতে মোর মুরছায় সুরের কূলে।।
    	ভালোবাসা তোমরা যারে
    	দু'দিনেই ভোলো গো তারে (হায়)
    শরতের সজল মেঘ-প্রায় কেঁদে যাও নিমেষে ভুলে।।
    	কঠিন পুরুষেরি মন
    	গলিয়া বহে গো যখন
    বহে সে নদীর মতন চিরদিন পাষাণ-মূলে।।
    আলোর লাগি' জাগে ফুল, নদী ধায় সাগরে যেমন,
    চকোর চায় চাঁদ, চাতক মেঘ, যারে চায় তায় চাহে এই রে মন।
    নিয়ে যায় সুদূর অমরায় পূজে তায় বাণী-দেউলে।।
    

  • হৃদয় কেন চাহে হৃদয় আমি জানি মন জানে

    বাণী

    হৃদয় কেন চাহে হৃদয়, আমি জানি মন জানে
    জানে নদী কেন যে সে, যায় ছুটে সাগর পানে।।
    কেহ বারি কেন চাহে, জানে চাতক, জানে মেঘ,
    জানে চকোর সুদূর নভে, চাঁদ কেন তারে টানে।।
    কুসুম কেন চাহে শিশির, জানে শিশির, জানে ফুল,
    জানে বুলবুল আছে কাঁটা, তবু যায় গুল-বাগানে।
    আঁখি চাহে আঁখি-বারি , মন চাহে মনোব্যথা
    প্রাণ আছে যার সেই জানে, কেন চাহে প্রাণে প্রাণে।।
    
  • হে মোর স্বামী অন্তর্যামী

    বাণী

    হে মোর স্বামী, অন্তর্যামী, লহ সকলি আমার।
    লহ প্রীতি-প্রেম-পূজা লহ পায়ে গলার হার।।
    	হে প্রিয়তম, সকলি লহ;
    	মান-অভিমান ব্যথা-বিরহ।
    দুঃখের দাহ, সুখের মোহ লহ হে অশ্রু-ধার।।
    	যাহা কিছু আপন, দিতে যা বাকি
    	যাহা কিছু গোপন, লুকায়ে রাখি
    যাহা কিছু প্রিয় অঞ্চলে ঢাকি; লহ হে বঁধূ এবার।।
    	তোমায় চাওয়ার পাওয়ার আশা,
    	তোমায় না-পাওয়ার ব্যথা-নিরাশা,
    তোমারে দিলাম মোর ভালোবাসা বিফলতা হাহাকার।।