ঝুমুর

  • আর্শিতে তোর নিজের রূপই দেখিস

    বাণী

    আর্শিতে তোর নিজের রূপই দেখিস চেয়ে' চেয়ে'
    আমায় চেয়ে দেখিস না তাই রূপ-গরবী মেয়ে।
    		ওলো রূপ-গরবী মেয়ে।।
    	নাইতে গিয়ে নদীর জলে
    	দেরি করিস নানান ছলে
    ওরে	ভাবিস তোরে দেখতে কখন আসবে জোয়ার ধেয়ে।।
    	চাদেঁর সাথে মিলিয়ে দেখিস চাঁদপানা মুখ তোর
    	ভাবিস তুই-ই আসল শশী চাঁদ যেন চকোর
    		ওলো চাঁদ যেন চকোর।
    	বনের পথে আনমনে
    	দাঁড়িয়ে থাকিস অকারণে
    ওরে	ভাবিস তোরে দেখেই বুঝি বিহগ ওঠে গেয়ে'।
    

  • এসো ঠাকুর মহুয়া বনে ছেড়ে বৃন্দাবন

    বাণী

    	এসো ঠাকুর মহুয়া বনে ছেড়ে বৃন্দাবন,
    	ধেনু দেব বেণু দেব মালা চন্দন॥
    	কেঁদে কেঁদে কয়লা খাদে যমুনা বহাব;
    	পলাশ বনে জাগরণে নিশি পোহাব
    	রাধা হয়ে বাঁধা দেব আমর প্রাণ মন॥
    মোর	নটকান রঙ শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে,
    	পীত ধড়া পরাব, নীল অঙ্গ ঘিরে।
    	পিয়াল ডালে দোলনা বেঁধে দুলিব দুজন॥
    	ভাসুর-শ্বশুর দ্যাখে যদি করব নাকো লাজ
    	বলব আমার শ্যামের বাঁশি বাজ রে আবার বাজ
    শ্যাম	তোমার লাগি জাতি কুল দিব বিসর্জন।।
    
  • ও-তুই যাস্‌নে রাই-কিশোরী কদমতলাতে

    বাণী

    ও-তুই যাস্‌নে রাই-কিশোরী কদমতলাতে,
    সেথা ধরবে বসন-চোরা ভূতে, পারবিনে আর পালাতে॥
    	সে দেখলে কি আর রক্ষে আছে,
    	ও-তোর বসন গিয়ে উঠ্‌বে গাছে,
    ওলো গোবর্ধন-গিরিধারী সে — পারবিনে তায় টলাতে॥
    	দেখতে পেলে ব্রজবালা,
    	ঘট কেড়ে সে ঘটায় জ্বালা,
    (ওলো) নিজেই গ’লে জল হ’বি তুই পারবিনে তায় গলাতে॥
    	ঠেলে ফেলে অগাধ-নীরে
    	সে হাসে লো দাঁড়িয়ে তীরে,
    শেষে ভাসিয়ে নিয়ে প্রেম-সাগরে ওলো দোলায় নাগরদোলাতে॥
    
  • ওরে গো-রাখা রাখাল তুই কোথা হতে এলিরে

    বাণী

    ওরে গো-রাখা রাখাল তুই কোথা হতে এলিরে
    	আষাঢ় মাসের মেঘের বরণ কেমন ক'রে পেলি রে।।
    	কে দিয়েছে আলতা মেখে পা'য়
    	চলতে গেলে নূপুর বেজে যায় রে; নূপুর  বেজে' যায়।
    তোর	আদুল গায়ে বাঁধা কেন গাঁদা রঙের চেলি রে।।
    তোর	ঢলঢলে দুই চোখে যেন নীল শালুকের কুঁড়ি রে
    তোরে	দেখে কেন হাসে যত গোপ-কিশোরী রে।
    তোর	গলার মালার গন্ধে আমার মন
    	গুনগুনিয়ে বেড়ায় রে মৌমাছি যেমন রে;
    তুই	ঘর-সংসার ভুলালি কোন মায়াতে ফেলি' রে।।
    

  • ওলো ননদিনী বল্

    বাণী

    ওলো ননদিনী বল্
    কপট নিপট কালা, নিঠুর খল্॥
    তার নাই ভয় নাই লজ্জা শরম
    লইয়া যুবতীর ধরম গো
    খেলে সে নিঠুর খেলা, চতুর চপল্॥
    না শুনে লো তোদের গালি
    মাখলাম কুলে কালার কালি গো
    সে মুখে সরল বনমালী, অন্তরে গরল॥
    তার শত জনে মন বাঁধা, রাতে চন্দ্রা দিনে রাধা
    (তারে) কঠিন কথা শুনাইব চল্‌লো গোঠে চল্॥
    কৃষ্ণ ব’লে অবিরত দে লো গালি পারিস যত
    ননদী কয় বুঝেছি বউ (কৃষ্ণ) নাম শোনারই ছল
    ও বউ কৃষ্ণ নাম তোর ভাল লাগে
    তাই কৃষ্ণ (ও তোর) নাম শোনারই ছল॥
    
  • কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা

    বাণী

    কালা		এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা।
    আমি		দেখ্‌ছি কত দেখ্‌ব কত তোমার ছলাকলা;
    আমি		নিতুই নিতুই সবই কত, (কালা) তিন সতিনের জ্বালা॥
    আমি		জল নিতে যাই যমুনাতে তুমি বাজাও বাঁশি হে,
    		মনের ভুলে কলস ফেলে তোমার কাছে আসি হে,
    শ্যাম		দিন-দুপুরে গোকুলপুরে (আমার) দায় হল পথ চলা॥
    আমার	চারদিকেতে ননদ-সতীন দু’কূল রাখা ভার,
    		আমি সইব কত আর বাঁকা শ্যাম।
    ওরা		বুঝছে সবই নিত্যি-নতুন, (নিতি) মিথ্যে কথা বলা॥
    
  • কালো জল ঢালিতে সই

    বাণী

    		কালো জল ঢালিতে সই চিকন কালারে পড়ে মনে।
    		কালো মেঘ দেখে শাওনে সই পড়্ল মনে কালো বরণে॥
    			কালো জলে দীঘির বুকে
    			কালায় দেখি নীল-শালুকে
    (আমি)	চম্‌কে উঠি, ডাকে যখন কালো কোকিল বনে॥
    		কল্‌মিলতার চিকন পাতায় দেখি আমার শ্যামে লো
    		পিয়া ভেবে দাঁড়াই গিয়ে পিয়াল গাছের বামে লো।
    			উড়ে গেলে দোয়েল পাখি
    			ভাবি কালার কালো আঁখি
    		আমি নীল শাড়ি পরিতে নারি কালারি কারণে লো কালারি কারণে॥
    
  • কী অনল জ্বলে লো সই

    বাণী

    	কী অনল জ্বলে লো সই কী অনল জ্বলে।
    	নয়ন ভরল জলে লো সই আমার হিয়ার তলে।।
    (আমি)	উদাসী পাগল হ’য়ে না ত্যাজিলাম কায়া
    এই	চাঁদের মুখে পড়ল আমার রাহুল প্রেমের ছায়া,
    মোর	বুকের মাঝে সাত সিন্ধুর একি ঢেউ উথলে।।
    

    নাটক : ‘মধুমালা’ (ঘুমপরীর গান)

  • কুনুর নদীর ধারে ঝুনুর ঝুনুর বাজে

    বাণী

    পুরুষ	:	কুনুর নদীর ধারে ঝুনুর ঝুনুর বাজে
    		বাজে বাজে লো ঘুঙুর কাহার পায়ে।
    স্ত্রী	:	হাতে তল্‌তা বাঁশের বাঁশি মুখে জংলা হাসি
    		কে ঐ বুনো গো বড়ায় আদুল গায়ে।।
    পুরুষ	:	তার ফিঙের মত এলোখোঁপায় ঝিঙেরি ফুল
    স্ত্রী	:	যেন কালো ভোম্‌রার গা কালার ঝামর চুল।
    দ্বৈত	:	ও যদি না হতো পর
    		দু’জনের হতো ঘর
    		একই গাঁয়ে গো।।
    পুরুষ	:	ওর বাঁকা ভঙ্গিমা দেখে
    		তৃতীয়ার চাঁদ ডেকে,
    		হতে চাহে ওর হাঁসুলি-হার।
    স্ত্রী	:	ঝিলের শঙ্খ ঝিনুক বলে
    		কিনুক বিনামূলে
    		আমরা হব কালার কণ্ঠেরই হার।
    পুরুষ	:	ও মেয়ে না পাহাড়ি-ঝর্নার সুর
    স্ত্রী	:	ও পুরুষ না কষ্টি পাথরের ঠাকুর
    দ্বৈত	:	যদি বাসত ভালো, যদি আসত কাছে
    		রাখতাম হিয়ায় লুকায়ে গো।।
    
  • চুড়ির তালে নুড়ির মালা

    বাণী

    চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে লো –
    খোঁপায় দোলে বুনো ফুলের কুঁড়ি।
    কালো ছোঁড়ার কাঁকাল ধ’রে নাচে মাতাল ছুঁড়ি লো।।
    মহুয়া মদের নেশা পিয়ে বুঁদ হয়েছে বৌয়ে–ঝিয়ে
    চাঁদ ছুটছে মনকে নিয়ে
    ডুরি ছেঁড়া ঘুড়ি (যেন) লো।।
    বাজে নুপূর পাঁইজোড় সারা গায়ে নাচের ঘোর
    ওলো লেগেছে, মন হ’ল নেশায় বিভোর;
    ওই আকাশে চাঁদ হের মেঘের সাথে যেন করে খুনসুড়ি লো।।
    
  • ঝুমঝুম ঝুমরা নাচ নেচে কে এলো

    বাণী

    ঝুমঝুম ঝুমরা নাচ নেচে কে এলো গো সই লো দেখে আয়।
    বৈঁচি বনে বিরহে বাউরি বাতাস বহে এলোমেলো গো।।
    আঁড়বাঁশি বাজায় আড়চোখে তাকায়
    তীর হানার ভঙ্গিতে ধনুক বাঁকায়
    নন্দন পাহাড়ে তাহারে দেখে চাঁদ আঁউরে গেল গো।।
    ঝাঁকড়া চুলের পাশে টুলটুলে চোখ হাসে কতই ছলে
    মোরলা মাছ যেন খেলে বেড়ায় গো কালো জলে।
    মৌটুসির মো ফেলে ভোমরা রয় তাকিয়ে
    গুরুজনের মত বটের তরু দাঁড়িয়ে জট পাকিয়ে
    আমলকি গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখি, দেখতে কি তা পেল গো (সে)।।
    

    নাটিকাঃ ‘অর্জুন বিজয়’

  • ঝুমুর নাচে ডুমুর গাছে ঘুঙুর বেঁধে গায়

    বাণী

    দ্বৈত	:	ঝুমুর নাচে ডুমুর গাছে ঘুঙুর বেঁধে গায় (লো)।
    		নাচন দুজন মাদল, বাঁশি, নূপুর নিয়ে আয় (লো)।।
    স্ত্রী	:	আর জনমে চোরকাঁটা তুই ছিলি (রে)
    		এই জনমে আঁচল ছিঁড়ে হৃদয়ে বিঁধিলি।
    পুরুষ	:	চোরকাঁটা নয় ছিলাম পানের খিলি লো
    		গয়না ছিলাম গায় (লো)।।
    স্ত্রী	:	ঝিলমিলয়ে ঝিলের জল নাচায় শালুক ফুল —
    পুরুষ	:	শালুক যেন মুখাখানি তোর লো ঝিলের ঢেউ যেন এলোচুল।
    স্ত্রী	:	কুহু কুহু ডেকে কোকিল কাহার কথা কহে
    পুরুষ	:	সেই কথা কয় কোয়েলা আর জনমে করেছি যা তোরই বিরহে।
    দ্বৈত	:	সে জনমের দু’টি হৃদয় এ জনমে হায়
    		এক হতে যে চায় লো এক হতে যে চায়।।
    
  • তুমি আমার চোখের বালি

    বাণী

    তুমি আমার চোখের বালি, ওগো বনমালী।
    আমার চোখে পড়ল কখন, তোমার রূপের কালি।।
    (চোখ)	চাইলে ও-রূপ সইতে নারি
    	নয়ন মুদেও রইতে নারি,
    তোমার লীলা, প্রিয়জনে কাঁদাও খালি।।
    কাঁদিয়ে আমায় করলে কানা, কানাই একি লীলা,
    এবার ম’রে আর জনমে যেন হই কুটিলা।
    	তোমার নয়ন-মণি রাইকে নিয়ে
    	রাখব ঘরে দুয়ার দিয়ে
    চোখে চোখে সেদিন যেন হয় মিতালি।।
    
  • নাচের নেশার ঘোর লেগেছে

    বাণী

    	নাচের নেশার ঘোর লেগেছে নয়ন পড়ে ঢু’লে (লো)।
    	বুনোফুল পড়লো ঝ’রে নাচের ঘোরে
    				দোলন-খোঁপা খুলে (লো)।।
    	শুনে এই মাদল-বাজা
    	নাচে চাঁদ রাতের রাজা নাচে লো নাচে —
    	শালুকের কাঁকাল ধ’রে
    	তাল-পুকুরের জলে হে’লে দু’লে (লো)।।
    	আঁউরে গেল ঝুম্‌কো জবা লেগে গরম গালের ছোঁওয়া
    	বাঁশি শুনে ঘুলায় মনে কয়লা-খাদের ধোঁওয়া (লো)।
    সই	নাচ ফুরালে ফিরে’ ঘরে,
    	রাত কাটাব কেমন ক’রে
    	পড়বে মনে বাঁশুরিয়ার চোখ দু’টি টুলটুলে (লো)।।
    

  • নিম ফুলের মউ পি’য়ে ঝিম হয়েছে ভোমরা

    বাণী

    নিম ফুলের মউ পি’য়ে ঝিম হয়েছে ভোমরা।
    মিঠে হাসির নূপুর বাজাও ঝুমুর নাচো তোমরা।।
    কভু কেয়া কাঁটায়, কভু বাব্‌লা-আঠায়
    বারে বারে ভোমরার পাখা জড়ায়ে গো — পাখা জড়ায়
    দেখে হেসে লুটিয়ে পড়ে ফুলের দেশের বউরা।।
    
  • বনের হরিণ আয় রে বনের হরিণ আয়

    বাণী

    বনের হরিণ আয় রে বনের হরিণ আয়
    কাজল-পরা চোখ নিয়ে আয় আমার আঙিনায় রে।।
    (দেখ্‌) নেই বনে কেউ এক্‌লা দুপুর
    আয় ঝরা পাতায় বাজিয়ে নুপুর, ঝুমুর ঝুমুর
    তোরে ডাকে নোটন পায়রার দল ডাকে মেঘের ঝরোকায় রে।।
    কি দেখে তুই ধীরি ধীরি চাস্‌ রে ফিরি ফিরি,
    বন্‌-শিকারির তীর নহে ও, ঝরনা ঝিরি ঝিরি।
    	মাদল বাজে ঈশান কোণে
    	ঝড় উঠেছে আমার মনে
    সেই তুফানের তালে তালে নাচ্‌বি চপল পায় রে।।
    
  • বল্ সই বসে কেনে একা আনমনে

    বাণী

    বল্ সই বসে কেনে একা আনমনে
    চল সই সই পাতাবি গাঁদা ফুলের সনে।।
    নিয়ে পাথর কুচি, আউস ধানের গুছি
    অজয় নদীর ধারে খেল্‌ব নিরজনে।।
    দেখিস্‌ আস্‌বে ফিরে তোর চাঁদ নতুন চাঁদে,
    চাঁদ-মুখ রেখে ঘরে কে সই রইতে পারে 
    		আঁধার কয়লা খাদে!
    আস্‌বে পোষা কোকিল, ডাকবে মহুল বনে।।
    কিন্‌বে ধেনো জমি এবার টাকা এনে,
    সে আর যেন গয়না কাপড় না কেনে
    তোর বলতে যদি লাজে বাধে মুখে
    আমি বল্‌ব তারে যা তুই ভাবিস মনে।।
    
  • বাঁশি কে বাজায় বনে আমি চিনি

    বাণী

    বাঁশি কে বাজায় বনে আমি চিনি আমি চিনি,
    কলসে কাঁকন চুড়ি তাল দিয়ে কয় গো রিনিঝিনি।
    			আমি চিনি আমি চিনি।।
    বুঝি গো বন পাপিয়া তারেই দেখে
    ‘চোখ গেল, চোখ গেল’ বলে উঠে ডেকে।
    ও বাঁশি বাজলে ‘জলে যাসনে’, (ও বৌ যাস্‌নে)
    বলে ‘ননদিনী’ ‘ননদিনী’।আমি চিনি আমি চিনি।।
    মোর সেই বাঁশুরিয়ায় চেনে পাড়ার পড়শিরা
    চেনে তায় যায় যমুনায় গো যত প্রেমের গরবীরা।
    সে যে মোর ঘর জ্বালানো পর ভুলানো
    আমার কালো বরণ গো, তমালের ডাল দুলানো।
    মন কয় আমায় নিয়ে গো সেই ত খেলে ছিনিমিনি।।