শ্যামা-সঙ্গীত

  • মা খড়গ নিয়ে মাতিস রণে

    বাণী

    (মা)		খড়গ নিয়ে মাতিস রণে নয়ন দিয়ে বহে ধারা (মা)
    (এমন)	একাধারে নিষ্ঠুরতা কৃপা তোরই সাজে তারা।।
    			তোর করে অসুর-মুন্ডরাশি
    			অধরে না ধরে হাসি
    		জানিস্ মরলে তোর আঘাতে তোরই কোলে যাবে তারা।।
    		মা দুই হাতে তোর বর ও অভয় আর দু’হাতে মুন্ড অসি,
    		ললাটে তোর পূর্ণিমা-চাঁদ, কেশে কৃষ্ণা চতুর্দ্দশী।
    			জননী-প্রায় আঘাত করে
    			দিস্ মা দোলা বক্ষে ধ’রে
    		পাপ-মুক্ত করার ছলে অসুর বধিস ভব-তারা।।
    
  • মা মেয়েতে খেল্‌ব পুতুল আয় মা

    বাণী

    মা মেয়েতে খেল্‌ব পুতুল আয় মা আমার খেলাঘরে।
    আমি মা হয়ে মা শিখিয়ে দেব পুতুল খেলে কেমন করে।।
    কাঙাল অবোধ করবি যারে বুকের কাছে রাখিস্ তারে (মা)
    [নইলে কে তার দুখ ভোলাবে
    যারে রত্ন মানিক দিবি না মা, উচিত সে তার মাকে পাবে]
    আবার কেউ বা ভীষণ দামাল হবে কেউ থাকবে গৃহ কোণে প’ড়ে।।
    মৃত্যু সেথায় থাকবে না মা থাকবে লুকোচুরি খেলা
    রাত্রি বেলায় কাঁদিয়ে যাবে আসবে ফিরে সকাল বেলা।
    কাঁদিয়ে খোকায়, ভয় দেখিয়ে, ভয় ভোলাবি আদর দিয়ে (মা)
    [বেশি তারে কাঁদাস না মা, মা ছেড়ে সে পালিয়ে যাবে]
    সে খেলে যখন শ্রান্ত হবে ঘুম পাড়াবি বক্ষে ধ’রে।।
    
  • মাকে আমার দেখেছে যে

    বাণী

    মাকে আমার দেখেছে যে ভাইকে সে কি ঘৃণা করে।
    ত্রিলোক-বাসী প্রিয় তাহার পরান কাঁদে সবার তরে॥
    নাই জাতি ভেদ উচ্চ-নীচের জ্ঞান
    তাহার কাছে সকলে সমান,
    দেখলে গুহক চন্ডালে সে রামের মত বক্ষে ধরে॥
    মা আমাদের মহামায়া পরমা প্রকৃতি
    পিতা মোদের পরমাত্মা রে তাই সবার সাথে প্রীতি
    মোদের সবার সাথে প্রীতি।
    সন্তানে তাঁর ঘৃণা করে মাকে করে পূজা
    সে পূজা তার নেয় না কভু, নেয় না দশভূজা।১
    (মোরা) এই ভেদ-জ্ঞান ভুলব যেদিন
    মা সেই দিন আসবে ঘরে॥
    

    ১. সে পূজা তার নেয় না চতুর্ভুজা, ওরে নেয় না দশভুজা

  • মাগো আমি তান্ত্রিক নই

    বাণী

    মাগো আমি তান্ত্রিক নই তন্ত্র মন্ত্র জানি না মা।
    আমার মন্ত্র যোগ-সাধনা ডাকি শুধু শ্যামা শ্যামা।।
    	যাই না আমি শ্মশান মশান
    	দিই না পায়ে জীব বলিদান,
    খুঁজতে তোকে খুজি না মা অমাবস্যা ঘোর ত্রিযামা।।
    ঝিল্লী যেমন নিশীথ রাতে একটানা সুর গায় অবিরাম
    তেমনি করে নিত্য আমি জপি শ্যামা তোমারি নাম।
    	শিশু যেমন অনায়াসে
    	জননীরে ভালোবাসে,
    তেমনি সহজ সাধনা মোর তাতেই পাব তোর দেখা মা।।
    
  • মাগো তোরি পায়ের নূপুর বাজে

    বাণী

    মাগো তোরি পায়ের নূপুর বাজে
    এই বিশ্বের সকল ধ্বনির মাঝে।।
    জীবের ভাষায় পাখির মধুর গানে,
    সাগর রোলে নদীর কলতানে
    সমীরণের মরমরে শুনি সকাল সাঁঝে।।
    আমার প্রতি নিঃশ্বাসে মা রক্তধরার মাঝে
    প্রাণের অনুরণনে তোর চরণধ্বনি বাজে।
    গভীর প্রণব ওঙ্কারে তোর কালি (মা গো মহাকালী)
    সেই নৃত্যলীলার স্তবগাথা গান চরণতলে নটরাজে।।
    
  • মাতল গগন-অঙ্গনে ঐ

    বাণী

    মাতল গগন-অঙ্গনে ঐ আমার রণ-রঙ্গিণী মা।
    সেই মাতনে উঠল দুলে ভূলোক দ্যুলোক গগন-সীমা।।
    	আঁধার-অসুর-বক্ষপানে
    	অরুণ-আলোর খড়গ হানে,
    মহাকালের ডম্বরূতে উঠল বেজে মা’র মহিমা।।
    সৃষ্টি-প্রলয় যুগল নূপুর বাজে শ্যামার যুগল পায়ে,
    গড়িয়ে পড়ে তারার মালা উল্কা হয়ে গগন-গায়ে।
    লক্ষ গ্রহের মুন্ডমালা দোলে গলে দোলে ঐ
    বজ্র-ভেরীর ছন্দ-তালে নাচে শ্যামা তাথৈ থৈ,
    অগ্নি-শিখায় ঝলকে ওঠে খড়গ-ঝরা লাল শোণিমা।।
    
  • মোরে মায়ার ডোরে বাঁধিস যদি মা

    বাণী

    মোরে মায়ার ডোরে বাঁধিস যদি মা
    তোরেই সে ডোর খুলতে হবে।
    খুলিয়া মায়া ডোর মুছিবি আঁখি লোর
    (আমি) আকুল হয়ে মা কাঁদব যবে।।
    ওমা তোর কালী নাম যখনই মনে হয়
    মনের কালিমা অমনি হয় লয়,
    অভাবে দুঃখে শোকে আমার কিবা ভয়;
    আমি যে গর্ব করি তোরই গরবে।।
    শত অপরাধ করে দিনের খেলায়
    ছুটে আসি তোর কোলে সন্ধ্যাবেলায়;
    সংসার পথে মা মাখি যতই ধূলি,
    মুছিয়ে রাঙা হাতে কোলে নিবি তুলি।
    আমি সেই ভরসাতে মা হাসি খেলি ভবে।।
    
  • যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ

    বাণী

    যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ আর শ্রীমন্ত তোরে।
    সেই নাম তুই শিখিয়ে দে মা, ডাকব আমি তেমনি ক’রে।।
    	বেদ-পুরাণে যে নাম শুনি
    	যে নাম জপে ঋষি-মুনি
    সেই নাম দে, যে নাম নিতে বক্ষ ভাসে অশ্রু-নীরে।।
    ভয় যদি তোর ভক্তি দিতে, কর মা অসুর দানব মোরে
    আসবি যখন শাস্তি দিতে, দেখব তোরে নয়ন ভরে।।
    	তোর হাতে মা মরণ হলে
    	ঠাঁই পাব যে তোরই কোলে
    আঘাত করে ছেলেকে মা কাঁদে যেমন বক্ষে ধরে।।
    
  • রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে

    বাণী

    রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে
    মায়ের পায়ের ফুল কুড়িয়ে বেঁধেছি মোর শিরে॥
    	মা’র চরণামৃত খেয়ে
    	অমৃতে প্রাণ আছে ছেয়ে,
    দুঃখ অভাব ভাবনার ভার দিয়েছি মা ভবানীরে॥
    তারা নামের নামাবলী জড়িয়ে আমার বুকে,
    মায়ের কোলে শিশুর মত ঘুমাই পরম সুখে।
    	মা’র ভক্তের চরণ ধূলি
    	নিয়েছি মোর বক্ষে তুরি
    মায়ের পূজার প্রসাদ পেতে আমি আসি ফিরে ফিরে॥
    
  • শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা

    বাণী

    শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা (তোরে) যায় না পাওয়া কেঁদে।
    (তাই) শাক্ত সাধক রাখে তোরে ভক্তি-ডোরে বেঁধে।।
    (মা) শাক্ত বড় শক্ত ছেলে
    (সে) জানে দড়ি আলগা পেলে
    যাবি পালিয়ে চোখে ধূলা দিয়ে মায়া জালে বেঁধে।।
    (তুই) সুরাসুরে ভুলিয়ে রাখিস্‌ ইন্দ্রত্বের মোহে,
    (ওমা) গুণের কিছু ঘাট নাই তোর নির্গুণ তাই কহে।
    তোর মায়াতে ভুলে গিয়ে,
    বিষ্ণু ঘুমান লক্ষী নিয়ে
    (তোর) অন্ত খুঁজে শিব হয়েছেন ভবঘুরে বেদে।।
    

  • শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে

    বাণী

    শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে ভয় কে পায়।
    মা যে আমার শবের মাঝে শিব জাগায়।।
    আনন্দেরই নন্দিনী সে শান্তি সুধা কণ্ঠ বিষে
    মায়ের চরণ শোভে অরুণ আলোর লাল জবায়।।
    চার হাতে মা'র চার যুগেরই খঞ্জনী,
    নৃত্য-তালে নিত্য ওঠে রনঝণি'।
    মা পায় না ধ্যানে যোগীন্দ্র সেই যোগমায়ায়।। 
    
  • শ্মশানে জাগিছে শ্যামা

    বাণী

    শ্মশানে জাগিছে শ্যামা
    	অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে
    জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ
    	চিতার আগুণ ঢেকে স্নেহ–আঁচলে।
    সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি’ সুখ কৈলাস
    বরাভয় রূপে মা শ্মশানে করেন বাস,
    কি ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে
    	ঘুমাবি জননীর চরণ–তলে।।
    জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার জ্বালায়
    তাহারে ডাকিছে মা ‘কোলে আয়, কোলে আয়’
    জীবনে শ্রান্ত ওরে ঘুম পাড়াইতে তোরে
    	কোলে তুলে নেয় মা মরণেরি ছলে।।
    
  • শ্যামা তোর নাম যার জপমালা

    বাণী

    শ্যামা তোর নাম যার জপমালা তার কি মা ভয় ভাবনা আছে।
    দুঃখ-অভাব-রোগ-শোক-জরা লুটায় মা তার পায়ের কাছে॥
    	যার চিত্ত নিবেদিত তোর চরণে
    	ওমা কি ভয় তাহার জীবনে মরণে।
    যেমন খেলে শিশু মায়ের সম তোর অভয় কোলে সে তেমনি নাচে॥
    	রক্ষামন্ত্র যার শ্যামা তোর নাম,
    	সকল বিপদ তারে করে প্রণাম।
    	সদা প্রসন্ন মন তার ধ্যানে মা তোর,
    	ভূমানন্দে মা গো রহে সে বিভোর।
    তার নিকটে আসিতে নারে কালো কঠোর তব নাম প্রসাদ সে লভিয়াছে॥
    
  • শ্যামা নামের ভেলায় চ'ড়ে

    বাণী

    শ্যামা নামের ভেলায় চ'ড়ে কাল-নদীতে দুলি।
    ঘাটে ঘাটে ঘটে ঘটে (আমি) সুরের লহর তুলি।।
    	কাল-তরঙ্গে ভাসিয়ে অঙ্গ,
    	দেখে বেড়াই কত রঙ্গ,
    কায়ায় কায়ায় রঙ-বেরঙের (ওরে) শত মায়ার ঠুলি।।
    জন্মান্তর ঘাটে ঘাটে ভাসি উঠি ডুবি
    মা নিশিদিন ডাকে আমায়, 'ওরে আয় আমারে ছুঁবি'।
    	মোরে কাল-স্রোতে ভাসানের ছলে
    	মা লীলা দেখান নাট-মহলে
    ওই খেলার (ছলে) শেষে আপনি এসে (মা) বক্ষে নেবেন তুলি।।
    
  • শ্যামা নামের লাগলো আগুন

    বাণী

    শ্যামা নামের লাগলো আগুন আমার দেহ ধূপ–কাঠিতে।
    যত জ্বলি সুবাস তত ছড়িয়ে পড়ে চারিভিতে।।
    		ভক্তি আমার ধূমের মত
    		উর্দ্ধে ওঠে অবিরত,
    শিব–লোকের দেব–দেউলে মা’র শ্রীচরণ পরশিতে।।
    ওগো অন্তর–লোক শুদ্ধ হল পবিত্র সেই ধূপ–সুবাসে,
    মা’র হাসিমুখ চিত্তে ভাসে চন্দ্রসম নীল আকাশে।
    		যা কিছু মোর পুড়ে কবে
    		চিরতরে ভস্ম হবে
    মা’র ললাটে আঁকব তিলক সেই ভস্ম–বিভূতিতে।।
    
  • শ্যামা বড় লাজুক মেয়ে

    বাণী

    	শ্যামা বড় লাজুক মেয়ে কেবলই সে লুকাতে চায়।
    	আলো-আঁধার পর্দা টেনে বালিকা সে পালিয়ে বেড়ায়।।
    		নিখিল ভুবন আছে তারে ঘিরে
    		আমার মেয়ে তবু বসন খুঁজে ফিরে,
    	তারে যে দেখে সে এক নিমেষে তারি মাঝে লয় হয়ে যায়।।
    	তাই কেবলি সে লুকাতে চায়।।
    	কোটি শিব ব্রহ্মা হরি অনন্তকাল গভীর ধ্যানে,
    তার	সে লুকোচুরি খেলায় পায় না দিশা পায় না মনে।
    		রবি শশী গ্রহতারার ফাঁকে
    		যে দেখেছে পালিয়ে যেতে মাকে,
    (সে)	আপনাকে আর পায় না খুঁজে মায়াবিনীর মহামায়ায়।।