একতাল

  • অন্তরে তুমি আছ চিরদিন

    বাণী

    অন্তরে তুমি আছ চিরদিন ওগো অন্তর্যামী
    বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি তা-ই পাই না তোমারে আমি।।
    প্রাণের মতন, আত্মার সম
    আমাতে আছ হে অন্তরতম
    মন্দির রচি’ বিগ্রহ পূজি দেখে হাস তুমি স্বামী।।
    সমীরণ সম, আলোর মতন বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
    গন্ধ-কুসুমে সৌরভ সম প্রাণে-প্রাণে আছ জড়ায়ে।
    তুমি বহুরূপী তুমি রূপহীন —
    তব লীলা হেরি অন্তবিহিন।
    তব লুকোচুরি খেলা সহচরী আমি যে দিবসযামী।।
    
  • অরুণ কিরণ সুধা-স্রোতে ভাসাও প্রভু মোরে

    বাণী

    অরুণ কিরণ সুধা-স্রোতে, ভাসাও প্রভু মোরে।
    গ্লানি পাপ তাপ মলিনতা, যাক ধুয়ে চিরতরে।।
    প্রশান্ত স্নিগ্ধ তব হাসি, ঝরুক অশান্তি প্রাণে বুকে
    প্রভাত আলোর ধারা, যেমন ঝরে সব ঘরে।।
    যেমন বিহগেরা জাগি ভোরে, আলোর নেশার ঘোরে
    আকাশ পানে..., বন্দে প্রেম-মনোহরে।।
    

    ১. পান্ডুলিপিতে পরিবর্ত লাইন হিসেবে ‘সবারে আজ যেন ভালোবাসি’ লেখা আছে।
    ২. পান্ডুলিপিতে গানটির সঙ্গে কবি-কৃত স্বরলিপি আছে।

  • অসুর-বাড়ির ফেরত এ মা

    বাণী

    অসুর-বাড়ির ফেরত এ মা
    শ্বশুর-বাড়ির ফেরত নয়।
    দশভুজার করিস পূজা
    		ভুলরূপে সব জগতময়।।
    নয় গোরী নয় এ উমা
    মেনকা যার খেতো চুমা
    রুদ্রাণী এ, এযে ভূমা
    		এক সাথে এ ভয়-অভয়।।
    অসুর দানব করল শাসন এইরূপে মা বারে বারে,
    রাবণ-বধের বর দিল মা এইরূপে রাম-অবতারে।
    দেব-সেনানী পুত্রে লয়ে মা
    এই বেশে যান দিগ্বিজয়ে
    সেই রূপে মা’র কর্‌রে পূজা
    		ভারতে ফের আসবে জয়।।
    
  • আজিকে তোমারে স্মরণ করি

    বাণী

    আজিকে তোমারে স্মরণ করি’
    মৃত্যু আড়ালে জীবন তোমার
    	ওঠে অপরূপ মহিমায় ভরি’।।
    জীবন তোমার তটিনীর মত
    বয়ে গেছে বাধা উপল-আহত
    আত্মারে রাখি চির জাগ্রত
    	অম্বরে শির রেখেছিলে ধরি’।।
    তোমার এ স্মৃতি বাসরে আমরা
    	তোমারে শ্রদ্ধা তর্পণ দানি,
    তোমার ধর্ম তোমার কর্ম
    	দিক অভিনব মহিমা আনি।
    এসো আমাদের করুণ স্মৃতিতে
    নয়নের জলে বিষাদিত চিতে
    জীবনের পরপার হতে
    	পড়ুক আশিস সান্ত্বনা বারি।।
    
  • আমার দুখের বন্ধু তোমার কাছে

    বাণী

    আমার	দুখের বন্ধু, তোমার কাছে চাইনি ত’ এ সুখ।
    আমি	জানিনি ত বুকে পেয়েও কাঁদবে এ মন বুক।।
    		আমার শাখায় যবে ফোটেনি ফুল
    		আমি চেয়েছি পথ আশায় আকুল,
    আজ	ফোটা ফুলে কাঁদে কেন কুসুম ঝরার দুখ।।
    প্রিয়	মিলন-আশায় ছিনু সুখে ছিলে যবে দূর,
    আজ	কাছে পেয়ে পরান কাঁদে বিদায়-ভয়াতুর।
    		এ যে অমৃতে গরল মিশা
    		প্রাণে কেবলি বাড়িছে তৃষা,
    আমার	স্বর্গে কেন মলিন ধরার বেদন জাগরূক।।
    
  • আমার দেওয়া ব্যথা ভোলো

    বাণী

    আমার দেওয়া ব্যথা ভোলো।
    আজ যে যাবার সময় হলো।।
    নিব্‌বে যখন আমার বাতি 
    আসবে তোমার নূতন সাথি, 
    আমার কথা তা'রে বলো।।
    ব্যথা দেওয়ার কী যে ব্যথা 
    জানি আমি, জানে দেবতা।
    জানিলে না কী অভিমান 
    করেছে হায় আমায় পাষাণ, 
    দাও যেতে দাও, দুয়ার খোলো।।
    
  • আয় মা উমা! রাখ্‌ব এবার

    বাণী

    (মা)		আয় মা উমা! রাখ্‌ব এবার ছেলের সাজে সাজিয়ে তোরে।
    (ওমা)		মা’র কাছে তুই রইবি নিতুই, যাবি না আর শ্বশুর ঘরে।।
    				মা হওয়ার মা কী যে জ্বালা
    				বুঝবি না তুই গিরি-বালা
    		তোরে না দেখলে শূন্য এ বুক কী যে হাহাকার করে।।
    		তোরে টানে মা শঙ্কর-শিব আসবে নেমে জীব-জগতে,
    		আনন্দেরই হাট বসাব নিরানন্দ ভূ-ভারতে।
    				না দেখে যে মা, তোর লীলা
    				হ’য়ে আছি পাষাণ-শীলা
    		আয় কৈলাসে তুই ফির্‌বি নেচে বৃন্দাবনের নূপুর প’রে।।
    
  • উদার ভারত! সকল মানবে

    বাণী

    উদার ভারত! সকল মানবে দিয়াছ তোমার কোলে স্থান।
    পার্সি-জৈন-বৌদ্ধ-হিন্দু খ্রিস্টান-শিখ-মুসলমান।।
    তুমি পারাবার, তোমাতে আসিয়া মিলেছে সকল ধর্ম জাতি;
    আপনি সহিয়া ত্যাগের বেদনা সকল দেশের করেছ জ্ঞাতি;
    নিজেরে নিঃস্ব করিয়া, হয়েছ বিশ্ব-মানব-পীঠস্থান।।
    নিজ সন্তানে রাখি নিরন্ন, অন্য সবারে অন্ন দাও,
    তোমার স্বর্ণ রৌপ্য মানিকে বিশ্বের ভান্ডার ভরাও;
    আপনি মগ্ন ঘন তমসায় ভুবনে করিয়া আলোক দান।।
    বক্ষে ধরিয়া কত সে যুগের কত বিজেতার গ্লানির স্মৃতি,
    প্রভাত আশায় সর্বসহা মা যাইপছ দুখের কৃষ্ণাতিথি,
    এমনি নিশীথে এসেছিলে বুকে আসিবে আবার সে ভগবান।।
    
  • এই দেহেরই রঙমহলায় খেলিছেন

    বাণী

    এই দেহেরই রঙমহলায় খেলিছেন লীলা-বিহারী।
    মিথ্যা মায়া নয় এ কায়া কায়ায় হেরি ছায়া তাঁরি।।
    	রূপের রসিক রূপে রূপে
    	খেলে বেড়ায় চুপে চুপে,
    মনের বনে বাজায় বাঁশি মন-উদাসী বন-চারী।।
    	তার খেলা-ঘর তোর এ দেহ
    	সে ত নহে অন্য কেহ
    সে যে রে তুই, — তবু মোহ ঘুচল না তোর হায় পূজারি।।
    	খুঁজিস্ তারে ঠাকুর-পূজায়
    	উপাসনায় নামাজ রোজায়,
    চাল কলা আর সিন্নি দিয়ে ধর্‌বি তারে হায় শিকারি!
    পালিয়ে বেড়ায় মন-আঙিনায় সে যে শিশু প্রেম-ভিখারি।।
    
  • এসো এসো রস-লোক বিহারী

    বাণী

    এসো এসো রস-লোক বিহারী এসো মধুকর-দল।
    এসো নভোচারী — স্বপন-কুমার এসো ধ্যান-নিরমল।।
    	এসো হে মরাল কমল-বিলাসী,
    	বুলবুল পিক সুর-লোক-বাসী,
    এসো হে স্রষ্টা এসো অ-বিনাশী এসো জ্ঞান-প্রোজ্জ্বল।।
    	দীওয়ানা প্রেমিক এসো মুসাফির —
    	ধূলি-ম্লান তবু উন্নত শির,
    আমরা-অমৃত-জয়ী এসো বীর আনন্দ বিহ্বল।।
    	মাতাল মানব করি’ মাতামাতি
    	দশ হাতে যবে লুটে যশ খ্যাতি,
    তোমরা সৃজিলে নব দেশ জাতি অগোচর অচপল।।
    	খেল চির-ভোলা শত ব্যথা স’য়ে
    	সংঘাত ওঠে সঙ্গীত হ’য়ে,
    শত বেদনার শতদল ল’য়ে লীলা তব অবিরল।।
    	ভুলি’ অবহেলা অভাব বিষাদ
    	ধরণীতে আনো স্বর্গের স্বাদ,
    লভি’ তোমাদের পুণ্য প্রসাদ পেনু তীর্থের ফল।।
    
  • এসো মা ভারত-জননী আবার

    বাণী

    এসো	মা ভারত-জননী আবার জগৎ-তারিণী সাজে।
    	রাজরানী মা’র ভিখারিনী বেশ দেখে প্রাণে বড় বাজে॥
    		শিশু-জগতেরে মায়ের মতন,
    		তুমি মা প্রথম করিলে পালন,
    আজ	মাগো তোরই সন্তানগণ কাঁদিছে দৈন্য-লাজে॥
    		আঁধার বিশ্বে তুমি কল্যাণী
    		জ্বালিলে প্রথম জ্ঞান-দীপ আনি;
    	হইলে বিশ্ব-নন্দিতা রানী নিখিল নর-সমাজে॥
    		দেখা মা পুন সে অতীত মহিমা,
    		মুছে দে ভীরুতা গ্লানির কালিমা,
    	রাঙায়ে আবার দশদিক-সীমা দাঁড়া মা বিশ্ব-মাঝে॥
    
  • এসো হৃদি-রাস-মন্দিরে এসো

    বাণী

    এসো হৃদি-রাস-মন্দিরে এসো হে রাসবিহারী কালা।
    মম নয়নের পাতে রাখিয়াছি গেঁথে অশ্রু-যূথীর মালা।।
    	আমি	ত্যাজিয়াছি কবে লাজ-মান-কুল
    		বহি’ কলঙ্ক এসেছি গোকুল,
    আমি ভুলিয়াছি ঘর শ্যাম নটবর কর মোরে গোপবালা।।
    		আমার কাঁদন-যমুনার নদী
    	শ্যাম হে ভাঁটি টানে শুধু বহে নিরবধি,
    তারে বাঁশরির তানে বহাও উজানে ভোলাও বিরহ-জ্বালা।।
    
  • ওরে ও-স্রোতের ফুল

    বাণী

    ওরে ও-স্রোতের ফুল!
    ভেসে ভেসে হায় এলি অসহায় কোথায় পথ-বেভুল।।
    	কোল্ খালি ক’রে কোন্ লতিকার
    	নিভাইয়া নয়নের জ্যোতি কা’র,
    বনের কুকুম অকূল পাথারে খুঁজিয়া ফিরিস্ কূল।।
    ভবনের স্নেহ নারিল রাখিতে ঠেলে ফেলে দিল যা’রে,
    সারা ভুবনের স্নেহ কি কখনো তাহারে ধরিতে পারে।
    	জল নয়, তোর জননী যে ভুঁই
    	অভিমানী! সেথা চল্ ফিরে তুই,
    ধূলিতেও যদি ঝরিস্ সেথায় স্বর্গ সেই অতুল।।
    
  • কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ

    বাণী

    কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ আমার হৃদয় গগনে।
    এসো প্রিয়া এসো বঁধূ-বেশে এই বিদায়-গোধূলি-লগনে।।
    	দিনের চিতার রক্ত-আলোকে
    	শুভ-দৃষ্টি গো হবে চোখে চোখে,
    আমার মরণ-উৎসব-ক্ষণে শঙ্খ বাজুক সঘনে।।
    চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া হের খুঁজিছে মোদেরে তারাদল,
    সজল-বসনা বাদল-পরীর নয়ন করিছে ছল ছল।।
    	মরণে তোমারে পাইব বলিয়া 
    	জীবনে করেছি আরাধনা প্রিয়া,
    এসো মায়ালোক-বিহারিণী মোর কুহেলি-আঁধার-স্বপনে।।
    
  • কাঁদিতে এসেছি আপনার ল’য়ে

    বাণী

    কাঁদিতে এসেছি আপনার ল’য়ে কাঁদাতে আসিনি হে প্রিয়, তোমারে।
    এ মম আঁখি-জল আমরি নয়নের, ঝরিবে না এ জল তোমার দুয়ারে।।
    	ভালো যদি বাসি একাকী বাসিব
    	বিরহ-পাথারে একাকী ভাসিব,
    কভু যদি ভুলে আসি তব কূলে, চমকি’ চলিয়া যাব দূর পারে।।
    	কাঁটার বনে মোর ক্ষণেকের তরে
    	ফুটেছে রাঙা ফুল শুধু লীলা-ভরে,
    	মালা হয়ে কবে দুলিবে গলে কা’র।
    	জাগিব একাকী ল’য়ে স্মৃতি কাঁটার
    	কেহ জানিবে না, শুকাল কে কোথা
    	কা’র ফুলে কা’রে সাজালে দেবতা,
    নিশীথ-অশ্রু মোর ঝরিবে বিরলে তব সুখ-দিনে হসির মাঝারে।।
    

    ১. মম আঁখি-বারি, ২. থাকুক আমারি, ৩. গলে

  • কার বাঁশরি বাজে মূলতানী-সুরে

    বাণী

    কার		বাঁশরি বাজে মূলতানী-সুরে
    			নদী-কিনারে কে জানে।
    সে 		জানে না কোথা সে সুরে
    			ঝরে ঝর-নিঝর পাষাণে।।
    একে		চৈতালী-সাঁঝ আলস
    তাহে		ঢলঢল কাঁচা বয়স,
    রহে		চাহিয়া, ভাসে কলস,
    ভাসে		হৃদি বাঁশুরিয়া পানে।।
    বেণী		বাঁধিতে বসি’ অঙ্গনে
    বধু		কাঁদে গো বাঁশরি-স্বনে।
    যারে		হারায়েছে হেলা-ভরে
    তারে		ও সুরে মনে পড়ে,
    		বেদনা বুকে গুমরি’ মরে
    			নয়ন ঝুরে বাধা না মানে।।
    
  • কে তুমি দূরের সাথি

    বাণী

    কে তুমি দূরের সাথি
    		এলে ফুল ঝরার বেলায়।
    বিদায়ের বংশী বাজে
    		ভাঙা মোর প্রাণের মেলায়॥
    গোধূলির মায়ায় ভুলে
    এলে হায় সন্ধ্যা-কূলে,
    দীপহীন মোর দেউলে
    		এলে কোন্‌ আলোর খেলায়॥
    সেদিনো প্রভাতে মোর 
    		বেজেছে আশাবরি,
    পূরবীর কান্না শুনি
    		আজি মোর শূন্য ভরি।
    অবেলায় কুঞ্জবীথি
    এলে মোর শেষ অতিথি,
    ঝরা ফুল শেষের গীতি
    		দিনু দান তোমার গলায়॥
    
  • কেঁদে কেঁদে নিশি হল ভোর

    বাণী

    কেঁদে কেঁদে নিশি হল ভোর।
    মিটিল না সাধ উঠিল না চাঁদ ফিরিল কেঁদে চকোর।।
    	শিয়রে দীপ নিভিয়া আসে
    	ভোরের বাতাস কাঁদে হতাশে,
    মালার ফুল ঝরে নিরাশে — যেন মোর আঁখি লোর।।
    	আমার নয়নে নয়ন রাখি’
    	চাহে শুকতারা ছলছল আঁখি,
    পাপিয়ার সনে পিয়া পিয়া ডাকি — এসো এসো চিতচোর।।
    
  • কেন করুণ সুরে হৃদয়পুরে বাজিছে বাঁশরি

    বাণী

    কেন করুণ সুরে হৃদয় পুরে বাজিছে বাঁশরি
    ঘনায় গহন নীরদ সঘন নয়ন মন ভরি॥
    বিজলি চমকে পবন দমকে পরান কাঁপে রে
    বুকের বঁধুরে বুকে বেঁধে ঝুরে বিধুরা কিশোরী॥
    
  • জননী মোর জন্মভূমি

    বাণী

    জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায়ে নোয়াই মাথা।
    স্বর্গাদপি গরীয়সী স্বদেশ আমার ভারত-মাতা।।
    তোমার স্নেহ যায় ব’য়ে মা শত ধারায় নদীর স্রোতে
    ঘরে ঘরে সোনার ফসল ছড়িয়ে পড়ে আঁচল হ’তে,
    স্নিগ্ধ-ছায়া মাটির বুকে তোমার শীতল পাঁটী পাতা।।
    স্বর্গের ঐশ্বর্য লুটায় তোমার ধূলি-মাখা পথে
    তোমার ঘরে নাই যাহা মা, নাইক তাহা ভূ-ভারতে,
    ঊর্ধ্বে আকাশ নিম্নে সাগর গাহে তোমার বিজয়-গাথা।।
    আদি জগদ্ধাত্রী তুমি জগতেরে প্রথম প্রাতে
    শিক্ষা দিলে দীক্ষা দিলে, করলে মানুষ আপন হাতে,
    তোমার কোলের লোভে মা গো রূপ ধ’রে আসেন বিধাতা।।
    ছেলের মুখের অন্ন কেড়ে খাওয়ালি মা যাদের ডেকে
    তারাই দিল তোর ললাটে চির-দাসীর তিলক এঁকে,
    দেখে শুনে হয় মা মনে, নেইক বিচার, নেই বিধাতা।।