ভৈরবী

  • কেঁদে কেঁদে নিশি হল ভোর

    বাণী

    কেঁদে কেঁদে নিশি হল ভোর।
    মিটিল না সাধ উঠিল না চাঁদ ফিরিল কেঁদে চকোর।।
    	শিয়রে দীপ নিভিয়া আসে
    	ভোরের বাতাস কাঁদে হতাশে,
    মালার ফুল ঝরে নিরাশে — যেন মোর আঁখি লোর।।
    	আমার নয়নে নয়ন রাখি’
    	চাহে শুকতারা ছলছল আঁখি,
    পাপিয়ার সনে পিয়া পিয়া ডাকি — এসো এসো চিতচোর।।
    
  • কেন আসিলে ভালোবাসিলে

    বাণী

    কেন আসিলে ভালোবাসিলে দিলে না ধরা জীবনে যদি।
    বিশাল চোখে মিশায়ে মরু চাহিলে কেন গো বে–দরদী।।
    		ছিনু অচেতন আপনা নিয়ে
    		কেন জাগালে আঘাত দিয়ে
    তব আঁখিজল সে কি শুধু ছল একি মরু হায় নহে জলধি।।
    ওগো কত জনমের কত সে কাঁদন করে হাহাকার বুকেরি তলায়
    ওগো কত নিরাশায় কত অভিমান ফেনায়ে ওঠে গভীর ব্যথায়।
    মিলন হবে কোথায় সে কবে কাঁদিছে সাগর স্মরিয়া নদী।।
    
  • কেন নিশি কাটালি অভিমানে

    বাণী

    কেন নিশি কাটালি অভিমানে।
    ডুবে গেল চাঁদ দূর বিমানে।।
    মান-ভরে চাতকী এ বাদলে
    মিটালি না পিয়াসা মেঘ-জলে,
    কোথা রবে এ মেঘে কেবা জানে।।
    রহে চাঁদ দূরে অমা নিশীথে
    তবু ফোটে কুমুদী সরসীতে,
    রহে চাহি’ কলঙ্কী শশী-পানে।।
    যে ফাগুনে ফুল ফুটিল রাতে
    রবে না সে-ফাগুন কালি প্রাতে,
    যে ফুটিল না, সে শুকাবে বাগানে।।
    
  • কেহ বলে তুমি রূপ সুন্দর

    বাণী

    		কেহ বলে তুমি রূপ সুন্দর, কেহ বলে তুমি জ্যোতি!
    		আমি জানি প্রভু তুমি যে আমার চির-জনমের পতি।।
    			কেহ বলে তুমি চিরদিন দূরে রহ
    			কেহ বলে, আছে অন্তরে অহরহ,
    যার		যাহা সাধ ডাকে সেই নামে (প্রভু) তোমার নাহিক ক্ষতি।।
    		অন্ধ দেখে না চন্দ্র-সূর্য তবু জানে আলো আছে,
    (আমি) 	দেখিনি, তবুও তোমার প্রকাশ সহজ-আমার কাছে
    			রূপ কি অরূপ কাহারেও নাহি দুষি,
    			নাই দেখি ফুল সুরভি পেয়েই খুশি,
    (আমি)		অঞ্জলি ভরি’ অমৃত চাই, পাত্রে নাহিক মতি।।
    
  • কোন্‌ সে-সুদূর অশোক-কাননে

    বাণী

    কোন্‌ সে-সুদূর অশোক-কাননে বন্দিনী তুমি সীতা।
    আর কতকাল জ্বলিবে আমার বুকে বিরহের চিতা।।
    			সীতা — সীতা!!
    	বিরহে তোমার অরণ্যচারী
    	কাঁদিব রঘুবীর বল্কলধারী,
    ঝরা চামেলির অশ্রু ঝরায়ে ঝুরিছে বন-দুহিতা।।
    			সীতা — সীতা!!
    তোমার আমার এই অনন্ত অসীম বিরহ নিয়া,
    কত আদি কবি কত রামায়ন রচিবে, কে জানে প্রিয়া!
    	বেদনার সুর-সাগর তীরে
    	দয়িতা আমার এসো এসো ফিরে,
    আবার আঁধার হৃদি-অযোধ্যা হইবে দীপান্বিতা।।
    			সীতা — সীতা!!
    

    নাটকঃ ‘বন্দিনী বিরহিনী সীতা’

  • খড়ের প্রতিমা পূজিস্‌ রে তোরা

    বাণী

    খড়ের প্রতিমা পূজিস্‌ রে তোরা, মাকে ত’ তোরা পূজিস্‌নে!
    প্রতি মা’র মাঝে প্রতিমা বিরাজে (ঘরে ঘরে ওরে)
    			হায় রে অন্ধ, বুঝিস্‌নে।।
    বছর বছর মাতৃ পূজার ক’রে যাস্‌ অভিনয়
    ভীরু সন্তানে হেরি লজ্জায় মাও যে পাষাণময়,
    মাকে জিনিতে সাধন-সমরে সাধক ত’কেহ বুঝিস্‌নে।
    মাটির প্রতিমা গ’লে যায় জলে, বিজয়ায় ভেসে যায়,
    আকাশে-বাতাসে মা’র স্নেহ জাগে অতন্দ্র করুণায়।
    তোরই আশে-পাশে তাঁর কৃপা হাসে —
    			কেন সেই পথে তাঁরে খুঁজিস্‌নে।।
    

    নাটিকাঃ ‌‘বিজয়া’

  • খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে

    বাণী

    খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে।
    প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
    	শূন্যে মহা আকাশে
    	মগ্ন লীলা বিলাসে,
    ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে।।
    তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী,
    পড়িয়া আছে রাঙা পায়ের কাছে রাশি রাশি।
    	নিত্য তুমি, হে উদার
    	সুখে দুখে অবিকার,
    হাসিছ খেলিছ তুমি আপন মনে।।
    
  • গানগুলি মোর আহত পাখির সম

    বাণী

    	গানগুলি মোর আহত পাখির সম
    	লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম।।
    		বাণ–বেঁধা মোর গানের পাখিরে
    		তু’লে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,
    	লভিবে মরণ চরণে তোমার সুন্দর অনুপম।।
    তারাসুখের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে —
    তবনয়ন–শায়কে বিঁধিলে তাহাদের কবে।
    		মৃত্যু আহত কন্ঠে তাহার
    	‌‌একি এ গানের জাগিল জোয়ার —
    	মরণ বিষাদে অমৃতের স্বাদ আনিলে নিষাদ মম।।
    
  • চক্র সুদর্শন ছোড়কে মোহন

    বাণী

    চক্র সুদর্শন ছোড়কে মোহন তুম ব্যনে বনওয়ারী।
    ছিন লিয়ে হ্যয় গদা-পদম্‌ সব মিল করকে ব্রজনারী।।
    	ছার ভুজা আব দো বনায়ে
    	ছোড়কে বৈকুণ্ঠ ব্রিজ মে আয়ে,
    রাস রচায়ে ব্রিজ্‌কে মোহন ব্যন্ গ্যয়ে মুরলী-ধারী।।
    	সত্যভামাকো ছোড়কে আয়ে
    	রাধা প্যারী সাথমে লায়ে,
    বৈতরণী কো ছোড়কে ব্যন গ্যয়ে যমুনাকে তটচারী।।
    
  • চল মন আনন্দ-ধাম

    বাণী

    চল	মন আনন্দ-ধাম।
    	চল মন আনন্দ-ধাম রে,
    	চল আনন্দ-ধাম।।
    	লীলা-বিহার প্রেম লোক
    	নাই রে সেথা দুঃখ শোক,
    সেথা	বিহরে চির-ব্রজ-বালক — 
    	বন্‌শিওয়ালা শ্যাম রে
    	চল আনন্দ-ধাম।।
    	নাহি মৃত্যু নাহি ভয়
    	নাহি সৃষ্টি, নাহি লয়,
    খেলে	চির-কিশোর চির-অভয় —
    	সঙ্গীত ওম্ না রে
    	চল আনন্দ ধাম।।
    	নাহি চরাচর নাহি রে ব্যোম
    	লীলা-সাথী গ্রহ রবি ও সোম,
    	সঙ্গীত ‘ওম্’ নাম রে
    	চল আনন্দ ধাম।।
    

    ১. অবাঙ্‌মনস-গোচরম্‌

  • জাগো জাগো বধূ নব-বাসরে

    বাণী

    জাগো — জাগো বধূ নব-বাসরে।
    গৃহ-দীপ জ্বালো কল্যাণ-করে।।
    ভুবনের ছিলে, এলে ভবনে
    স্বপন হ’তে এলে জাগরণে,
    শ্রীমতী আসিলে শ্রী হীন ঘরে।।
    স্বপন-বিহারিণী অকুণ্ঠিতা
    পরিলে গুণ্ঠন সলাজ ভীতা’,
    কমলা আসিলে কাঁকন প’রে।।
    
  • জাগো জাগো রে মুসাফির

    বাণী

    জাগো জাগো, রে মুসাফির হ’য়ে আসে নিশিভোর।
    ডাকে সুদূর পথের বাঁশি ছাড় মুসাফির-খানা তোর।।
    অস্ত-আকাশ-অলিন্দে ঐ পান্ডুর কপোল রাখি’
    কাঁদে মলিন ভোরের শশী, বিদায় দাও বন্ধু চকোর।।
    মরুচারী খুঁজিস সলিল অগ্নিগিরির কাছে, হায়!
    খুঁজিস অমর ভালোবাসা এই ধরণীর এই ধূলায়।
    দারুণ রোদের দাহে খুঁজিস কুঞ্জ-ছায়া স্বপ্ন-ঘোর।।
    
  • ডেকে ডেকে কেন তারে ভাঙালি ঘুমের ঘোর

    বাণী

    ডেকে ডেকে কেন তারে ভাঙালি ঘুমের ঘোর
    	কেন ভাঙালি
    স্বপনে মোর এসেছিল, সখি, স্বপন কুমার মনচোর
    	কেন ভাঙালি ঘুমের ঘোর।।
    সে যেন লো পাশে ব'সে কহিল হেসে হেসে
    ‌‘যাব না আর পরদেশে’, সখি, মোছ মোছ আঁখিলোর’।।
    দেখালো তার হৃদয় খুলি’, কহিল : ‌‘হের প্রিয়ে
    তোমার অধিক ব্যথা হেথায় তোমারে ব্যথা দিয়ে।’
    জানি না মোর হিয়ার চেয়েও অধিক ক্ষত তার হৃদয়
    সে হৃদয়ে আমার ছবি, সকল হিয়া আমি-ময়।
    তাহার জীবন-মালারি মাঝে, সখি, আমি যেন সোনার ডোর।।
    আমি কহিনু, বুঝেছি সখা তোমার এ দুখ দেওয়ার ছল,
    ভালোবাসার ফুল না শুকায় তুমি তাই চাহ মোর চোখেরই জল’।
    জেগে দেখি কেঁদে কেঁদে, সখি, ভিজেছে বুকের আঁচল।।
    
  • তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও

    বাণী

    তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়।
    ওগো বিজয়ী নিখিল হৃদয় কর কর জয় মোহন মায়ায়।।
    নহে ঐ এক হিয়ার সমান হাজার কাবা হাজার মস্‌জিদ;
    কি হবে তোর কাবার খোঁজে, আশয় খোঁজ তোর হৃদয় ছায়ায়।।
    প্রেমের আলোয় যে দিল্‌ রোশন, যেথায় থাকুক সমান তাহার —
    খোদার মস্‌জিদ মুরত–মন্দির ঈসাই–দেউল ইহুদ–খানায়।।
    অমর তার নাম প্রেমের খাতায় জ্যোতির্লেখায় রবে লেখা,
    দোজখের ভয় করে না সে, থাকে না সে বেহেশ্‌ত্‌ আশায়।।
    
  • তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি

    বাণী

    তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
    টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
    বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
    হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, (ওরে) ‌‘আয়’,
    বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
    (ওগো) কাল্‌-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
    বিশ্ব ভরি' ওঠে স্তব নমো নমঃ
    অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম।
    ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
    বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
    ধরি' অজানা পথ আসিল অনাগত
    জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।
    
  • তুমি আমার সকাল বেলার সুর

    বাণী

    তুমি আমার সকালবেলার সুর
    হৃদয় অলস–উদাস–করা অশ্রু ভারাতুর।।
    ভোরের তারার মত তোমার সজল চাওয়ায়,
    ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
    রাত্রি–শেষের চাঁদ তুমি গো বিদায়–বিধুর।।
    তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল
    শিশির–নাওয়া শুভ্র–শুচি পূজারিণীর তুল।
    অরুণ তুমি, তরুণ তুমি, করুণ তারো চেয়ে
    হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ–লোকের মেয়ে
    তুমিইন্দ্র–সভার মৌন–বীণা নীরব নূপুর।।
    
  • তুমি চ’লে যাবে দূরে লায়লী

    বাণী

    (হায়) 	তুমি চ’লে যাবে দূরে লায়লী তব মজনু কাঁদিবে একা।
    	বুঝি পাব না তোমায় জীবনে বুঝি এই নিয়তির লেখা।।
    

    নাটিকা: ‘লায়লী-মজনু’

  • তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে

    বাণী

    তুমি	ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে।
    তুমি	কান্না পাওয়াও কাননকে গো ফুল-ঝরা প্রভাতে॥
    তুমি	ভৈরবী সুর উদাস বিধুর
    	অতীত দিনের স্মৃতি সুদূর,
    তুমি	ফোটার আগে ঝরা মুকুল বৈশাখী হাওয়াতে॥
    তুমি	কাশের ফুলের করুণ হাসি মরা নদীর চরে
    তুমি	শ্বেত-বসনা অশ্রুমতী উৎসব-বাসরে।
    তুমি	মরুর বুকে পথ-হারা
    	গোপন ব্যথার ফল্গুধারা,
    তুমি	নীরব বীণা বাণীহীনা সঙ্গীত-সভাতে॥
    
  • তুমি যখন এসেছিলে তখন আমার ঘুম ভাঙেনি

    বাণী

    তুমি যখন এসেছিলে তখন আমার ঘুম ভাঙেনি
    মালা যখন চেয়েছিলে বনে তখন ফুল জাগেনি।।
    	আমার আকাশ আঁধার কালো
    	তোমার তখন রাত পোহালো
    তুমি এলে তরুণ-আলো তখন আমার মন রাঙেনি।।
    ওগো রুদ্ধ ছিল মোর বাতায়ন পূর্ণ শশী এলে যবে,
    আঁধার-ঘরে একেলা জাগি হে চাঁদ আবার আসবে কবে।
    	আজকে আমার ঘুম টুটেছে
    	বনে আমার ফুল ফুটেছে
    ফেলে যাওয়া তোমারি মালায় বেঁধেছি মোর বিনোদ-বেনী।।
    
  • তোমার মনে ফুট্‌বে যবে প্রথম মুকুল

    বাণী

    তোমার মনে ফুট্‌বে যবে প্রথম মুকুল
    প্রিয় হে প্রিয় আমারে দিও সে প্রেমের ফুল।।
    	দীরঘ বরষ মাস তাহারই আশে
    	জাগিয়া রব তব দুয়ার পাশে
    বহিবে কবে ফুল-ফোটানো দখিনা বাতাস অনুকূল।।
    আর কারে দাও যদি আমার সে ধ্যানের কুসুম
    ক্ষতি নাই, ওগো প্রিয়, ভাঙুক, এ অকরুণ ঘুম।
    	গুঞ্জরি’ গুঞ্জরি’ ভ্রমর সম
    	কাঁদিব তোমারে ঘিরি’, প্রিয়তম।
    হুতাস বাতাস সম কুসুম ফুটায়ে চলে যাব দূরে বেভুল।।