গজল

  • মদির আঁখির সুধায় সাকি ডুবাও আমার

    বাণী

    মদির আঁখির সুধায় সাকি		ডুবাও আমার এ তনু মন
    আজিকে তোমায় ও আমায়		বেদনার বাসর জাগরণ।
    মঙ্গালস ও আঁখি তব,			সাকি, দিল দোলা প্রাণে।।
    বাদল-ছাওয়া এ গুল-বাগিচায়	বুলবুল কাঁদে গজল গানে।।
    গোলাবী গুলের নেশা			ছিল মোর ফুলেল ফাগুনে।
    শুকায়ে গিয়াছে ফুলবন,		নাই গোলাব গুলিস্তানে।।
    শুনি, সাকি তোমার কাছে		ব্যথা ভোলার দারু আছে —
    হিয়া কোন অমিয়া যাচে		জান তুমি, খোদা জানে।।
    দুখের পশরা লয়ে			বিফল কাঁদিয়া বৃথা (সাকি)।
    সকলি গিয়াছে যখন			যাক ঈমান শ্যরাব পানে।।
    
  • মম প্রাণ নিয়ে নিঠুর খেল এ কি খেলা

    বাণী

    মম প্রাণ নিয়ে নিঠুর খেল এ কি খেলা (হায়)।
    ক্ষণে ভালোবাসা হায় ক্ষণে অবহেলা।।
    সকালে গাঁথিয়া মালা পায়ে দল বিকালে তায়।
    তেমনি দলিতে চাহ আমার পরান কি হায়।
    সহিতে পারি না আর এই হেলাফেলা।
    জলরূপী একি কোন্ মরীচিকা তুমি কি গো।
    ডেকে এনে মরুভুমে বধিবে এ বনমৃগ।
    বুঝিয়াছি কখন হায় ফুরায়েছে বেলা।।
    
  • মুসাফির মোছ্‌ রে আঁখি–জল

    বাণী

    মুছাফির! মোছ্ রে আঁখি-জল
    		ফিরে চল আপনারে নিয়া
    আপনি ফুটেছিল ফুল
    		গিয়াছে আপ্‌নি ঝরিয়া।।
    রে পাগল! একি দুরাশা,
    জলে তুই বাঁধ্‌বি রে বাসা!
    মেটে না হেথায় পিয়াসা
    		হেথা নাই তৃষা-দরিয়া।।
    বরষায় ফুটল না বকুল
    পউষে ফুট্‌বে কি সে ফুল (রে)
    এ পথে ঝরে সদা ভুল
    		নিরাশার কানন ভরিয়া।।
    রে কবি! কতই দেয়ালি
    জ্বালিলি তোর আলো জ্বালি’
    এলো না তোর বনমালী
    		আধাঁর আজ তোরই দুনিয়া।।
    

  • মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর

    বাণী

    মোর		ঘুমঘোরে এলে মনোহর নমো নম, নমো নম, নমো নম।
    		শ্রাবণ-মেঘে নাচে নটবর রমঝম, রমঝম, ঝমরম
    			(ঝমঝম, রমঝম, রমঝম)।।
    শিয়রে		বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
    মোর		বিকশিল আবেশে তনু নীপ-সম, নিরুপম, মনোরম।।
    মোর		ফুলবনে ছিল যত ফুল
    			ভরি ডালি দিনু ঢালি’ দেবতা মোর
    হায়		নিলে না সে ফুল, ছি ছি বেভুল,
    			নিলে তুলি’ খোঁপা খুলি’ কুসুম-ডোর।
    স্বপনে		কী যে কয়েছি তাই গিয়াছ চলি’
    জাগিয়া	কেঁদে ডাকি দেবতায় প্রিয়তম, প্রিয়তম, প্রিয়তম।।
    
  • যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন উঠিছে দুলে

    বাণী

    যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন উঠিছে দুলে'।
    তারি ঢেউ এ সঙ্গীতে মোর মুরছায় সুরের কূলে।।
    	ভালোবাসা তোমরা যারে
    	দু'দিনেই ভোলো গো তারে (হায়)
    শরতের সজল মেঘ-প্রায় কেঁদে যাও নিমেষে ভুলে।।
    	কঠিন পুরুষেরি মন
    	গলিয়া বহে গো যখন
    বহে সে নদীর মতন চিরদিন পাষাণ-মূলে।।
    আলোর লাগি' জাগে ফুল, নদী ধায় সাগরে যেমন,
    চকোর চায় চাঁদ, চাতক মেঘ, যারে চায় তায় চাহে এই রে মন।
    নিয়ে যায় সুদূর অমরায় পূজে তায় বাণী-দেউলে।।
    

  • যেতে নারি মদিনায় আমি হে প্রিয় নবী

    বাণী

    যেতে নারি মদিনায়, আমি নারি, হে প্রিয় নবী
    আমারই ধ্যানে এসো প্রাণে এসো আল-আরবি।।
    তপ্ত যে নিদারুণ আরবের সাহারা গো
    শীতল হৃদে মম রাখিব তোমারই ছবি।।
    ভালবাস যদি না মরুভূ ধূসর গো
    জ্বালায়ে, হৃদি মম করিব সাহারা গোবি।।
    হে প্রিয়তম, গোপনে তব তরে আমি কাঁদি
    তোমারে দিয়াছি মোর, দুনিয়া আখের সবই।।
    

  • রহি' রহি' কেন আজো সেই মুখ মনে পড়ে

    বাণী

    রহি' রহি' কেন আজো সেই মুখ মনে পড়ে।
    ভুলিতে তা'য় চাহি যত, তত স্মৃতি কেঁদে মরে।।
    দিয়েছি তাহারে বিদায় ভাসায়ে নয়ন-নীরে,
    সেই আঁখি-বারি আজো মোর নয়নে ঝরে।।
    হেনেছি যে অবহেলা পাষাণে বাঁধিয়া হিয়া,
    তারি ব্যথা পাষাণ সম রহিল বুকে চাপিয়া।
    সেই বসন্ত ও বরষা আসিবে গো ফিরে ফিরে,
    আসিবে না আর ফিরে অভিমানী মোর ঘরে।।
    
  • রুমুঝুম রুমুঝুম্ কে এলে নূপুর পায়

    বাণী

    রুমুঝুম রুমুঝুম্ কে এলে নূপুর পায়
    ফুটিল শাখে মুকুল ও রাঙা চরণ-ঘায়।।
    সে নাচে তটিনী-জল টলমল টলমল,
    বনের বেণী উতল ফুলদল মুরছায়।।
    বিজরি-জরীর আঁচল ঝলমল ঝলমল
    নামিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়।
    তালীবন থৈ তাথৈ করতালি হানে ঐ, (হায় রে হায়)
    ‌‌‘কবি, তোর তমালী কই’ — শ্বসিছে পুবালি-বায়।।
    
  • শিউলি ফুলের মালা দোলে

    বাণী

    শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ
    এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই।
    	বকুল বনে এক্‌লা পাখি,
    	আকুল হ’ল ডাকি’ ডাকি’,
    আমার প্রাণ থাকি’ থাকি’ তেমনি কেঁদে১ ওঠে সই।।
    কবরীতে করবী ফুল পরিয়া প্রেমের গরবিনী
    ঘুমায় বঁধু-বাহু পাশে, ঝিমায় দ্বারে নিশীথিনী।
    ডাকে আমায় দূরের বাঁশি কেমনে আজ২ ঘরে রই।।
    

    ১. ডেকে, ২. আর

  • শূন্য আজি গুল-বাগিচা যায় কেঁদে দখিন হাওয়া

    বাণী

    শূন্য আজি গুল-বাগিচা যায় কেঁদে দখিন হাওয়া।
    রাঙা গুলের বাজার আজি স্মৃতির কাটায় ছাওয়া।।
    ধূলি ঢাকা ফুল সমাধি আজি সে গুলিস্তানে
    ছিল যথায় খুশির জলসা বুলবুলির গজল গাওয়া।।
    শুকনো পাতায় ছেয়েছে আজ সাকির চরণ রেখা
    নাহি সেথায় বঁধুর লাগি বঁধূর আসা-যাওয়া।।
    নাহি মিঠা পানির নহর আছে প'ড়ে বালুচর
    এ যেন গো হৃদয়ের ভরা-ডুবির পথ বাওয়া।।
    
  • সখি বলো বঁধুয়ারে নিরজনে

    বাণী

    (সখি) ব’লো বঁধুয়ারে নিরজনে
    দেখা হ’লে রাতে ফুল–বনে।।
    কে করে ফুল চুরি জেনেছে ফুলমালী
    কে দেয় গহীন রাতে ফুলের কুলে কালি
    জেনেছে ফুলমালী গোপনে।।
    ও–পথে চোর–কাঁটা, সখি, তায় বলে দিও
    বেঁধে না বেঁধে না লো যেন তার উত্তরীয়।
    এ বনফুল লাগি’ না আসে কাঁটা’ দলি’
    আপনি যাব চলি’ বঁধুয়ার কুঞ্জ–গলি
    বিনা মূল্যে বিকাইব ও–চরণে।।
    
  • হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে

    বাণী

    হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি।
    তুমি কেন হায় আসিলে হেথায় সুখের স্বরগ হইতে নামি।।
    	চারিপাশে মোর উড়িছে কেবল
    	শুকনো পাতা মলিন ফুল–দল,
    বৃথাই কেন হায় তব আঁখিজল ছিটাও অবিরল দিবস–যামী।।
    	এলে অবেলায় পথিক বেভুল
    	বিঁধিছে কাঁটা নাহি যবে ফুল,
    কি দিয়ে বরণ করি ও চরণ নিভিছে জীবন, জীবন–স্বামী।।
    

  • হিন্দু-মুসলমান দুটি ভাই ভারতের

    বাণী

    হিন্দু-মুসলমান দুটি ভাই ভারতের দুই আঁখি-তারা।
    এক বাগানে দুটি তরু — দেবদারু আর কদমচারা।।
    	যেন গঙ্গা সিন্ধু নদী
    	যায় গো ব’য়ে নিরবধি,
    এক হিমালয় হতে আসে, এক সাগরে হয় গো হারা।।
    	বুলবুল আর কোকিল পাখি
    	এক কাননে যায় গো ডাকি’,
    ভাগীরথী যমুনা বয় মায়ের চোখের যুগল-ধারা।।
    পেটে-ধরা ছেলের চেয়েও চোখে ধরার মায়া বেশি,
    অতীতে ছিল অতিথি, আজ সে সখা প্রতিবেশী।
    	ফুল পাতিয়ে গোলাপ বেলি
    	এক সে-মায়ের বুকে খেলি,
    পাগল তারা — ভিন্ন ভাবে আল্লা ভগবানে যারা।।