গজল

  • এত কথা কি গো কহিতে জানে

    বাণী

    এত কথা কি গো কহিতে জানে
    		চঞ্চল ঐ আঁখি
    নীরব ভাষায় কি যে ক'য়ে যায়
    	ও সে মনের বনের পাখি।।
    বুঝিতে পারি না ঐ আঁখির ভাষা
    জলে ডুবে তবু মেটে না পিপাসা,
    আদর সোহাগ প্রেম ভালোবাসা
    	অভিমান মাখামাখি।।
    মুদিত কমলে ভ্রমরেরি প্রায়
    বন্দী হইয়া কাঁদিয়া বেড়ায়
    চাহিয়া চাহিয়া মিনতি জানায়
    	সুনীল আকাশে ডাকি'।।

  • এত জল ও কাজল চোখে

    বাণী

    এত জল ও কাজল চোখে, পাষানী আনলে বল কে।
    টলমল জল-মোতির মালা দুলিছে ঝালর-পলকে ।।
    দিল কি পূব হাওয়াতে দোল, বুকে কি বিঁধিল কেয়া?
    কাঁদিয়া কুটিলে গগন এলায়ে ঝামর-অলকে।।
    চলিতে পৈঁচি কি হাতের বাঁধিল বৈচি-কাঁটাতে?
    ছাড়াতে কাঁচুলির কাঁটা বিঁধিল হিয়ার ফলকে।।
    [যে দিনে মোর দেওয়া-মালা ছিঁড়িলে আনমনে সখি,
    জড়াল জুই-কুসুমি-হার বেণীতে সেদিন ওলো কে।।
    যে-পথে নীর ভরণে যাও বসে রই সে পথ-পাশে
    দেখি, নিত কার পানে চাহি কলসীর সলিল ছলকে।।]
    মুকুলী-মন সেধে সেধে কেবলি ফিরিনু কেঁদে,
    সরসীর ঢেউ পালায় ছুটি' না ছুঁতেই নলিন-নোলকে ।।
    বুকে তোর সাত সাগরের জল, পিপাসা মিটল না কবি
    ফটিক জল ! জল খুঁজিস যেথায় কেবলি তড়িৎ ঝলকে।। 
    
  • এলো ফুলের মরশুম

    বাণী

    এলো ফুলের মরশুম শরাব ঢালো সাকি
    বকুল শাখে কোকিল ওঠে ডাকি’।।
    গেয়ে ওঠে বুলবুল আঙ্গুর-বাগে
    নীল আঁখি লাল হলো রাঙ্-অনুরাগে
    আজি ফুল-বাসরে শিরাজির জল্‌সা
    		বরবাদ্‌ হবে না-কি।।
    চাঁপার গেলাস ভরি’ ভোমরা মধু পিয়ে
    মহুয়া ফুলের বাসে আঁখি আসে ঝিমিয়ে।
    পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে বন-মাঝে
    গোলাপ-কপোল রাঙে গোলাপী লাজে
    হৃদয়-ব্যথার সুধা আছে তব কাছে
    		রেখো না তারে ঢাকি’।।
    

  • এসো বঁধূ ফিরে এসো

    বাণী

    এসো বঁধূ ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান।
    দিব ও-চরণে ডারি’ মোর তনু মন প্রাণ।।
    	জানি আমি অপরাধী
    	তাই দিবানিশি কাঁদি’,
    নিমেষের অপরাধের কবে হবে অবসান।।
    	ফিরে গেলে দ্বারে আসি’
    	বাসি কিনা ভালোবাসি,
    কাঁদে আজ তব দাসী — তুমি তার হৃদে ধ্যান।।
    	সে-দিন বালিকা-বধূ
    	শরমে মরম-মধু
    পি’য়াতে পারিনি বঁধূ — আজ এসে কর পান।।
    	ফিরিয়া আসিয়া হেথা
    	দিও দুখ দিও ব্যথা,
    সহে না এ নীরবতা — হে দেবতা পাষান।।
    
  • এসো বসন্তের রাজা হে আমার

    বাণী

    এসো বসন্তের রাজা হে আমার
    এসো এ যৌবন-বাসর-সভাতে।।
    ফুলের দরবারে পাখির জলসাতে
    বুকের অঞ্চল-সিংহাসনে মম
    বসো আমার চাঁদ চাঁদনি রাতে।।
    রূপের দীপালি মোর জ্বলবে তোমায় ঘিরে বঁধূ,
    পিয়াব তোমায় পিয়া কানে-কানে কথার মধু।
    বন-কুসুমের মালা দিব বাহুর মালার সাথে
    চরণে হব দাসী বন্ধু হব দুখ রাতে।।
    
  • ঐ ঘর ভুলানো সুরে

    বাণী

    ঐ ঘর ভোলানো সুরে কে গান গেয়ে যায় দূরে। 
    তার সুরের সাথে সাথে মোর মন যেতে চায় উড়ে।। 
    তা'র সহজ গলার তানে ১
    সে ফুল ফোটাতে জানে, 
    তা'র সুরে ভাটির-টানে নব জোয়ার আসে ঘুরে।। 
    তা'র সুরের অনুরাগে 
    বুকে প্রণয়-বেদন জাগে; 
    বনে ফুলের আগুন লাগে, ফুল সুধায় ওঠে পুরে।। 
    বুঝি সুর-সোহাগে ওরি, 
    পায় যৌবন কিশোরী, 
    হিয়া বুঁদ হয়ে গো নেশায় তার পায়ে পায়ে ঘুরে।।
    

    ১. গানে

  • ঐ জল্‌কে চলে লো কার ঝিয়ারি

    বাণী

    ঐ জল্‌কে চলে লো কার ঝিয়ারি। 
    রূপ চাপে না তার নীল শাড়ি।। 
    এমন মিঠি বিজলি দিঠি শেখালে তায় কে গো? 
    রূপে ডুবু ডুবু রবির রঙ-ভরা ছবির, ছোঁয়াচ লেগেছে গো। 
    মন মানে না, আর কি করি ! 
    চলে পিছনে ছুটে’ তারি।। 
    নাচে বুলবুলি ফিঙে ঢেউয়ে নাচে ডিঙে 
    মাঠে নাচে খঞ্জন; 
    তার দু’টি আঁখি-তারা নেচে হতো সারা —
    দেখেছে বল কোন জন? 
    আঁখি নিল যে মোর মন্‌ কাড়ি’ —
    ঘরে থাকিতে আর নারি লো।। 
    গোলাপ বেলী যুঁই-চামেলি - কোন্‌ ফুল তারি তুল্‌ গো
    তার যৌবন-নদী বয় নিরবধি ভাসায়ে দু’ কূল গো 
    নিল ভাসায়ে প্রাণ আমারি 
    রূপে দু’কূল–ছাপা গাঙ্‌ তারি।।
    
  • কত কথা ছিল তোমায় বলিতে

    বাণী

    কত কথা ছিল তোমায় বলিতে
    ভুলে যাই হয় না বলা পথ চলিতে।।
    ভ্রমরা আসে যবে বনেরই পথে
    না-বলা সেই কথা কয় ফুল-কলিতে।।
    পুড়ে মরে পতঙ্গ, দীপ তবু
    পারে না বলিতে, থাকে জ্বলিতে।।
    সে কথা কইতে গিয়ে গুণীর বীণা
    কাঁদে কভু সারঙ কভু ললিতে।।
    যত বলিতে চাই লুকাই তত
    গেল মোর এ জনম হায় মন ছলিতে।।
    
  • করুণ কেন অরুণ আঁখি

    বাণী

    করুণ কেন অরুণ আঁখি দাও গো সাকি দাও শারাব
    হায় সাকি এ আঙ্গুরী খুন নয় ও হিয়ার খুন–খারাব।।
    আর সহে না দিল্‌ নিয়ে এই দিল–দরদির দিল্‌লাগী,
    তাইতে চালাই নীল পিয়ালায় লাল শিরাজি বে–হিসাব।।
    হারাম কি এই রঙিন পানি আর হালাল এই জল চোখের?
    নরক আমার হউক মঞ্জুর বিদায় বন্ধু!লও আদাব।।
    দেখ্‌ রে কবি, প্রিয়ার ছবি এই শারাবের আর্শিতে,
    লাল গেলাসের কাঁচ্‌–মহলার পার হ’তে তার শোন্‌ জবাব্‌।।
    

  • কে এলে মোর ব্যথার গানে গোপন

    বাণী

    কে এলে মোর ব্যথার গানে গোপন-লোকের বন্ধু গোপন
    নাইতে আমার গানের ধারায় এলে সুরের মানসী কোন।।
    	গান গেয়ে যাই আপন মনে
    	সুরের পাখি গহন-বনে
    সে সুর বেঁধে কার নয়নে জানে শুধু তারি নয়ন।।
    	সুরের গোপন বাসর-ঘরে
    	গানের মালা বদল ক'রে
    সকল আঁখির অগোচরে না দেখাতেই মোদের মিলন।।
    

  • কে বিদেশি বন-উদাসী

    বাণী

    কে বিদেশি		বন-উদাসী'
    বাঁশের বাঁশি		বাজাও বনে।
    সুর-সোহাগে	তন্দ্রা লাগে
    কুসুম-বাগের	গুল-বদনে।।
    ঝিমিয়ে আসে	ভোমরা-পাখা
    যুথীর চোখে		আবেশ মাখা
    কাতর ঘুমে		চাঁদিমা রাকা
    ভোর গগনের	দর-দালানে
    দর-দালানে		ভোর গগনে।।
    লজ্জাবতীর		লুলিত লতায়
    শিহর লাগে		পুলক-ব্যথায়
    মালিকা সম		বঁধুরে জড়ায়
    বালিকা-বঁধু		সুখ-স্বপনে।।
    বৃথাই গাঁথি		কথার মালা
    লুকাস কবি		বুকের জ্বালা,
    কাঁদে নিরালা	বনশিওয়ালা
    তোরি উতলা	বিরহী মনে।।
    
  • কেউ ভোলে না কেউ ভোলে

    বাণী

    কেউ		ভোলে না কেউ ভোলে অতীত দিনের স্মৃতি
    কেউ		দুঃখ ল’য়ে কাঁদে কেউ ভুলিতে গায় গীতি।।
    কেউ		শীতল জলদে হেরে অশনির জ্বালা
    কেউ		মুঞ্জরিয়া তোলে তার শুষ্ক কুঞ্জ–বীথি।।
    হেরে		কমল–মৃণালে কেউ কাঁটা কেহ কমল।
    কেউ		ফুল দলি’ চলে কেউ মালা গাঁথে নিতি।।
    কেউ		জ্বালে না আর আলো তার চির–দুখের রাতে,
    কেউ		দ্বার খুলি’ জাগে চায় নব চাঁদের তিথি।।
    
  • কেঁদে যায় দখিন-হাওয়া

    বাণী

    কেঁদে যায় দখিন-হাওয়া ফিরে ফুল-বনের গলি।
    ‘ফিরে যাও চপল পথিক’, দু’লে কয় কুসুম-কলি।
    		দু’লে কয় কুসুম-কলি॥
    ফেলিছে সমীর দীরঘ শ্বাস —  
    আসিবে না আর এ মধুমাস,
    কহে ফুল, ‘জনম জনম এমনি গিয়াছ ছলি’।
    		জনম জনম গিয়াছ ছলি’॥
    কাঁদে বায়, ‘নিদাঘ আসে
    আমি যাই সুদূর বাসে’,
    ফুটে ফুল হাসিয়া ভাসে, ‘প্রিয়তম যেয়োনা চলি’।
    		ওগো প্রিয়তম যেয়োনা চলি’॥
    

  • কেন আন ফুল-ডোর আজি বিদায় বেলা

    বাণী

    কেন	আন ফুল-ডোর আজি বিদয়-বেলা,
    মোছ	মোছ আঁখি-লোর যদি ভাঙিল মেলা॥
    কেন	মেঘের স্বপন আন মরুর চোখে,
    ভু’লে	দিয়ো না কুসুম যারে দিয়েছ হেলা॥
    যবে	শুকাল কানন এলে বিধুর পাখি,
    ল’য়ে	কাঁটা-ভরা প্রাণ এ কি নিঠুর খেলা।
    যদি	আকাশ-কুসুম পেলি চকিতে কবি,
    চল	চল মুসাফির, ডাকে পারের ভেলা॥
    
  • কেন আসিলে ভালোবাসিলে

    বাণী

    কেন আসিলে ভালোবাসিলে দিলে না ধরা জীবনে যদি।
    বিশাল চোখে মিশায়ে মরু চাহিলে কেন গো বে–দরদী।।
    		ছিনু অচেতন আপনা নিয়ে
    		কেন জাগালে আঘাত দিয়ে
    তব আঁখিজল সে কি শুধু ছল একি মরু হায় নহে জলধি।।
    ওগো কত জনমের কত সে কাঁদন করে হাহাকার বুকেরি তলায়
    ওগো কত নিরাশায় কত অভিমান ফেনায়ে ওঠে গভীর ব্যথায়।
    মিলন হবে কোথায় সে কবে কাঁদিছে সাগর স্মরিয়া নদী।।
    
  • কেন কাঁদে পরান কি বেদনায় কারে কহি

    বাণী

    কেন কাঁদে পরান কি বেদনায় কারে কহি।
    সদা কাঁপে ভীরু হিয়া রহি’ রহি’।।
    সে থাকে নীল নভে আমি নয়ন-জল-সায়রে
    সাতাশ তারার সতীন-সাথে সে যে ঘুরে মরে
    কেমনে ধরি সে চাঁদে রাহু নহি।।
    কাজল করি’ যারে রাখি গো আঁখি-পাতে
    স্বপনে যায় সে ধুয়ে গোপনে অশ্রু-সাথে।
    বুকে তায় মালা করি’ রাখিলে যায় সে চুরি
    বাঁধিলে বলয়-সাথে মলয়ায় যায় সে উড়ি’
    কি দিয়ে সে উদাসীর মন মোহি’।।
    
  • কেন দিলে এ কাঁটা যদি গো কুসুম দিলে

    বাণী

    কেন দিলে এ কাঁটা যদি গো কুসুম দিলে
    ফুটিত না কি কমল ও কাঁটা না বিঁধিলে।।
    	কেন এ আঁখি-কূলে
    	বিধুর অশ্রু দুলে
    কেন দিলে এ হৃদি যদি না হৃদয় মিলে।।
    	কেন কামনা-ফাঁদে
    	রূপ-পিপাসা কাঁদে
    শোভিত না কি কপোল ও কালো তিল নহিলে।।
    	কাঁটা-নিকুঞ্জে কবি
    	এঁকে যা সুখের ছবি
    নিজে তুই গোপন রবি তোরি আঁখির সলিলে।।
    
  • কেন ফোটে কেন কুসুম ঝ'রে যায়

    বাণী

    কেন ফোটে কেন কুসুম ঝ'রে যায়!
    মুখের হাসি চোখের জলে ম'রে যায়, হায়।।
    নিশীথে যে কাঁদিল প্রিয় ব'লে
    হায় নিশি-ভোরে সে কেন হায় স'রে যায়।।
    হায় আজ যাহার প্রেম করে গো রাজাধিরাজ
    কাল কেন সে চির-কাঙাল ক'রে যায়।।
    মান-অভিমান খেলার ছলে
    ফেরে না আর যে যায় চ'লে
    মিলন-মালা মলিন ধূলায় ভ'রে যায়।।
    
  • খুশি লয়ে খুশরোজের আয় খেয়ালি

    বাণী

    খুশি লয়ে খুশরোজের আয় খেয়ালি খুশ্‌-নসীব।
    জ্বাল্‌ দেয়ালি শবেরাতের জ্বাল রে তাজা প্রাণ প্রদীপ।।
    	আন্‌ নয়া দ্বীনী ফরমান
    	দরাজ দিলে দৃপ্ত গান,
    প্রাণ পেয়ে আজ গোরস্থান তোর ডাকে জাগুক নকীব।।
    আন্‌ মহিমা হজরতের শক্তি আন্‌ শেরে খোদার,
    কুরবানী আন্‌ কারবালার আন্‌ রহম মা ফাতেমার,
    আন্‌ উমরের শৌর্য বল সিদ্দিকের আন্‌ সাচ্চা মন,
    হাসান হোসেনের সে ত্যাগ শহীদানের মৃত্যুপণ,
    রোজ হাশরে করবেন পার মেহেরবান খোদার হাবিব।।
    খোৎবা পড়বি মসজিদে তুই খতীব নূতন ভাষায়,
    শুষ্ক মালঞ্চের বুকে ফুল ফুটাবি ভোর হাওয়ায়,
    এস্‌মে-আজম এনে মৃত মুসলিমে তুই কর সজীব।।
    
  • গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে

    বাণী

    গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে
    ফুল-হার পরায়ে গলে দিলে জল নয়ন-পাতে।।
    	যে জ্বালা পেনু জীবনে
    	ভুলেছি রাতে স্বপনে
    কে তুমি এসে গোপনে ছুঁইলে সে বেদনাতে।।
    	যবে কেঁদেছি একাকী
    	কেন মুছালে না আঁখি
    নিশি আর নাহি বাকি, বাসি ফুল ঝরিবে প্রাতে।।