গজল

  • নিশীথ হয়ে আসে ভোর

    বাণী

    নিশীথ হয়ে আসে ভোর, বিদায় দেহ প্রিয় মোর।
    রজনী-গন্ধ্যার বনে হের গুঞ্জরিছে ভ্রমর।।
    হের ঐ তন্দ্রা ঢুলু ঢুল্, জড়ায়ে হাতে এলোচুল।
    বধূ যায় সিনান-ঘাটে পথে লুটায় বসন-আকুল।।
    খোল খোল বাহুর মালা, মোছ মোছ প্রিয়া আঁখি,
    শোন্ কুঞ্জ-দ্বারে তব কুহু মুহু মুহু ওঠে ডাকি’।
    হের লো, শিয়রে তব প্রদীপ হয়ে এলো ম্লান,
    দাঁড়াল রাঙা ঊষা ঐ রঙের সাগরে করি’ স্নান।
    আকাশ-অলিন্দে কাঁদে পাণ্ডুর-কপোল শশী,
    শুকতারা নিবু-নিবু ঐ, মলয়া উঠে উছসি,।
    কাঁদে রাতের আঁধার মোর বুকে মুখ রাখি’।।
    
  • পথ চলিতে যদি চকিতে

    বাণী

    পথ চলিতে যদি চকিতে কভু দেখা হয়, পরান-প্রিয়!
    চাহিতে যেমন আগের দিনে তেমনি মদির চোখে চাহিও।।
    		যদি গো সেদিন চোখে আসে জল,
    		লুকাতে সে জল করিও না ছল,
    যে-প্রিয় নামে ডাকিতে মোরে সে-নাম ধরে বারেক ডাকিও।।
    		তোমার বঁধু পাশে (হায়) যদি রয়,
    		মোরও প্রিয় সে, করিও না ভয়,
    কহিব তা’রে, ‘আমার প্রিয়ারে আমারো অধিক ভালোবাসিও’।।‌
    		বিরহ-বিধুর মোরে হেরিয়া,
    		ব্যথা যদি পাও যাব সরিয়া,
    রব না হ’য়ে পথের কাঁটা, মাগিব এ বর মোরে ভুলিও।।
    

  • পরদেশি বঁধুয়া এলে কি এতদিনে

    বাণী

    পরদেশি বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
    আসিলে এতদিন কেমনে পথ চিনে।।
    তোমারে খুঁজিয়া কত রবি-শশী
    অন্ধ হইল প্রিয় নিভিল তিমিরে
    তব আশে আকাশ-তারা দ্বীপ জ্বালি'
    জাগিয়াছে নিশি ঝুরিয়া শিশিরে।
    শুকায়েছে স্বরগ দেবতা তোমা বিনে।।
    কত জনম ধরি' ছিলে বল পাসরি'
    এতদিনে বাঁশরি বাজিল কি বিপিনে।।
    
  • পরদেশী বঁধু ঘুম ভাঙায়ো চুমি' আঁখি

    বাণী

    পরদেশী বঁধু! ঘুম ভাঙায়ো চুমি' আঁখি
    যদি গো নিশীথে গো ঘুমাইয়া থাকি।
    	আমি ঘুমাইয়া থাকি
    	ঘুম ভাঙায়ো চুমি' আঁখি।।
    যদি দীপ নেভে গো কুটিরে
    বাতায়ন-পানে চাহি' যেয়ো না গো ফিরে',
    নিভেছে আঁখি শিখা প্রাণ আছে বাকি
    	আজো প্রাণ আছে বাকি
    	ঘুম ভাঙায়ো চুমি' আঁখি।।
    
  • পলাশ ফুলের মউ পিয়ে ঐ

    বাণী

    পলাশ ফুলের মউ পিয়ে ঐ বউ-কথা-কও উঠ্ল ডেকে।
    শিশ্ দিয়ে যায় উদাস হাওয়া নেবু-ফুলের আতর মেখে।।
    	এমন পূর্ণ চাঁদের রাতি
    	নেই গো আমার জাগার সাথী,
    ফুল-হারা মোর কুঞ্জ-বীথি — কাঁটার স্মৃতি গেছে রেখে।।
    	শূন্য মনে এক্‌লা গুণি
    	কান্না-হাসির পান্না-চুণী,
    বিদায়-বেলার বাঁশি শুনি — আস্‌ছে ভেসে ওপার থেকে।।
    

    ১. শঙ্করা মিশ্র — দাদ্‌রা, ২. সাথে।

  • পান্‌সে জোছ্‌নাতে কে চল গো

    বাণী

    পান্‌সে জোছ্‌নাতে কে			চল গো পানসি বেয়ে’।
    ঢেউ-এর তালে তালে			বাঁশিতে গজল গেয়ে’।।
    মেঘের ফাঁকে ফোটে			বাঁকা শশীর চিকন হাসি,
    উজান বেয়ে চল			তুমি কি তার চোখে চেয়ে।।
    ও-পারে লুকায়ে আঁধার		গভীর ঘন বন-ছায়,
    আকাশে হেলান দিয়ে			আলসে পাহাড় ঘুমায়।
    ঘুমায়ে দূরে সে কোন গ্রাম		বাসরে পল্লী-বধূর প্রায়
    এ-পারে ধূ-ধূ বালুচর			যেন নদীর আঁচল লুটায়।
    ছাড়ি’ এ সুখ-বাস			চলেছ কোথায় গো নেয়ে।।
    নদীর দু’তীরে টানে			বেতস-লতা উত্তরীয়,
    চমকি’ উঠি’ চখি			ডাকে মুহু মুহু ‘কিও!’
    চকোরী চাঁদে ভুলি’			চাহে তব মুখপানে,
    কেঁদে পাপিয়া শুধায়,			‘পিউ কাঁহা, কাঁহা পিও।’
    তুমি যাও আপন-বিভোল		স্বপনে নয়ন ছেয়ে’।।
    
  • পাষাণের ভাঙালে ঘুম

    বাণী

    	পাষাণের ভাঙালে ঘুম			কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়,
    	গলিয়া সুরের তুষার			গীতি –নির্ঝর ব’য়ে যায়।।
    	উদাসী বিবাগী মন			যাচে আজ বাহুর বাঁধন,
    	কত জনমের কাঁদন			ও –পায়ে লুটাতে চায়।।
    ওগো	তোমার চরণ ছন্দে মোর		মুঞ্জরিল গানের মুকুল
    	তোমার বেণীর বন্ধে গো		মরিতে চায় সুরের বকুল
    	চম্‌কে ওঠে মোর গগন		ঐ হরিণ–চোখের চাওয়ায়।।
    
  • পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে

    বাণী

    পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে।
    ‘পিউ পিউ পিউ কাঁহা’ পাপিয়া পিয়া বোলে।।
    সে পিয়া পিয়া সুরে বাদল ঝুরে, নদী-তরঙ্গ দোলে।
    কূলে কূলে কুলু কুলু নদী-তরঙ্গ দোলে।
    ফুটিল দল মেলি’ কেতকী, বেলি, শিখী পেখম খোলে।
    দু’লে দু’লে দু’লে নেচে’ শিখী পেখম খোলে।।
    পিয়ায় যা’রা নাহি পেল হেথায়, তাহারা কি
    এসেছে ধরায় পুন হইয়া পাপিয়া পাখি?
    দেখিয়া ঘরে ঘরে তরুণীর কালো আঁখি
    ‘পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা’ আজিও উঠিছে ডাকি’!
    পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে।।
    
  • প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই

    বাণী

    প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
    পরি চাঁপা ফুলের শাড়ি খয়েরিটিপ,
    জাগি বাতায়নে জ্বালি আঁখি প্রদীপ,
    মালা চন্দন দিয়ে মোর থালা সাজাই।।
    তুমি আসিবে বলে সুদূর অতিথি
    জাগে চাঁদের তৃষা লয়ে কৃষ্ণা তিথি,
    কভু ঘরে আসিকভু বাহিরে চাই।।
    আজি আকাশে বাতাসে কানাকানি,
    জাগে বনে বনে নবফুলের বাণী,
    আজি আমার কথা যেন বলিতে পাই।।
    
  • প্রিয় যাই যাই ব’লো না

    বাণী

    প্রিয় যাই যাই ব’লো না, না না না
    আর ক’রো না ছলনা, না না না॥
    আজো মুকুলিকা মোর হিয়া মাঝে
    না-বলা কত কথা বাজে,
    অভিমানে লাজে বলা যে হ’ল না॥
    কেন শরমে বাধিল কে জানে
    আঁখি তুলিতে নারিনু আঁখি পানে।
    প্রথম প্রণয়-ভীরু কিশোরী
    যত অনুরাগ তত লাজে মরি,
    এত আশা সাধ চরণে দ’লো না॥
    
  • ফাগুন-রাতের ফুলের নেশায় আগুন জ্বালায়

    বাণী

    ফাগুন-রাতের ফুলের নেশায় আগুন জ্বালায় জ্বলিতে আসে।
    যে-দীপশিখায় পুড়িয়া মরে পতঙ্গ ঘোরে তাহারি পাশে।।
    অথই দুখের পাথার-জলে, সুখের রাঙা কমল দোলে
    কূলের পথিক হারায় দিশা দিবস নিশা তাহারি বাসে।।
    সুখের আশায় মেশায় ওরা বুকের সুধায় চোখের সলিল
    মণির মোহে জীবন-দহে বিষের ফণির গরল-শ্বাসে।
    বুকের পিয়ায় পেয়ে হিয়ায় কাঁদে পথের পিয়া লাগি’
    নিতুই নূতন স্বর্গ মাগি’ নিতুই নয়ন জলে ভাসে।।
    

  • ব'লো বঁধুয়ারে নিরজনে

    বাণী

    (সখি) ব'লো বঁধুয়ারে নিরজনে
    দেখা হ'লে রাতে ফুল-বনে।।
    কে করে ফুল চুরি জেনেছে ফুলমালী
    কে দেয় গহীন রাতে ফুলের কুলে কালি
    জেনেছে ফুলমালী গোপনে।।
    ও-পথে চোর-কাঁটা, সখি, তায় বলে দিও
    বেঁধে না বেঁধে না লো যেন তার উত্তরীয়।
    এ বনফুল লাগি' না আসে কাঁটা' দলি'
    আপনি যাব চলি' বঁধুয়ার কুঞ্জ-গলি
    বিনা মূলে বিকাইব ও-চরণে।।
    
  • বউ কথা কও বউ কথা কও

    বাণী

    বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানিনী
    সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে যাবে কত যামিনী।।
    সে কাঁদন শুনি হের নামিল নভে বাদল
    এলো পাতার বাতায়নে যুঁই চামেলী কামিনী।।
    আমার প্রাণের ভাষা শিখে ডাকে পাখি পিউ কাঁহা
    খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে আঁখি মোর সৌদামিনী।।
    
  • বকুল চাঁপার বনে কে মোর

    বাণী

    বকুল চাঁপার বনে কে মোর চাঁদের স্বপন জাগালে —
    অনুরাগের সোনার রঙে হৃদয়-গগন রাঙালে।।
    ঘুমিয়ে ছিলাম কুমুদ-কুঁড়ি বিজন ঝিলের নীল জলে
    পূর্ণ শশী তুমি আসি’ আমার সে ঘুম ভাঙালে।।
    হে মায়াবী তোমার ছোঁয়ায় সুন্দর আজ আমার তনু
    তোমার মায়া রচিল মোর বাদল মেঘে ইন্দ্র ধনু।
    		তোমার টানে হে দরদি
    		দোল খেয়ে যায় কাঁদন-নদী
    কূল হারা মোর ভালোবাসা আজকে কূলে লাগালে।।
    
  • বনে মোর ফুল-ঝরার বেলা

    বাণী

    বনে মোর ফুল-ঝরার বেলা, জাগিল একি চঞ্চলতা।(অবেলায়)
    এলো ঐ শুকনো ডালে ডালে কোন অতিথির ফুল-বারতা।।(এলো ঐ)
    বিদায়-নেওয়া কুহু সহসা এলো ফিরে,
    জোয়ার ওঠে দুলে, মরা নদীর তীরে,
    শীতের বনে বহে দখিনা হাওয়া ধীরে
    			জাগায়ে বিধুর মধুর ব্যথা।।(পরানে)
    রুদ্ধ বাতায়ন খুলে দে, চেয়ে দেখি
    হেনার মঞ্জরি আবার ফুটেছে কী?
    হারানো মানসী ফিরেছে লয়ে কি
    			গত বসন্তের বিহ্বলতা।।(পরানে)
    
  • বসিয়া নদী-কূলে এলোচুলে

    বাণী

    বসিয়া নদী-কূলে,এলোচুলে			কে উদাসিনী
    কে এলে, পথ ভুলে, এ অকূলে		বন-হরিণী।।
    কলসে জল ভরিয়া চায় করুণায়		কুল-বধূরা,
    কেঁদে যায় ফুলে, ফুলে, পদমূলে,		সাঁঝ-তটিনী।।
    দলিয়া কত ভাঙা-মন, ও চরণ,		করেছ রাঙা
    কাঁদায়ে কত না দিল, এলে নিখিল		মন-মোহিনী।।
    হারালি গোধূলি-লগন কবি,			কোন নদী কিনারে,
    একি সেই স্বপন-চাঁদ, পেতেছে ফাঁদ		প্রিয়ার সতিনী।।
    
  • বসিয়া বিজনে কেন একা মনে

    বাণী

    বসিয়া বিজনে		কেন একা মনে
    পানিয়া ভরণে		চলো লো গোরী
    চলো জলে চলো		কাঁদে বনতল
    ডাকে ছলছল		জল-লহরি।।
    দিবা চ’লে যায়		বলাকা-পাখায়
    বিহগের বুকে		বিহগী লুকায়।
    কেঁদে চখা-চাখি		মাগিছে বিদায়
    বারোয়াঁর সুরে		ঝুরে বাঁশরি।।
    ওগো বে-দরদি		ও রাঙা পায়ে
    মালা হয়ে কে গো		গেল জড়ায়ে।
    তব সাথে কবি		পড়িল দায়ে
    পায়ে রাখি তারে		না গলে পরি।।
    

  • বাগিচায় বুলবুলি তুই

    বাণী

    বাগিচায়		বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল
    আজো তার		ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি তন্দ্রাতে বিলোল।।
    আজো হায়		রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশি-দিন
    আসেনি		দখনে হাওয়া গজল গাওয়া মোমাছি বিভোল।।
    কবে সে		ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি', আসবে বাহিরে (রে)
    শিশিরের		স্পর্শ-সুখে ভাঙবে রে ঘুম রাঙবে রে কপোল।
    ফাগুনের		মুকুল-জাগা দু'কূল ভাঙা আসবে ফুলেল বান
    কুঁড়িদের		ওষ্ঠ পুটে লুটবে হাসি ফুটবে গালে টোল।।
    কবি তুই		গন্ধে ভুলে ' ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর
    ফুলে তোর		বুক ভ'রেছিস আজকে জলে ভররে আঁখির কোল।।
    
  • বিঁধে গেল তীর তেরছ তার চাহনি

    বাণী

    বিঁধে গেল তীর তেরছ তার চাহনি।
    বিঁধিল মরম-মূলে চাহিল যেমনি।।
    হৃদয় বনের নিষাদ সে নিঠুর
    তনু তার ফুলবন আঁখি তাহে ফণি।
    এলো যখন স্বপন-পরী উড়ায়ে আঁচল সোনালি,
    মোর ধেয়ান-লোক হতে যেন এলো রূপ ধরে রূপওয়ালী।
    দেহে তার চাঁদিনী-চন্দন মাখা, হায় চাহিল সে যেই
    তার চোখের ঐ তীর খেয়ে কেঁদে কহিল হৃদি;
    ওগো হেনে গেল তীর।।
    
  • ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল-ফোটাতে

    বাণী

    ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল-ফোটাতে।
    বুলবুলি সে ফুলও ফোটায় বন-মাতানোর সাথে সাথে।।
    		আঘাত দিলে, দিলে বেদন
    		রাঙাতে হায় পারলে না মন,
    প্রেমের কুঁড়ি ফুটলো না তাই, পড়লো ঝ’রে নিরাশাতে।।
    আমায় তুমি দেখলে নাকো, দেখলে আমার রূপের মেলা
    হায় রে দেহের শ্মশান-চারী, শব নিয়ে মোর করলে খেলা,
    শয়ন-সাথী হ’লে আমার, রইলে নাকো নয়ন-পাতে।।
    

    গজলের সুরে কৃষ্ঞপ্রেম