ভজন

  • নাচে গৌরীদিবা হিম-গিরি-দুহিতা

    বাণী

    নাচে গৌরীদিবা হিম-গিরি-দুহিতা।
    নাচে দীপ্তিমতী নাচে উমা তপতী নাচে রে চির-আনন্দিতা।।
    তার কিরণ-আচল দোলে ঝলমল
    গিরি-পাষাণ অটল করে টলমল
    গলিয়া তুষার ঝরে নির্ঝর জল
    তার চরণ-ছন্দ-চকিতা।।
    তার নাচের মায়ায় প্রাণ পায় জড় জীব
    ভুলি’ বিরহ সতীর জাগে যোগীন্দ্র শিব,
    জাগে কুসুম-কলি গাহে বিহগ-অলি,
    তার রূপে ত্রিদিব হ’ল দীপন্বিতা।।
    
  • নাচে শ্যাম সুন্দর গোপাল নটবর

    বাণী

    নাচে শ্যাম সুন্দর গোপাল নটবর
    সুঠাম মনোহর মধুর ভঙ্গে
    ঘিরি' সে চরণ ঘুরিছে অগণন
    গ্রহ-তারা গোপী সম রঙ্গে।।
    হেরিয়া তাহারি নৃত্যের হিল্লোল
    পবন উন্মন সাগরে জাগে দোল
    সে নাচে বিবশ নিশীথ দিবস
    জাগে হিন্দোল আলো-আঁধার তরঙ্গে।।
    সে নাচে বৃষ্টি হয় কোটি সৃষ্টি নির্ঝর সম ঝরে ছন্দ
    সে নাচ হেরিয়া বন্ধন টুটে গো জাগে অনন্ত আনন্দ।
    ষড় ঋতু ঘুরে' ঘুরে' হেরে সেই নৃত্য
    প্রেমাবেশে মাতোয়ারা নিখিলের চিত্ত
    তাই এ ত্রিভুবন হলো না রে পুরাতন
    পেল চির-যৌবন নাচি' তারি' সঙ্গে।।
    

  • নাচো শ্যাম-নটবর কিশোর-মুরলীধর

    বাণী

    নাচো শ্যাম-নটবর কিশোর-মুরলীধর অঙ্গ মিশায়ে মম অঙ্গে।
    তোমার নাচের শ্রী ফুটুক আমার এই নৃত্য-বিভঙ্গে।।
    মম রক্তে বাজুক তব পায়ের নূপুর
    আমার কণ্ঠে দাও বাঁশরির সুর,
    	তব বাঁশরির সুর।
    লীলায়িত হয়ে উঠুক এ তনু তোমার প্রেম-আনন্দ-তরঙ্গে।।
    আমার মাঝে হরি, নাচো যবে তুমি আমি নাচি আপনা ভুলি’
    			হরি আমি নাচি আপনা ভুলি’
    শরম ভরম যায় এই দেহ যমুনায় ছন্দের হিল্লোল তুলি’।
    মনে হয় আমি যেন রাসের রাধা জনম জনম আমি নাচি তব সঙ্গে।।
    
  • নীল যমুনা সলিল কান্তি

    বাণী

    নীল যমুনা সলিল কান্তি চিকন ঘনশ্যাম।
    তব শ্যামরূপে শ্যামল হল সংসার ব্রজধাম।।
    রৌদ্রে পুড়িয়া তপিতা অবনি
    চেয়েছিল শ্যাম-স্নিগ্ধা লাবনি,
    আসিলে অমনি নবনীত তনু
    ঢলঢল অভিরাম চিকন ঘনশ্যাম।।
    আধেক বিন্দু রূপ তব দুলে ধরায় সিন্ধুজল
    তব বেণু শুনি’, ওগো বাঁশুরিয়া,
    প্রথম গাহিল কোকিল পাপিয়া,
    হেরি কান্তার-বন-ভুবন ব্যাপিয়া
    বিজড়িত তব নাম; চিকন ঘনশ্যাম।।
    
  • নূপুর মধুর রুনুঝুনু বোলে

    বাণী

    নূপুর মধুর রুনুঝুনু বোলে।
    মন-গোকুলে রুনুঝুনু বোলে।।
    	কূলের বাঁধন টুটে,
    	যমুনা উথলি' ওঠে,
    পুলকে কদম ফোটে পেখম খোলে
    	শিখী পেখম খোলে।।
    ব্রজনারী কুল ভুলে'
    	লুটায় সে পদমুলে
    চোখে জল, বুকে প্রেম- তরঙ্গ দোলে।।
    	শ্রীমতি রাধারই সাথে
    	বিশ্ব ছুটেছে পথে,
    হরি হরি ব'লে মাতে ত্রিভুবন ভোলে।
    	নামে ত্রিভুবন ভোলে।।
    

  • পথে কি দেখলে যেতে আমার

    বাণী

    পথে কি দেখলে যেতে আমার গৌর দেবতারে।
    যা’রে কোল যায় না দেওয়া, কোল দেয় সে ডেকে তারে।।
    নবীন সন্ন্যাসী সে রূপে তার পাগল করে
    আঁখির ঝিনুকে তা’র অবিরল মুক্তা ঝরে।
    কেঁদে সে কৃষ্ণের প্রেম ভিক্ষা মাগে দ্বারে দ্বারে।।
    জগতের জগাই-মাধাই মগ্ন যারা পাপের পাঁকে
    সকলের পাপ নিয়ে সে সোনার গৌর-অঙ্গে মাখে।
    উদার বক্ষে তাহার ঠাঁই দেয় সকল জাতে
    দেখেছ প্রেমের ঠাকুর সচল জগন্নাথে?
    একবার বললে হরি যায় নিয়ে সে ভবপারে।।
    
  • পথে পথে কে বাজিয়ে চলে বাঁশি

    বাণী

    পথে পথে কে বাজিয়ে চলে বাঁশি
    হ’ল বিশ্ব-রাধা ঐ সুরে উদাসী।।
    শুনে ঐ রাখালের বেণু
    আসে ছুটে আলোক-ধেনু,
    ঐ নীল গগনে রাঙা মেঘে ওড়ে গো-খুর রেণু,
    ওসে শ্যাম-পিয়ারী গোপ-ঝিয়ারি গ্রহ তারার রাশি।।
    	সেই বাঁশির অন্বেষণে
    	যত মন-বধু যায় বনে,
    তাদের প্রেম যমুনায় বান ডেকে যায় কুল খোয়ায় গোপনে।
    তারা রাস দেউলে রসের বাউল আনন্দ-ব্রজবাসী।।
    
  • প্রভু রাখ এ মিনতি ত্রিভুবন-পতি

    বাণী

    (প্রভু)		রাখ এ মিনতি ত্রিভুবন-পতি তব পদে মতি।
    		আঁখির আগে যেন সদা জাগে তব ধ্রুব-জ্যোতি।।
    			সংসার মরুমাঝে তুমি মেঘ-মায়া,
    			বিষাদ-শোক তাপে তুমি তরু-ছায়া,
    		সান্ত্বনা দাতা তুমি দুঃখ ত্রাতা অগতির গতি।।
    		জননীর মত আছ ঊর্ধ্বে জাগি
    		জলে স্থলে শূন্যে অগণিত তব দান মোদের লাগি১।
    			ঝঞ্ঝার মাঝে তব বিষাণ বাজে,
    			সহসা ঢলি পড় বনে ফুল-সাজে,
    		কোমলে কঠোরে হে প্রভু বিরাজে তব মহাশক্তি।।
    

    ১. দোলে কালো নিশার কোলে / আলো-উষসী / তিমির তলে তব তিলক জ্বলে / ঐ পূর্ণ শশী।

  • প্রভু সংসারেরি সোনার শিকল

    বাণী

    প্রভু সংসারেরি সোনার শিকল বেঁধো না আর পায়
    তোমার প্রেম ডোরে ত্রিভুবন স্বামী বাঁধ হে আমায়॥
    সারা জীবন বোঝা বয়ে, এসেছি আজ ক্লান্ত হয়ে
    জুড়াতে হে শান্তি দাতা তোমার শীতল ছায়॥
    হে নাথ যতদিন শক্তি ছিল বোঝা বহিবার
    হাসি মুখে বয়েছি নাথ তোমার দেওয়া ভার।
    শেষ হল আজ ভবের খেলা, কি দান দেব যাবার বেলা
    তোমার নামের ভেলায় যেন এ দীন তরে যায়॥
    
  • প্রিয়তম হে আমি যে তোমারি

    বাণী

    প্রিয়তম হে, আমি যে তোমারি চির-আরাধিকা।
    তব নাম গেয়ে প্রেম-বৃন্দাবনে ফিরি ব্রজ-বালিকা।।
    	মম নয়ন দুটি তব দেবালয়ে
    	জ্বলে নিশিদিন আরতি-প্রদীপ হয়ে
    নাম-কলঙ্ক তব হরি-চন্দন মোর গলার মালিকা।।
    মোরে শরণ দাও তব চরণে কর অবনমিতা,
    জনমে জনমে হয়ো প্রভু তুমি, আমি হব দয়িতা।
    	শুধু নাম শুনি, নাথ মনে মনে
    	আমি স্বয়ম্বরা হয়েছি গোপনে,
    বড় সাধ প্রাণে র’ব তোমারি ধ্যানে হব শ্যাম-সাধিকা।।
    
  • ফিরে আয় ঘরে ফিরে আয়

    বাণী

    ফিরে আয়, ঘরে ফিরে আয়
    পথহারা, ওরে ঘর-ছাড়া,
    	ঘরে আয় ফিরে আয়।।
    ফেলে যাওয়া তোর বাঁশরি, রে কানাই —
    কাঁদে লুটায়ে ধুলায়,
    	ফিরে আয় ঘরে আয়।।
    ব্রজে আয় ফিরে ওরে ও কিশোর
    কাঁদে বৃন্দাবন কায়দে রাখা তোর
    বাঁধিব না আর ওরে ননী-চোর
    	অভিমানী ফিরে আয়।।
    

  • বন তমালের শ্যামল ডালে দোলে ঝুলন

    বাণী

    বন তমালের শ্যামল ডালে দোলে ঝুলন দোলায় যুগল রাধা শ্যাম।
    কিশোরী পাশে কিশোর হাসে ভাসে আনন্দ সাগরে আজ ব্রজধাম।।
    	তড়িত লতায় যেন জড়িত জলধরে
    	ওগো যুগল রূপ হেরি মুনির মনোহরে
    পুলকে গগন ছাপিয়া বারি করে বাজে যমুনা তরঙ্গে শ্যাম শ্যাম নাম।।
    	বন ময়ুর নাচে ঘন দেয়ার তালে
    	দোলা লাগে কেতকী কদম ডালে।
    আকাশে অনুরাগে ইন্দ্রধনু জাগে হেরে ত্রিলোক থির হয়ে রূপ অভিরাম।।
    
  • বনমালার ফুল জোগালি বৃথাই বন-লতা

    বাণী

    বনমালার ফুল জোগালি বৃথাই বন-লতা
    বনের ডালায় কুসুম শুকায়, বনমালি কোথা।।
    	শুকনো পাতার গুনে নূপুর
    	চমকে ওঠে বনে ময়ূর,
    রাস নাই আজ নিরাশ ব্রজে গভীর নীরবতা।।
    যমুনা-জল উজান বেয়ে কদম-তলে আসি’
    ভাটিতে যায় ফিরে, নাহি শু’নে শ্যামের বাঁশি।
    	তমাল-ডালে ঝুলনা আর
    	গোপীরা বাঁধেনি এবার,
    শ্রাবণ এসে কেঁদে শুধায় ঘনশ্যামের কথা।।
    
  • বনে যায় আনন্দ-দুলাল

    বাণী

    বনে যায় আনন্দ-দুলাল
    বাজে চরণে নূপুরের রুনুঝুনু তাল
    বনে যায় গোঠে যায়।
    ও কি নন্দ-দুলাল, ও কি ছন্দ-দুলাল
    ও কি নন্দন-পথ, ভোলা নৃত্য-গোপাল।।
    বেণু-রবে ধেনুগণ আগে যেতে পিছে চায়
    ভক্তের প্রাণ গ'লে উজান বহিয়া যায়
    লুকিয়ে দেখিতে এলো দেবতারি দল (তায়)
    হয়ে কদম তমাল-
    ব্রজ-গোপিকার প্রাণ তার চরণে নূপুর
    শ্রীমতী রাধিকা তার বাশরির সুর।
    সে যে ত্রিলোকের স্বামী তাই ত্রিভঙ্গ-রূপ
    করে বিশ্বের রাখালি সে চির-রাখাল।।
    
  • বরষ গেল আশ্বিন এলো উমা এলো কই

    বাণী

    বরষ গেল, আশ্বিন এলো, উমা এলো কই
    শূন্য ঘরে কেমন করে পরান বেঁধে রই।।
    ‌	ও গিরিরাজ! সবার মেয়ে
    	মায়ের কোলে এলো ধেয়ে,
    আমারই ঘর রইল আঁধার, আমি কি মা নই?
    নাই শাশুড়ি ননদ উমার, আদর করার নাই (কেহ)
    মা অনাদরে কালী সেজে বেড়ায় নাকি তাই।
    	মোর গৌরী বড় অভিমানী,
    	সে বুঝবে না মার প্রাণ-পোড়ানী;
    আনতে তারে সাধতে হবে তার যে স্বভাব ঐ।।
    
  • বর্ণচোরা ঠাকুর এলো রসের নদীয়ায়

    বাণী

    	বর্ণচোরা  ঠাকুর এলো রসের নদীয়ায়
    	তোরা দেখবি যদি আয়
    তারে	কেউ বলে শ্রীমতি রাধা কেউ বলে সে শ্যামরায়।।
    	কেউ বলে তার সোনার অঙ্গে রাধা-কৃষ্ণ খেলেন রঙ্গে;
    ওগো	কেউ বলে তায় গৌর-হরি কেউ অবতার বলে তায়।।
    তার	ভক্ত তারে ষড়ভুজ শ্রী নারায়ণ বলে,
    কেউ	দেখেছে শ্রীবাসের ঘরে কেউ বা নীলাচলে।
    	দুই হাতে তার ধনুর্বাণ ঠিক যেন শ্রীরাম,
    	দুই হাতে তার মোহন বাঁশি যেন রাধা-শ্যাম,
    	আর দু'হাতে দণ্ড ঝুলি নবীন সন্ন্যাসীরই প্রায়।।
    
  • বল দেখি মা নন্দরানী

    বাণী

    	বল দেখি মা নন্দরানী ওগো গোকুলবালা
    (ওমা)	কেমন করে তোদের ঘরে (মা) এলো নন্দলালা।
    	(মা তুই) কোন সাধনায় দধি মথন করে
    	তুললি ননী হৃদয় পাত্র ভরে;
    	তুই সেই নবনি দিয়ে যতন করে
    	(মা তুই) গড়লি কি এই ননীর পুতুল আঁধার চিকনকালা।।
    	অমন রসবিগ্রহ মা গড়তে পারে কে?
    	গোপঝিয়ারি গড়তে পারে কে?
    	গোকুল মেয়ে নস্ তুই মা তুই কুমারের ঝি।
    	(মাগো) তুই নস্ যোগিনী তবু স্বগুণ বলে
    	(মা তুই) শ্রীকৃষ্ণে বাঁধলি উদূখলে
    	(আমায়) সেই যোগ তুই শিখিয়ে দে মা বসেই জপমালা।।
    
  • বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু

    বাণী

    বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু হইব না আর পথহারা
    বন্ধু স্বজন সব ছেড়ে যায় তুমি একা জাগো ধ্রুবতারা।।
    	মায়ারূপী হায় কত স্নেহ-নদী,
    	জড়াইয়া মোরে ছিল নিরবধি,
    সব ছেড়ে গেল, হারাইনু যদি তুমি এসো প্রাণে প্রেমধারা।।
    ভ্রান্ত পথের শ্রান্ত পথিক লুটায় তোমার মন্দিরে,
    প্রভু আরো যদি কিছু আছে মোর প্রিয় লও বাঁচায়ে বন্দীরে।
    	ডাকি' লও মোরে মুক্ত আলোকে
    	তব আনন্দ-নন্দন-লোকে,
    শান্ত হোক এ ক্রন্দন, আর সহে না এ বন্ধন-কারা।।
    
  • ব্যথিত প্রাণে দানো শান্তি

    বাণী

    ব্যথিত প্রাণে দানো শান্তি, চিরন্তন, ধ্রুব-জ্যোতি।
    দুখ-তাপ-পীড়িত-শোকার্ত এই চিত যাচে তব সান্ত্বনা ত্রিভুবন-পতি।।
    বেদনা যাতনা ক্লেশ মুক্ত কর, বিপদ নিবার, সব বিঘ্ন হর,
    আঁধার পথে তুমি হাত ধরো, প্রভু অগতির গতি।।
    সকল গ্লানি হতে হে নাথ বাঁচাও, চিত্তে অটল প্রসন্নতা দাও
    যেন সুখে ও দুখে সদানন্দে থাকি, অবিচল থাকে যেন তব পদে মতি।।
    
  • ব্রজ-দুলাল ঘন শ‍্যাম

    বাণী

    ব্রজ-দুলাল ঘন শ‍্যাম
    মোর হৃদে কর বিহার হে।।
    নব অনুরাগের জ্বালায়ে বাতি
    অঙ্গে অঙ্গে রাখি তব শেজ পাতি’
    গাঁথি অশ্রু-মোতিহার হে।।
    আরতি-প্রদীপ আঁখিতে জ্বালায়ে রাখি
    পথ-পানে চাহি বার বার হে।।
    নিবেদন করি নাথ তব চরণে
    নিত্য পূজা-উপচার হে
    বিরহ-গন্ধ ধূপ বেদনা চন্দন
    পূজাঞ্জলি আঁখি-ধার হে
    দেবতা এসো, খোল দ্বার হে।।