ফের্‌তা

  • গিরিধারী লাল কৃষ্ণ গোপাল

    বাণী

    গিরিধারী লাল কৃষ্ণ গোপাল যুগে যুগে হ’য়ো প্রিয়
    জনমে জনমে বঁধু তব প্রেমে আমারে ঝুরিতে দিও॥
    	তুমি চির চঞ্চল চির পলাতকা
    	প্রেমে বাঁধা প’ড়ে হ’য়ো মোর সখা
    মোর জাতি কুল মান তনু মন প্রাণ হে কিশোর হ’রে নিও॥
    রাধিকার সম কুব্জার সম রুক্সিণী সম মোরে
    গোকুল মথুরা দ্বারকায় নাথ রেখো তব সাথী করে।
    	গোপনে চেয়ো সব শত গোপীকায়
    	চন্দ্রাবলী ও সত্যভামায়
    তেমনি হে নাথ চাহিও আমায় লুকায়ে ভালেবাসিও॥
    
  • ঘরে কে গো বলি ঘরে কে

    বাণী

    [সংলাপঃ পুরুষ: ঘরে কে গো? (দরজায় টোকার শব্দ)
    বলি ঘরে কে? (আবার টোকার শব্দ) শালাজ নাকি —
    ও হো-হো-হো-হো...]
    পুরুষ	:	ঘরে কে গো? বলি ঘরে কে, শালাজ নাকি?
    		এ যে মোর গোয়ালের গাই।
    স্ত্রী	:	ও ছোট ঠাকুর ঝি, ওলো আয় আয়,
    		দেখে যা এসেছে নন্দাই। এ যে মোর ননদের ভাই।
    পুরুষ	:	দেখ, রাত্রি জেগে গুনব কত চালের কড়ি কাঠ
    স্ত্রী	:	তাইতো, আগে হয়নি সারা আমার ঘর কন্নার পাট।
    পুরুষ	:	তোমার কাজের মাথায় মারো লাঠি
    স্ত্রী	:	আমি নিয়ে শীতল পাটি মাস-শাশুড়ির পা টিপিতে যাই।
    পুরুষ	:	ওগো শুনছো! শোনো শোনো শোনো না — সত্যি সত্যি চললে,
    		নতুনতর ঝুমকোর এক নমুনা এনেছি (আমি)।
    স্ত্রী	:	অ্যা, তাই নাকি!
    পুরুষ	:	হ্যা — গো — হ্যা।
    স্ত্রী	:	কাল চাল ডাল বাছবো, চল এই আমি আসিতেছি
    		ওগো এই আমি আসিতেছি
    পুরুষ	:	না না, ও তোমায় পা টিপিতে বলেছিলেন কি ভাবিবেন মাসি
    স্ত্রী	:	আমার গা করছে বমি বমি তাকে বলে আসি।
    পুরুষ	:	এমন শ্যাকরার মত বিন্দে দূতি কলিকালের বৃন্দাবনে নাই॥
    		বেঁচে থাক বাবা শ্যাকরার পো হুল্লোড় ঘটালে তবে ছাড়লে॥
    
  • চাও চাও চাও নব বধূ অবগুণ্ঠন খোলো

    বাণী

    চাও চাও চাও নব বধূ অবগুণ্ঠন খোলো
    আনত নয়ন তোলো॥
    আমি যে ননদী খরতর নদী লজ্জা কি
    লজ্জায় ফুল শয্যায় কাল ছিল না তো নত ওই আঁখি
    সবি বলে দেব যদি বউ কথা না বলো॥
    ‘বউ কথা কও’ ডাকে পাখি
    তবুও নীরব রবে নাকি
    দেখি দেখি গালে লালী ও কিসের? ও! লজ্জায় বুঝি লাল হলো॥
    ও কি অধীর চরণে যেয়ো না যেয়ো না
    আন-ঘরে লুকাইতে দেখে যদি কেউ
    সখি পাশের ও ঘরে মানুষ যে রহে
    তারও অন্তরে বহে বিরহের ঢেউ।
    লজ্জাই যদি তব ভূষণ সজ্জায় তবে কি প্রয়োজন?
    সুখে সুখী হব দুখে দুখী ব’সো মুখোমুখি লাজ ভোলো।
    

    নাটিকাঃ ‘বিয়ে বাড়ি’

  • চাঁদের পিয়ালাতে আজি

    বাণী

    চাঁদের পিয়ালাতে আজি জোছনা-শিরাজি ঝরে।
    ঝিমায় নেশায় নিশীথিনী সে-শরাব পান ক’রে।।
    	সবুজ বনের জল্‌সাতে
    	তৃণের গালিচা পাতে,
    উতল হাওয়া বিলায় আতর চাঁপার আতরদানি ভ’রে।।
    সাদা মেঘের গোলাব-পাশে ঝরিছে গোলাব-পানি,
    রজনীগন্ধার গেলাসে রজনী দেয় সুরা আনি’।
    	কোয়েলিয়া কুহু কুহু
    	গাহে গজল মুহু মুহু,
    সুরের নেশা সুরার নেশা লাগে আজি চরাচরে।।
    
  • চাঁপার কলির তুলিকায় কাজল লেখায়

    বাণী

    চাঁপার কলির তুলিকায়, কাজল লেখায় শ্রীমতী শ্রীহরির ছবি আঁকে।
    রাই ছবি আঁকে পটে গো, যারে হেরে নিতি গোঠে যেতে
    যমুনার তটে গো, সে বংশী বাজায়ে মঞ্জির পায়ে
    নাচে ছায়া বটে গো, রাই ছবি আঁকে পটে গো।
    আঁকিয়া শ‍্যামের মূরতি আঁকিল না রাধা শ্রীচরণ ,
    রাধা চরণ আঁকে না, তুলি তুলিয়া রাখে চরণ আঁকে না।
    তখন ললিতা বলে- ‘রাধা! রাধা! রাধা!
    তুই আঁকলি না কেন চরণ রাধা!’
    ‘জীবন মরণ যে চরণে বাঁধা, আঁকলি না কেন চরণ রাধা —
    বিশ্বের ত্রাণ বৃন্দাবনের ধ‍্যানজ্ঞান ব্রজগোপী সাধা’ —
    ‘আঁকলি না কেন চরণ রাধা’ —!
    তখন রাধা কেঁদে বলে- ‘ওগো ললিতা —
    সখি আঁকিলে চরণ যাবে সে পালায়ে আমি হব পদদলিতা।
    পলায়ে যাবে গো মথুরায়, আবার পালায়ে যাবে গো —
    চির চপল সে মথুরায় আবার পালায়ে যাবে গো —
    থাক লুকানো হৃদয়ে শ্রীচরণ।’
    
  • ছি ছি ছি কিশোর হরি

    বাণী

    ছি ছি ছি কিশোর হরি, হেরিয়া লাজে মরি
    সেজেছ এ কোন রাজ সাজে
    যেন সঙ্ সেজেছ, হরি হে যেন সঙ্‌ সেজেছ —
    ফাগ মুছে তুমি পাপ বেঁধেছ হরি হে যেন সঙ্ সেজেছ;
    সংসারে তুমি সঙ্ সাজায়ে নিজেই এবার সঙ্ সেজেছ।
    বামে শোভিত তব মধুরা গোপিনী নব
    সেথা মথুরার কুবুজা বিরাজে।
    মিলেছে ভাল, বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল,
    ত্রিভঙ্গ অঙ্গে কুবুজা সঙ্গে বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল।
    হরি ভাল লাগিল না বুঝি হৃদয়-আসন
    তাই সিংহাসনে তব মজিয়াছে মন
    প্রেম ব্রজধাম ছেড়ে নেমে এলে কামরূপ
    হরি, এতদিনে বুঝিলাম তোমার স্বরূপ
    তব স্বরূপ বুঝি না হে
    গোপাল রূপ ফেলে ভূপাল রূপ নিলে স্বরূপ বুঝি না হে।
    হরি মোহন মুরলী কে হরি’ নিল
    কুসুম কোমল হাতে এমন নিঠুর রাজদন্ড দিল
    মোহন মুরলী কে হরি।
    দন্ড দিল কে, রাধারে কাঁদালে বলে দন্ড দিল কে
    দন্ডবৎ করি শুধাই শ্রীহরি দন্ড দিল কে
    রাঙা চরণ মুড়েছে কে সোনার জরিতে 
    খুলে রেখে মধুর নূপুর, হরি হে খুলে রেখে মধুর নূপুর।
    হেথা সবাই কি কালা গো ?
    কারুর কি কান নাই নূপুর কি শোনে নাই, সবাই কাল গো
    কালায় পেয়ে হল হেথায় সবাই কি কালা গো।
    তব এ রূপ দেখিতে নারি, হরি আমি ব্রজনারী,
    ফিরে চল তব মধুপুর
    সেথা সকলি যে মধুময়, অন্তরে মধু বাহিরে মধু
    সেথা সকলি যে মধুময় — ফিরে চল হরি মধুপুর।
    
  • জগতে আজিকে যারা

    বাণী

    জগতে আজিকে যারা
    আগে চলে ভয়-হারা
    ডেকে যায় আজি তারা,
    		চল্‌ রে সুমুখে চল।
    পিছু পানে চেয়ে’ মিছে
    প’ড়ে আছি সব নীচে,
    চাস্‌নে রে তোরা পিছে
    		অগ্র-পথিক দল।।
    চলার বেগে উঠবে জেগে বনে নূতন পথ
    বর্তমানের পানে মোদের চল্‌বে অরুণ-রথ,
    অতীত আজি পতিত রে ভাই, রচ্‌ব ভবিষ্যৎ।
    স্বর্গ মোরা আন্‌ব, না হয় যাব রসাতল।।
    	রইব না পিছে প’ড়ে
    	অতীতের কঙ্কাল ধ’রে,
    বইবে নব জীবন-স্রোত যৌবন-চঞ্চল।
    বিশ্ব-সভাঙ্গনে সকল জাতির সনে
    বসিব সম-আসনে গৌরব-উজ্জ্বল।।
    
  • জয় হরপ্রিয়া শিবরঞ্জনী

    বাণী

    জয় হরপ্রিয়া শিবরঞ্জনী।
    শিব-জটা হতে সুরধুনী স্রোতে ঝরি’ শতধারে ভাসাও অবনি।
    দিবা দ্বিপ্রহরে প্রথম বেলা কাফি-সিন্ধুর তীরে কর খেলা
    দীপ্ত নিদাঘে সারঙ্গ রাগে অগ্নি ছড়ায় তব জটাব ফণী॥
    কভু ধানশ্রীতে মায়া রূপ ধর,
    জ্ঞানী শিবের তেজ কোমল কর
    পিলু বারোঁয়ার বিষাদ ভোলানো
    নূপুরের চটুল ছন্দ আনো
    বাগীশ্বরী হ’য়ে মহিমা শান্তি ল’য়ে
    আসো গভীর যবে হয় রজনী॥
    বরষার মল্লারে মেঘে তুমি আসো,
    অশনিতে চমকাও, বিদ্যুতে হাসো
    সপ্ত সুরের রঙে সুরঞ্জিতা ইন্দ্রধনু-বরণী॥
    
  • ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান

    বাণী

    ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান, ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে।
    জাগো জাগো তন্দ্রা-অলস রে, সাজো সাজো রণ-সাজে।।
    দিকে দিকে ওঠে গান, অভিযান অভিযান!
    আগুয়ান আগুয়ান হও ওরে আগুয়ান
    ফুটায়ে মরুতে ফুল-ফসল।
    জড়ের মতন বেঁচে কি ফল? কে র’বি প’ড়ে লাজে।।
    বহে স্রোত জীবন-নদীর, চল চঞ্চল অধীর,
    তাহে ভাসিবি কে আয়, দূর সাগর ডেকে যায়।
    হ’বি মৃত্যু-পাথার পার, সেথা অনন্ত প্রাণ বিরাজে।।
    	পাঁওদল্‌ রণে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
    	পাঁওদল আগে চল্‌, চল্‌ রণে চল্‌
    মরুতে ফোটাতে পারে ওই পদতল প্রাণ-শতদল।
    	বিঘ্ন-বিপদে করি’ সহায়
    	না-জানা পথের যাত্রী আয়,
    স্থান দিতে হবে আজি সবায়, বিশ্ব-সভা-মাঝে।।
    
  • ঝাঁপিয়া অঞ্চলে কেন বিধুবদন অবনত

    বাণী

    ঝাঁপিয়া অঞ্চলে কেন বিধুবদন অবনত কাঁদে নয়ান।
    অভিমান পরিহর হরি-হৃদি বিহারিণী প্রেম দিয়া জুড়াও এ প্রাণ।
    তুয়া বিনা নয়নে অন্যে না হেরি
    একই রাধা আছে ত্রিভুবন ঘেরি’
    (আমি রাধা ছাড়া জানি’ না
    অনন্ত বিশ্বে রাধারই রূপধারা,
    রাধা ছাড়া দেখি না)
    ভৃঙ্গার ভরি’ তুমি শৃঙ্গার রস
    করাও পান, তাই হই যে অবশ।।
    তুমি রাধা হয়ে মধু দিলে মাধব হই,
    তুমি ধারা হয়ে নামিলে সৃষ্টিতে রই
    রাধা, সকলি তোমার খেলা
    তবে কেন কর অভিমান, কেন কর হেলা।
    প্রতি দেহ-বিম্বে তোরি
    পদতলে হর হয়ে রহি তাই ছবি।
    হরিরত হর-জ্ঞান মহামায়া হরিলী
    (এ যে) তোমারই ইচ্ছা, আমি নিজে নিজে রূপ ধরিণী।
    ভোল মানের খেলা
    দূরে থেকোনা, দাও চরণ ভেলা
    আমি তরে’ যাই, তরে’ যাই
    রাধা-প্রেম যমুনায় ডুবিয়া মরে’ যাই।।
    

    পাঠান্তর : রেকর্ডের জন্য কবি এই গানটির বহু অংশ বর্জন করেন।বর্জিত অংশগুলো এই:
    গলে দিয়া পীতধড়া গো, পদতলে দিয়া শিখী-চূড়া গো
    পদযুগ ধরিয়া চাহি ক্ষমা, ক্ষম অপরাধ প্রিয়তমা!
    হরি-মনোরমা ক্ষমা কর গো।।
    তব প্রেমে অবগাহন করি সব দাহন চিরতরে জুড়াব
    কল্প-কদম-তরু-তলে চিরদিন তোমার প্রেম-কণা কেশর কুড়াব।।

  • টলমল টলমল পদভরে

    বাণী

    টলমল টলমল পদভরে
    বীরদল চলে সমরে॥
    খরধার তরবার কটিতে দোলে
    রণন ঝনন রণ-ডঙ্কা বোলে
    ঘন তূর্য-রোলে শোক-মৃত্যু ভোলে
    দেয় আশিস সূর্য সহস্র করে॥
    চলে শ্রান্ত দূর-পথে মরু দুর্গম পর্বতে
    চলে বন্ধুবিহীন একা, মোছে রক্তে ললাট-কলঙ্ক-লেখা।
    কাঁপে মন্দিরে ভৈরবী -  এ কি বলিদান!
    জাগে নিঃশঙ্ক শঙ্কর ত্যজিয়া শ্মশান!
    দোলে ঈশান মেঘে কাল প্রলয় নিশান!
    বাজে ডম্বরু, অম্বর কাঁপিছে ডরে॥
    
  • টিকি আর টুপিতে লেগেছে দ্বন্দ্ব

    বাণী

    টিকি আর টুপিতে লেগেছে দ্বন্দ্ব বচন যুদ্ধ ঘোর
    কে বড় কে ছোট চাই মীমাংসা, কার আছে কর-জোর॥
    টিকি বলে শিরে আমি বিরাজিলে হয় আহা কিবা শোভা।
    যেন প্রকান্ড কুষ্মান্ডের বৃন্তটি মনোলোভা।
    এ যে চতুর্বর্গ ফলেরি বোঁটা।
    শুনে টুপি ফিক্ ক’রে হেসে বল্লেঃ ‘ভায়া, শিরে বিরাজ করবার
    শোভার কথা যদি বল তো ও বড়াই আমারি মুখে মানায়,
    ও বড়াই আমার মুখে মানায়।’
    আমি বাঁকা হয়ে যবে শিরে বসি, দেখে বিবিরা মূর্ছা যায়॥
    টিকি বলে, মোরে বলে চৈতন্ কভু বা আর্কফলা
    আর আমারি প্রসাদে প্রণামীটা মেলে দুটি বেলা চাল-কলা॥
    (মেলে দাদা) দুটি বেলা চাল-কলা॥
    [শুনে বাদশাহী চালে টুপি বল্লেঃ ‘আরে তোবা তোবা
    চাল আর কলা? ওসব আবার খাদ্য নাকি হে? এ্যাঁ?]
    বাদশাহী চালে টুপি বলে ওসব খাদ্য নাকি?
    দেখো, আমারি দোয়ায়, আহা তোফা জুটে যায়, গোস্ত ও রামপাখি।
    টিকি বলে মিয়া, আমার কৃপায় স্বর্গে free pass মেলে
    (আর) আমারঃ through দিয়ে মগজে বুদ্ধি electricity খেলে
    মিয়া আমার কৃপায় স্বর্গে free pass মেলে।
    এ যে পারে যাবার টিকিট - শুধু টিকিট নয়।
    [শুনে টুপি রেগে কাঁই, বল্লেঃ]
    বেহেশ্‌তে মোর একচেটে অধিকার
    কাফেরের তরে no admission খোদার ইস্তাহার।
    (এই রূপে) ক্রমশঃ তর্ক বাড়িল ভীষণ বচনে বেজায় দড়,
    এ উহারে কয় মোর ঠাঁই উঁচু তুমি বাপু স’রে পড়॥
    সহসা মুন্ড ছিন্ন হইল শক্র কৃপাণ ঘায়।
    টুপি আর টিকি একই সঙ্গে ভূঁয়ে গড়াগড়ি যায়॥
    
  • তুমি এলে কে গো চির-সাথী অবেলাতে

    বাণী

    তুমি	এলে কে গো চির-সাথী অবেলাতে
    যবে	ঝুরিছে সন্ধ্যামণি আঙিনাতে।
    ওগো	কে এলে গো চির-সাথী অবেলাতে।।
    	রোদের দাহে এলে স্নিগ্ধ-বাস ফুল-রেণু
    	নিঝুম প্রাণে এলে বাজায়ে ব্যাকুল বেণু
    ওগো	চাঁদের তিলক এলে আঁধার রাতে।
    ওগো	কে এলে গো চির-সাথী অবেলাতে।।
    	ফুল ঝরার বেলা এলে মোর শেষ অতিথি
    	কাঁদে হা হা স্বরে রিক্ত কানন-বীথি।
    	এলে রে মরুভূমে পিয়াসি চকোর মোর
    	শুক্লাতিথির শেষে কাঁদিতে এলে চকোর।
    (তুমি)	আসিলে জীবন-সাঁঝে ঘুম ভাঙাতে।
    ওগো	কে এলে গো চির সাথী অবেলাতে।।
    

  • তুমি কি নিশীথ-চাঁদ ভাঙাতে ঘুম

    বাণী

    স্ত্রী	:	তুমি কি নিশীথ-চাঁদ ভাঙাতে ঘুম
    		চুপি চুপি আসিলে বাতায়নে।
    পুরুষ	:	তুমি কি গো বন-দেবী পুষ্প-শোভিতা
    		চেয়ে আছ কোন দূরে আনমনে।।
    স্ত্রী	:	তোমারে হেরিয়া ফোটে মালতী হেনা
    		হে চির চেনা
    পুরুষ	:	সুদুর বনান্তে সমীরণ হেরি' তোমায় হ'লো অধীর
    		পাপিয়া ডাকে বকুল বনে।।
    স্ত্রী	:	তব কলঙ্ক অধিক মধুর লাগে হে কলঙ্কী চাঁদ,
    		তোমারে হেরিয়া যত সাধ জাগে প্রাণে জাগে তত অবসাদ।
    পুরুষ	:	তোমার ছায়া প'ড়ে মোর আননে
    		কলঙ্কী নাম হলো মোর এই ভুবনে।
    উভয়ে	:	আকাশের চাঁদে কুমুদ ফুলে
    		মিলন হ'লো ধরার ভুলে
    		অশ্রুসায়রে সঙ্গোপনে।।
    

  • তোমায় দেখি নিতুই চেয়ে চেয়ে

    বাণী

    স্ত্রী	:	তোমায় দেখি নিতুই চেয়ে চেয়ে
    		ওগো অচেনা বিদেশি নেয়ে॥
    পুরুষ	:	যেতে এই পথে তরী বেয়ে
    		দেখি নদীর ধারে তোমায় বারে বারে
    		সজল কাজল বরণী মেয়ে॥
    স্ত্রী	:	তোমার তরণীর আসার আশায়
    		বসে থাকি কূলে কলস ভেসে যায়।
    পুরুষ	:	তুমি পরো যে শাড়ি ভিন গাঁয়ের নারী
    		আমি নাও বেয়ে যাই তারি সারি গান গেয়ে।
    স্ত্রী	:	গাগরির গলায় মালা জড়ায়ে
    		দিই তোমার তরে বঁধু স্রোতে ভাসায়ে॥
    পুরুষ	:	সেই মালা চাহি’, নিতি এই পথে গো
    		আমি তরী বাহি।
    উভয়ে	:	মোরা এক তরীতে একই নদীর স্রোতে
    		যাব অকূলে ধেয়ে॥
    
  • তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত

    বাণী

    তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত।
    যত চাহি তত কাঁদি, আমার মেটে না হসরত।।
    কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্
    নয়নে মোর নাই তবু নিন্দ
    প্রাণে শুধু জাগে (তোমার) মদিনার ঐ পথ।।
    কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগে
    আছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার অনুরাগে।
    মোর অন্তরের হেরা গুহায়
    আজো তোমার ডাক শোনা যায়
    জাগে আমার মনের কাবা ঘরে তোমারি সুরত —
    	হজরত তোমারি সুরত।।
    যারা দোজখ হতে ত্রাণের তরে তোমায় ভালোবাসে
    আমার এ প্রেম দেখে তারা কেউ কাঁদে কেউ হাসে।
    তুমি জান হে মোর স্বামী, শাফায়াৎ চাহি না আমি
    আমি শুধু তোমায় চাহি তোমার মুহব্বত
    	হজরত তোমার মুহব্বত।।
    
  • তোমার সজল চোখে লেখা মধুর গজল

    বাণী

    তোমার সজল চোখে লেখা মধুর গজল গান।
    চেয়ে চেয়ে তাই দেখে গো আমার দু’নয়ান।।
    	আমার পুঁথির আখর যত
    	তোমার মালার মোতির মত,
    তাই দেখি আর পাঠ ভুলে যাই, আকুল করে প্রাণ।।
    যেমন	বুলবুলি আর রঙিন গোলাব
    	লায়লী-মজনু দুইজনে ভাব,
    ওদের প্রেমে ধূলির ধরা হল গুলিস্তান।।
    

    নাটিকা: ‘লায়লী-মজনু’

  • তোমারে চেয়েছি কত যুগ যুগ ধরি প্রিয়া

    বাণী

    পুরুষ	:	তোমারে চেয়েছি কত যুগ যুগ ধরি প্রিয়া।
    স্ত্রী	:	এসেছি তাই ফিরে পুন পথিকের প্রীতি নিয়া॥
    পুরুষ	:	তোমার নয়নে তাই চাহি ফিরে ফিরে,
    স্ত্রী	:	হের তব ছবি প্রিয় মোর আঁখি নীরে।
    উভয়ে	:	কত জনম শেষে এসেছি ধরণী তীরে
    		কার অভিশাপে ছিনু হায় চির পাশরিয়া॥
    স্ত্রী	:	আরো প্রিয় আরো হাতে এ নব বাসর রাতে,
    পুরুষ	:	যেয়ো না স্বপন সম মিশায়ে নিশীথ প্রাতে।
    স্ত্রী	:	তারার দীপালি জ্বলে হের গো গগন তলে
    পুরুষ	:	হের শুক্লা একাদশী চাঁদের তরণী দোলে,
    উভয়ে	:	মোদের মিলন হেরি নিখিল ওঠে দুলিয়া॥
    
  • তোরা বলিস্ লো সখি মাধবে মথুরায়

    বাণী

    তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায়
    কেমনে রাধার কাঁদিয়া বরষ যায়॥
    খর-বৈশাখে কি দাহন থাকে বিরহিণী একা জানে
    ঘৃত-চন্দন পদ্ম পাতায় দারুণ দহন-জ্বালা না জুড়ায়
    ‘ফটিক জলে’র সাথে আমি কাঁদি চাহিয়া গগন-পানে।
    জ্বালা না জুড়ায় গো —
    হরি-চন্দন বিনা ঘৃত-চন্দনে জ্বালা না জুড়ায় গো
    শ্যাম-শ্রীমুখ-পদ্ম বিনা পদ্ম পাতায় জ্বালা না জুড়ায়॥
    বরষায় অবিরল ঝর ঝর ঝরে জল জুড়াইল জগতের নারী
    রাধার গলার মালা হইল বিজলি-জ্বালা তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি!
    সখি রে, তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি।
    প্রবাসে না যায় পতি সব নারী ভাগ্যবতী বন্ধু রে বাহুডোরে বাঁধে
    ললাটে কাঁকন হানি’ একা রাধা অভাগিনী প্রদীপ নিভায়ে ঘরে কাঁদে।
    জ্বালা তা’র জুড়ালো না জলে গো
    শাওনের জলে তা’র মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে গো
    কৃষ্ণ-মেঘ গেছে চ’লে, অকরুণ অশনি হানিয়া হিয়ায় (সখি)॥
    আশ্বিনে পরবাসী প্রিয় এলো ঘরে গো মিটিল বধূর মন-সাধ (সখি রে)
    রাধার চোখের জলে মলিন হইয়া যায় কোজাগরী চাঁদ (মলিন হইয়া যায় গো)।
    আগুন জ্বালালে শীত যায় নাকি রাধার কি হ’ল হায়
    বুক ভরা তার জ্বলিছে আগুন তবু শীত নাহি যায়।
    যায় না, যায় না আগুন জ্বলে —
    বুকের আগুন জলে, তবু শীত যায় না, যায় না,
    শীত যদি বা যায় নিশীথ না, যায় গো
    যায় না, যায় না, রাধার যে কি হ’ল হায়॥
    কলিয়া কৃষ্ণ-ছূড়া, ছড়ায়ে ফাগের গুঁড়া আসিল বসন্ত
    রাধা-অনুরাগে রেঙে কে ফাগ খেলিবে গো, নাই ব্রজ-কিশোর দুরন্ত।
    মাধবী-কুঞ্জে কুহু কুহরিছে মুহুমুহু ফুল-দোলনায় সবে দোলে,
    এ মধু মাধবী রাতে রাধার মাধব নাই
    দুলিবে রাধা কার কোলে সখি রে —  রাধা দোলে কার কোলে গো
    শ্যাম-বল্লভ বিনা রাধা দোলে কার কোলে গো, বল্ সখি, দোলে কার কোলে।
    ফুল-দোলে দোলে সবে পিয়াল-শাখে
    রাধার প্রিয়া নাই, বাহু দু’টি দিয়া বাঁধিবে কাহাকে,
    ঝরা-ফুল-সাথে রাধা ধূলাতে লুটায়॥
    
  • ত্রিজগত আলো করে আছে

    বাণী

    	ত্রিজগত আলো করে আছে কালো মেয়ের পায়ের শোভা।
    	মহাভাবে বিভোর শঙ্কর, ঐ পা জড়িয়ে মনোলোভা।।
    	দলে দলে গগন বেয়ে গ্রহ তারা এলো ধেয়ে,
    ঐ	চরণ শোভা দেখবে বলে, ঐ পায়ের নূপুর হওয়ার ছলে
    সেই	শোভা কেমন বলতে গিয়ে ব্রহ্ম হলো চিরমৌনী বোবা।।
    ঐ	চরণ শোভা দেখার তরে, যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে
    	ত্রিভুবন ভুলে অনন্তকাল যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে।
    	ও শুধু চরণ শোভা নয়, ঐ যে পরব্রহ্ম জ্যোতি
    	শ্রী চণ্ডী বেদ পুরাণে ওরই প্রেম-আরতি
    মা	দেখ্‌ত যদি নিজের চরণ নিজেই দিত বিল্বজবা
    	আপনার ঐ রাঙা পায়ে নিজেই দিত বিল্বজবা।।