ত্রিতাল

  • এ ঘোর শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে

    বাণী

    এ ঘোর শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে।
    রহি’ রহি’ সেই মুখ পড়িছে মনে।।
    	বিজলিতে সেই আঁখি
    	চমকিছে থাকি’ থাকি’
    শিহরিত এমনি সে বাহু-বাঁধনে।।
    শন শন বহে বায় সে কোথায় সে কোথায়
    নাহি নাহি ধ্বনি শুনি উতল পবনে হায়
    চরাচর দুলিছে অসীম রোদনে।।
    

  • এই দেশ কার তোর নহে আর

    বাণী

    এই দেশ কার? তোর নহে আর, রে মূঢ় সন্তান! ভারত-মাতার।
    দেবতার দেশে আজ দৈত্য করে বিরাজ, মন্দির আজি বন্দীর কারাগার।।
    লাজ নাহি তার, যার জননী দাসী
    দাসের শিকল প’রে (কেমনে নিলাজ) বেড়াস্ হাসি’?
    	অসম্মানের প্রাণ
    	ক’রে দে রে অবসান,
    মানুষের মত ম’রে বাঁচ রে আবার।।
    
  • একি অসীম পিয়াসা

    বাণী

    একি অসীম পিয়াসা
    শত জনম গেল তবু মিটিল না
    	তোমারে পাওয়ার আশা।।
    সাগর চাহিয়া চাঁদে চির জনম কাঁদে
    তেমনি যত নাহি পায় তোমা পানে ধায়
    		অসীম ভালোবাসা।।
    তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন
    সেই জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন
    তোমার স্মৃতি তার মরণের সাথি হয়
    	মেটে না প্রেমের পিয়াসা।।
    
  • এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা

    বাণী

    এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।।
    দাদুরি পাপিয়া চাতকী বোলে নব জলধারা-হরষা।।
    	নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা
    	খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
    চলে যেতে ঢ’লে পড়ে অভিসারে চপল যৌবন-মদ অলসা।।
    	একা কেতকী বনে কেকা কুহরে,
    	বহে পূব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।
    	দুরন্ত ঝড়ে কোন্ অশান্ত চাহি রে
    	ঘরে নাহি রহে মন, যেতে চায় বাহিরে,
    যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে শ্রাবণ-ঘন-তমসা।।
    
  • এস হে সজল শ্যাম ঘন দেয়া

    বাণী

    এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া 
    বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে 
    এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া।। 
    বারিধারে এসো চারিধার ভাসায়ে 
    বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দশদিক হাসায়ে 
    বিরহী মনে জ্বালায়ে আশার আলেয়া 
    ঘন দেয়া, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া।। 
    শ্রাবণ বরিষণ হরষণ ঘনায়ে 
    এসো নব ঘন শ্যাম নূপুর শুনায়ে। 
    হিজল তমাল ডালে ঝুলন ঝুলায়ে 
    তাপিতা ধরার চোখে অঞ্জন বুলায়ে 
    যমুনা স্রোতে ভাসায়ে প্রেমের খেয়া 
    ঘন দেয়া, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া।। 
    
  • এসেছি তব দ্বারে ভক্তি-শূন্য প্রাণে

    বাণী

    এসেছি তব দ্বারে ভক্তি-শূন্য প্রাণে।
    করুণাময় প্রভু! কর হে পূর্ণ দানে।।
    শক্‌তি বিহীন করে ধরেছি নিশান তব
    বহিতে পারি যেন দিও সে-গৌরব,
    দিবাকর কর সম ছড়ায়ে অভিনব
    অস্তে যাই যেন জীবন-বিহানে।।
    সাঁঝের আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ সম
    রাঙায়ো আঁধার হৃদি-প্রেমের জোছনা বানে।।
    
  • এসো কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী

    বাণী

    এসো কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী।
    তব নির্মল করে ভবন-প্রদীপ জ্বালো জ্বালো জ্বালো সতী।।
    মঙ্গল-শঙ্খ বাজাও বাজাও সুমঙ্গলা
    সকল অকল্যাণ সকল অমঙ্গল কর দূর (শুভ) সমুজ্জ্বলা!
    এ মাটির কুটিরে দূর আকাশের অরুন্ধতী।।
    এসো লক্ষ্মী গৃহের আঁকো অঙ্গনে মঙ্গল আল্‌পনা
    তব পুণ্য-পরশ দিয়ে ধূলি-মুঠিরে কর গো সোনা,
    তুমি দেবতার শুভ বর মূর্তিমতী।।
    স্নান-শুদ্ধা তুমি পূজা-দেউলে যবে কর আরতি,
    আনত আকাশ যেন তব চরণে করে প্রণতি।
    	তব কুণ্ঠিত গুণ্ঠন-তলে
    	চির শান্তির ধ্রবতারা জ্বলে,
    সংসার অরণ্যে ধ্যান-মগ্না তুমি তপতী।।
    
  • এসো প্রিয় আরো কাছে

    বাণী

    এস প্রিয় আরো কাছে
    পাইতে হৃদয়ে এ বিরহী মন যাচে।।
    দেখাও প্রিয় ঘন
    ও রূপ মোহন
    যে রূপে প্রেমাবেশে পরান নাচে।।
    
  • এসো মা দশভুজা

    বাণী

    এসো মা দশভুজা
    দশহাতে কল্যাণ আন দশভুজা
    মৃত্যুঞ্জয় ঘরনী! মৃতজনে অমৃত দান।
    নিরাশ প্রাণে দাও আশা
    মূকজনে দাও ভাষা
    আঁধার মহিষাসুর বুকে আলোর ত্রিশূল হান॥
    দেও জয় বরাভয়, শক্তি, তেজ, প্রেম, প্রীতি
    দনুজদলনী! শাপ মুক্ত কর ক্ষিতি,
    এলে যদি আর বার মাগো
    ভক্তের হৃদি মাঝে জাগো
    দুঃখ শোক আর দিও না গো 
    		তারিণী সন্তানে ত্রাণ॥
    
  • ওমা দনুজ-দলনী মহাশক্তি

    বাণী

    ওমা দনুজ-দলনী মহাশক্তি নমো অনন্ত কল্যাণ-দাত্রী (নমো)।
    পরমেশ্বরী মহিষ-মর্দিনী চরাচর-বিশ্ব-বিধাত্রী (নমো নমঃ)।।
    		সর্বদেব-দেবী তেজোময়ী
    		অশিব-অকল্যাণ-অসুর-জয়ী,
    দশভুজা তুমি মা, ভীতজন-তারিণী জননী জগৎ-ধাত্রী।।
    দীনতা ভীরুতা লাজ গ্লানি ঘুচাও, দলন কর মা লোভ দানবে;
    রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও, মান দাও, দেবতা কর ভীরু মানবে।
    		শক্তি বিভব দাও, দাও মা আলোক
    		দুঃখ-দারিদ্র্য অপগত হোক্‌,
    জীবে জীবে হিংসা, এই সংশয় (মাগো) দূর হোক পোহাক এ দুর্যোগ রাত্রি।।
    
  • ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না

    বাণী

    ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না।
    মরা ফুলের সাথে ঝরিল যে ধূলি-পথে —
    সে আর জাগিবে না, তারে ডাকিও না।।
    তাপসিনী-সম তোমারি ধ্যানে
    সে চেয়েছিল তব পথের পানে,
    জীবনে যাহার মুছিলে না আঁখি ধার আজি তাহার পাশে কাঁদিও না।।
    মরণের কোলে সে গভীর শান্তিতে পড়েছে ঘুমায়ে,
    তোমারি তরে গাঁথা শুকানো মালিকা বক্ষে জড়ায়ে
    যে মরিয়া জুড়ায়েছে, ঘুমাইতে দাও তারে জাগিও না।।
    

  • কত যুগ পাই নাই তোমার দেখা

    বাণী

    কত যুগ পাই নাই তোমার দেখা
    থাকিতে পারি না আর একা একা।।
    	জানি না কোথায় থাকো
    	সেথায় আমারে ডাকো
    মুছে এলো বুকে বঁধু স্মৃতির রেখা।।
    তুমি জলধি, তোমাতে মিশে শতেক নদী
    আম রুদ্ধ-সায়র কাঁদি নিরবধি।
    	দেখা কি পাব না হায়
    	আশা যে ফুরায়ে যায়
    শ্রাবণে এলো গো মেঘ, কাঁদিছে কেকা।।
    

  • কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই

    বাণী

    উভয়ে : 	কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই সুদূর বিমানে আমরা দু’জনে।
    		কানন-কান্তর শিহরি’ ওঠে মোদের প্রণয়-মদির কূজনে।।
    স্ত্রী 	:	ভ্রমর গুঞ্জে মঞ্জুল গীতি, হেরিয়া আমার বঁধূর প্রীতি,
    পুরুষ :	আমার প্রিয়ার নয়নে চাহি’ কুসুম ফুটে ওঠে বিপিনে বিজনে।।
    স্ত্রী 	:	তোমা ছাড়া স্বর্গ চাহি না, প্রিয়!
    		মোদের প্রেমে চাঁদ আসে নেমে মাটির পাত্রে পান করি অমিয়।।
    পুরুষ :	বিশ্ব ভুলায়ে ও-রাঙা পায়ে আমারে বেঁধেছে জীবনে মরণে।।
    
  • কাবেরী নদী–জলে কে গো বালিকা

    বাণী

    কাবেরী নদী-জলে কে গো বালিকা
    আনমনে ভাসাও চম্পা-শেফালিকা।।
    প্রভাত-সিনানে আসি আলসে
    কঙ্কন-তাল হানো কলসে
    খেলে সমীরণ ল’য়ে কবরীর মালিকা।।
    দিগন্তে অনুরাগ নবারুণ জাগে
    তব জল ঢল ঢল করুণা মাগে।
    ঝিলাম, রেবা নদী তীরে,
    মেঘদূত বুঝি খুঁজে ফিরে
    তোমারেই তন্বী শ্যামা কর্ণাটিকা।।
    
  • কার অনুরাগে শ্রী-মুখ উজ্জ্বল

    বাণী

    কার অনুরাগে শ্রী-মুখ উজ্জ্বল!
    কার সঙ্গে মধুনিশি যাপিলে চঞ্চল।।
    	তব আঁখি মনোহর
    	যুগল নিষাদ শর,
    প্রখর সে-আঁখি কেন সকরুণ ছলছল।।
    যে পায়ের নূপুর শুনি’ কুহু পঞ্চমে বোলে,
    হে নিপট, চঞ্চল সে-পা কেন নাহি চলে।
    	কোন্ ধনি দিল বঁধূ
    	সুর-গরল মধু,
    কোন্ সুধা মাগি’ রস-নিধি হইলে বিফল।।
    
  • কি দিয়ে পূজি ভগবান

    বাণী

    	কি দিয়ে পূজি ভগবান!
    আমার ব’লে কিছু নাহি হরি সকলি তোমারি যে দান
    	মন্দিরে তুমি, মূরতিতে তুমি
    	পূজার ফুলে তুমি, স্তব-গীতে তুমি,
    ভগবান দিয়ে ভগবান পূজা করিতে — তুমি যদি ভাব অপমান॥
    	কেমন তব রূপ দেখিনি হরি
    	আপন মন দিয়ে তোমারে গড়ি,
    কাঁদ না হাস তুমি সে-রূপ হেরি — বুঝিতে পারি না আমি তাই কাঁদে প্রাণ॥
    	কোটি রবি-শশী আরতি করে যারে,
    	প্রদীপ জ্বালিয়া খুঁজি আমি তারে।
    বন-ডালা যাঁর পূজার সম্ভার, যোগী মুনি করে যুগযুগ ধ্যান।
    কোথা শ্রীমুখ তব কোথা শ্রীচরণ, চন্দন দিব কোন্‌খান ॥
    
  • কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া

    বাণী

    কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
    কুহরিল মহুয়া-বনে
    চমকি জাগিনু নিশীথ শয়নে।।
    শূন্য ভবনে মৃদুল সমীরে
    প্রদীপের শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে
    চরণ-চিহ্ন রাখি দলিত কুসুমে
    	চলিয়া গেছ তুমি দূর-বিজনে।।
    বাহিরে ঝরে ফুল আমি ঝুরি ঘরে
    বেণু-বনে সমীরণ হাহাকার করে
    ব’লে যাও কেন গেলে এমন ক’রে
    	কিছু নাহি ব’লে সহসা গোপনে।।
    
  • কেন মনে জাগে উদাসিনী গৌরী

    বাণী

    কেন	মনে জাগে উদাসিনী গৌরী উমার স্মৃতি!
    আর	কত দূরে কত দেরি আনন্দময়ীর আসার তিথি।।
    	কেন	পদ্মদীঘি দুলে ওঠে হৃদয়ে
    	মোর	নন্দিনী মা আসে কি রাঙা চরণ ল’য়ে?
    কেন	নয়নের বাতায়নে উতলা হ’ল, অশ্রুর ভ্রমর-বীথি।।
    	তার মন নাই, উন্মনা চিন্ময়ী সে, তাই ছেলের কথা মনে নাই,
    	শারদ-শ্রী এলো, পরমা-শ্রী কই — কাঁদি আর পথ-পানে চাই।
    	ওকি	ঘরে এসে, নাম ধরে, ডেকে চ’লে যায়
    		শিউলির অঞ্জলি ফেলে আঙিনায়,
    	ভোরের ভৈরবী বুকে মোর কাঁদে গো, ওকি তার করুণ-গীতি।।
    

    গীতিচিত্রঃ শারদ-শ্রী

  • কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে

    বাণী

    কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে?
    মোর বুকে মুখ রাখি ঝড়ের পাখি সম কাঁদে ওকে?
    গভীর নিশীথের কন্ঠ জড়ায়ে
    শ্রান্ত কেশভার গগনে ছড়ায়ে,
    হারানো প্রিয়া মোর এলো কি লুকায়ে
    		আমার একা ঘরে ম্লান আলোকে॥
    গঙ্গায় তারি চিতা নিভেছে কবে,
    মোর বুকে সেই চিতা আজো জ্বলে নীরবে;
    স্মৃতির চিতা তার নিভিবে না বুঝি আর
    		কোন সে জনমে কোন সে লোকে॥
    
  • কোন্ মরমীর মরম-ব্যথা

    বাণী

    কোন্ মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদ্না হানে
    			জানি গো, সেও জানেই জানে।
    আমি কাঁদি তাইতে যে তার ডাগর চোখে অশ্রু আনে,
    			বুঝেছি তা প্রাণের টানে।।
    বাইরে বাঁধি মনকে যত
    ততই বাড়ে মর্ম-ক্ষত,
    মোর সে ক্ষত ব্যথার মতো
    			বাজে গিয়ে তারও প্রাণে,
    			কে কয়ে যায় কানে কানে।।
    উদাস বায়ু ধানের ক্ষেতে ঘনায় যখন সাঁঝের মায়া,
    দুই জনারই নয়ন-পাতায় অম্‌নি নামে কাজল ছায়া।।
    দুইটি হিয়াই কেমন কেমন —
    বদ্ধ ভ্রমর পদ্মে যেমন,
    হায়,অসহায় মূকের বেদন,
    			বাজ্‌লো শুধু সাঁঝের গানে,
    			পূবের বায়ুর হুতাশ তানে।।