ত্রিতাল

  • মেঘ মেদুর বয়ষায় কোথা তুমি

    বাণী

    মেঘ মেদুর বয়ষায় কোথা তুমি
    ফুল ছাড়ায়ে কাঁদে বনভূমি।।
    ঝুরে বারিধারা
    ফিরে এসো পথহারা
    কাঁদে নদী তট চুমি’।।
    
  • মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে

    বাণী

    মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে
    তৃষায় কাতর চাতকী ডাকে।।
    সমাধি-মগ্না উমা তপতী —
    রৌদ্র যেন তার তেজঃ জ্যোতি,
    ছায়া মাগে ভীতা ক্লান্তা কপোতী —
    কপোত-পাখায় শুষ্ক শাখে।।
    শীর্ণা তপিনী বালুচর জড়ায়ে
    তীর্থে চলে যেন শ্রান্ত পায়ে।
    দগ্ধ-ধরণী যুক্ত-পাণি
    চাহে আষাঢ়ের আশিস বাণী
    যাপিয়া নির্জলা একদশীর তিথি
    পিপাসিত আকাশ যাচে কাহাকে।।
    
  • মেঘে মেঘে অন্ধ অসীম আকাশ

    বাণী

    মেঘে মেঘে অন্ধ অসীম আকাশ।
    আমারি মত কাঁদে দিশাহারা
    নয়ন পুতলি চাঁদে হারায়ে
    হারায়ে তারি নয়ন তারা।।
    আমার ভুবন আঁধারে ভরিয়া
    নয়ন মণি মোর কে নিল হরিয়া
    প্রিয় নাম ধরে তারে খুঁজি দিকে দিকে
    শূন্য গগনে শুধু ঝরে বারি ধারা।।
    হে আলোর রাজা বল বল মোরে
    মোর আঁখি পুতলি কেন নিলে হ’রে
    তব উৎসব সভা হ’তো না কি উজল
    আমার আঁখির আলো ছাড়া।।
    

  • মেঘের ডমরু ঘন বাজে

    বাণী

    মেঘের ডমরু ঘন বাজে।
    	বিজলি চমকায়
    	আমার বনছায়,
    মনের ময়ূর যেন সাজে॥
    সঘন শ্রাবণ গগন-তলে
    রিমি ঝিমি ঝিম্ নবধারা জলে,
    চরণ-ধ্বনি বাজায় কে সে —
    নয়ন লুটায় তারি লাজে॥
    ওড়ে গগন-তলে গানের বলাকা,
    শিহরণ জাগে উজ্জ্বল পাখা।
    সুদূরের মেঘে অলকার পানে
    ভেসে চ’লে যায় শ্রাবণের গানে,
    কাহার ঠিকানা খুঁজিয়া বেড়ায় —
    হৃদয়ে কার স্মৃতি রাজে॥
    
  • মোর প্রথম মনের মুকুল

    বাণী

    মোর	প্রথম মনের মুকুল
    	ঝরে গেল হায় মনে মিলনের ক্ষণে।
    	কপোতীর মিনতি কপোত শুনিল না,
    			উড়ে গেল গহন-বনে।।
    	দক্ষিণ সমীরণ কুসুম ফোটায় গো
    	আমারি কাননে ফুল কেন ঝরে যায় গো
    	জ্বলিল প্রদীপ সকলেরি ঘরে হায়
    	নিভে গেল মোর দীপ গোধূলি লগনে।।
    	বিফল অভিমানে কাঁদে ফুলমালা কণ্ঠ জড়ায়ে
    	কাঁদি ধূলি-পথে একা ছিন্ন-লতার প্রায় লুটায়ে লুটায়ে।
    	দারুণ তিয়াসে এসে সাগর-মুখে
    	ঢলিয়া পড়িনু হায় বালুকারি বুকে
    	ধোঁয়ারে মেঘ ভাবি’ ভুলিনু চাতকী
    			জ্বলিয়া মরি গো বিরহ-দহনে।।
    
  • মৌন আরতি তব বাজে নিশিদিন

    বাণী

    মৌন আরতি তব বাজে নিশিদিন
    ত্রিভুবন মাঝে প্রভু বানী-বিহীন।।
    সম্ভ্রমে-শ্রদ্ধায় গ্রহ-তারা দল
    স্থির হয়ে রয় অপলক অচপল,
    ধ্যান-মৌনী মহাযোগী অটল
    আপন মহিমায় তুমি সমাসীন।।
    মৌন সে সিন্ধুতে জলবিম্বের প্রায়
    বাণী ও সঙ্গীত যায় হারাইয়া যায়।
    বিস্ময়ে অনিমেষ আঁখি চেয়ে রয়
    তব পানে অনন্ত সৃষ্টি-প্রলয়,
    তব ধ্রুব-লোকে, হে চির অক্ষয়,
    সকল ছন্দ-গতি হইয়াছে লীন।।
    
  • রস-ঘনশ্যাম-কল্যাণ-সুন্দর

    বাণী

    রস-ঘনশ্যাম-কল্যাণ-সুন্দর।
    প্রশান্ত সন্ধ্যার উদার শান্তি দাও —
    শ্রান্ত মনের ভার হর, হে গিরিধর।।
    যে নিবিড় সমাধির গভীর আনন্দে
    হিমালয় লীলায়িত নীরব ছন্দে,
    সেই মহাযোগে কর মোরে মগ্ন —
    যে মহাভাবে ভোর মৌন নীলাম্বর।। 
    অপগত-দুখশোক নিশীথ সুষুপ্তির মাঝে,
    নিথর সিন্ধুর অতল তলে যে শান্ত বিরাজে।
    যে সুধা লভিয়া ঋষি মধুছন্দা
    আনিল বেদবাণী অলকানন্দা
    অন্তরে বাহিরে সেই অমৃত দাও —
    কর পুরুষোত্তম অজর অমর।।
    
  • রহি' রহি' কেন সে-মুখ পড়ে মনে

    বাণী

    রহি' রহি' কেন সে-মুখ পড়ে মনে
    ফিরায়ে দিয়াছি যারে অনাদরে অকারণে।
    উদাসী অলস দুপুরে
    মন উড়ে' যেতে চায় সুদূরে
    যে বন-পথে সে ভিখারির বেশে
    করুণা জাগায়ে ছিল সকরুণ নয়নে।।
    তার বুকে ছিল তৃষ্ণা মোর ঘটে ছিল বারি
    পিয়াসি ফটিকজল জল পাইল না গো
    ঢলিয়া পড়িল হায় জলদ নেহারি।
    তার অহ্জলির ফুল পথ-ধূলিতে
    ছড়ায়েছি-সেই ব্যথা নারি ভুলিতে
    অন্তরালে যারে রাখিনু চিরদিন
    অন্তর জুড়িয়া কেন কাঁদে সে গোপনে।।
    
  • রাধা-তুলসী প্রেম-পিয়াসি গোলকবাসী শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ

    বাণী

    রাধা-তুলসী, প্রেম-পিয়াসি, গোলকবাসী শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ।
    নাম জপ মুখে, মূরতি রাখ বুকে ধ্যান দেখ তারি রপ মোহন।।
    	অমৃত রসঘন কিশোর-সুন্দর,
    	নব নীরদ শ্যাম মদন মনোহর —
    সৃষ্টি প্রলয় যুগল নূপুর শোভিত যাহার রাঙা চরণ।।
    	মগ্ন সদা যিনি লীলারসে,
    	যে লীলা-রস ভরা গোপী-কলসে,
    কান্না-হাসির আলো-ছায়ার মায়ায় যাহার মোহিত ভূবন।।
    
  • রামছাগী গায় চতুরঙ্গ বেড়ার ধারে

    বাণী

    		রামছাগী গায় চতুরঙ্গ বেড়ার ধারে,
    		গাইয়ে ষাঁড়-সাথে বাছুর হাম্বা রবে — ভীষণ নাদ ছাড়ে,
    		ফেটে বুঝি গেল কান, প্রাণে মারে!
    		শুনিয়া হাই তোলে ভেউ ভেউ রোলে — ভুলোটা পগার পারে।।
    তেলেনা: 		ডিম নেরে, তা দেরে, আমি না রে, তুই দেরে,
    		নেরে ডিম, দেরে তা, তা দেনা,
    		ওদের না না, তাদের না না তুই দেরে ডিম!
    		ওদের নারী তাদের নারী দেদার নারী,
    		দে রে নারী, যা ধেৎ, টানাটানি!
    সরগম:	 	ধ প র ধ র গ, গ র গ ধ, গ র গ ধ,
    		ন ধ ম ম, প র ন ম র গ, স র ন ধ স ম।।
    তবলার বোল: 	ভেগে যা, মেগে খা, মেরে কেটে খা, মেরে কেটে খা’
    		তেড়ে ধরে কাট ধুম, ধরে কেটে রাখুন না রাখুন না,
    		কান দুটি যাক তবু কাটা থাক দুম।।
    

    ‘চতুরঙ্গ’

  • রিনিকি ঝিনিকি ঝিনিরিনি রিনি ঝিনিঝিনি বাজে

    বাণী

    রিনিকি ঝিনিকি ঝিনিরিনি রিনি ঝিনিঝিনি বাজে পায়েলা বাজে
    নওল কিশোরী ধায় অভিসারে ভবন তেয়াগি' বন-মাঝে।।
    	বারণ করে তায়
    	লতিকা ধরি' পায়
    ভাব-বিলাসিনী না মানে গুরুজন-ভয় লাজে।।
    আবেশ বিহ্বল এলোমেলো কুন্তল ছায়া-নটিনী চলে
    মধুকর গুঞ্জে মাধবী কুঞ্জে কুসুম দীপালি জ্বলে।
    	সে রূপ হেরি' হায়
    	মুরলী থামিয়া যায়
    পথ-ভোলা শশী কাননে এলো যেন রাধা-সাজে।।
    

  • রুম ঝুম রুম ঝুম কে বাজায়

    বাণী

    রুম্ ঝুম্ রুম ঝুম্ কে বাজায় জল-ঝুম্‌ঝুমি।
    চমকিয়া জাগে ঘুমন্ত বনভূমি ॥
    		দুরন্ত অরণ্যা গিরি- নির্ঝরিণী
    		রঙ্গে সঙ্গে ল’য়ে বনের হরিণী,
    শাখায় শাখায় ঘুম ভাঙায় ভীরু মুকুলের কপোল চুমি’ ॥
    কুহু-কুহু কুহরে পাহাড়ি কুহু পিয়াল-ডালে,
    পল্লব-বীণা বাজায় ঝিরিঝিরি সমীরণ তা’রি তালে তালে।
    		সেই জল-ছলছল সুরে জাগিয়া
    		সাড়া দেয় বন-পারে বাঁশি রাখালিয়া১’,
    পল্লীর প্রান্তর ওঠে শিহরি’ বলে —  ‘চঞ্চলা কে গো তুমি’ ॥
    

    ১. ‘বউ কথা কও কোকিল পাপিয়া’ পঙক্তিটি অতিরিক্ত আছে।

  • রুম্‌ ঝুম্‌ ঝুম্ ঝুম্ নূপুর বোলে

    বাণী

    রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ নূপুর বোলে
    বন-পথে যায় কে বালিকা, গলে শেফালিকা,
    		মালতী মালিকা দোলে॥
    চম্পা মুকুলগুলি চাহে নয়ন তুলি’
    নাচে নট-বিহগ শিখী তরুতলে॥
    
  • রুম্ ঝুম্ বাদল আজি বরষে

    বাণী

    রুম্ ঝুম্ বাদল আজি বরষে
    আকুল শিখি নাচে ঘন দরশে॥
    বারির দরশনে আজি ক্ষণে ক্ষণে
    নব নীরদ শ্যাম রূপে পড়ে মনে
    না-জানি কোন্ দেশে কোন্ প্রিয়া সনে
    রয়েছে ভুলিয়া নটবর সে॥
    
  • রূপের কুমার জাগো নিশি হয় অবসান

    বাণী

    রূপের কুমার জাগো, নিশি হয় অবসান।
    গাহিছে আলোক কুমারীরা, শোন ঘুম-ভাঙানিয়া গান।।
    	তুমি জাগিছ না বলি’
    	ফোটে না আলোর কলি,
    তব ঘুমন্ত আঁখির পাতায় ঘুমায় আলোর প্রাণ।।
    

    নাটিকাঃ ‌‘লায়লী-মজনু’

  • শান্ত হও শিব বিরহ-বিহ্বল

    বাণী

    শান্ত হও, শিব, বিরহ-বিহ্বল
    চন্দ্রলেখায় বাঁধো জটাজুট পিঙ্গল।।
    ত্রি-বেদ যাহার দিব্য ত্রিনয়ন
    শুদ্ধ-জ্ঞান যা’র অঙ্গ-ভূষণ,
    সেই ধ্যানী শম্ভু — কেন শোক-উতল।।
    হে লীলা-সুন্দর, কোন্ লীলা লাগি’,
    কাঁদিয়া বেড়াও হ’য়ে বিরহী-বিবাগী।
    হে তরুণ যোগী, মরি ভয়ে ভয়ে
    কেন এ মায়ার খেলা মায়াতীত হ’য়ে,
    লয় হবে সৃষ্টি — তুমি হলে চঞ্চল।।
    
  • শিব-অনুরাগিণী গৌরী জাগে

    বাণী

    শিব-অনুরাগিণী গৌরী জাগে।
    আঁখি অনুরঞ্জিত প্রেমানুরাগে।।
    	স্বপনে কি শিব এসে
    	বর দিল বর-বেশে,
    বালিকা বলিতে নারে, শরম লাগে।।
    ‘কি হয়েছে উমা তোর’ — গিরিরানী সাধে,
    কে মাখালো কুম্‌কুম্‌ ভোরের চাঁদে?
    	লুকায় মায়ের বুকে
    	বলিতে বাধে মুখে,
    পাগল শিব ঐ রূপ-ভিক্ষা মাগে।।
    
  • শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির–নির্মল

    বাণী

    শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির–নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব–জ্যোতি
    অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত সদা আনন্দিত রাখো মতি।।
    দুঃখ–শোক সহি অসীম সাহসে
    অটল রহি যেন সম্মানে যশে
    তোমার ধ্যানের আনন্দ–রসে
    	নিমগ্ন রহি হে বিশ্বপতি।।
    মন যেন না টলে খল কোলাহলে, হে রাজ–রাজ!
    অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ, হে রাজ–রাজ!
    বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
    ওঙ্কার–সংগীত–সুর–সুরধুনী,
    হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
    	সে সুরে তোমার নীরব আরতি।।
    
  • শ্মশানে জাগিছে শ্যামা

    বাণী

    শ্মশানে জাগিছে শ্যামা
    	অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে
    জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ
    	চিতার আগুণ ঢেকে স্নেহ–আঁচলে।
    সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি’ সুখ কৈলাস
    বরাভয় রূপে মা শ্মশানে করেন বাস,
    কি ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে
    	ঘুমাবি জননীর চরণ–তলে।।
    জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার জ্বালায়
    তাহারে ডাকিছে মা ‘কোলে আয়, কোলে আয়’
    জীবনে শ্রান্ত ওরে ঘুম পাড়াইতে তোরে
    	কোলে তুলে নেয় মা মরণেরি ছলে।।
    
  • শ্যাম-সুন্দর-গিরিধারী

    বাণী

    শ্যাম-সুন্দর-গিরিধারী।
    মানস মধু-বনে মধুমাধবী সুরে মুরলী বাজাও বনচারী।।
    মধুরাতে হে হৃদয়েশ মাধবী চাঁদ হয়ে এসো,
    হৃদয়ে তুলিও ভাবেরই উজান রস-যমুনা-বিহারী।।
    অন্তর মন্দিরে প্রীতি ফুলশয্যায় বিলাস কর লীলা-বিলাসী,
    আঁখির প্রদীপ জ্বালি' শিয়রে জাগিয়া রব শ্যাম, তব রূপ-পিয়াসি।
    যত সাধ আশা গেল ঝরিয়া, পর তাই গলে মালা করিয়া;
    নূপুর করিব তব চরণে গাঁথি' মম নয়নের বারি।।