ত্রিতাল

  • ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া

    বাণী

    ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া
    এসো এসো মেঘমালা প্রিয়া প্রিয়া।।
    দূরে থেকো না এই শ্রাবণ নিশীথে
    কাঁদে তব তরে পিয়াসি হিয়া।।
    বিজলি খুঁজে ফেরে সুদূর আকাশে
    হৃদয়ে কাঁদে প্রেম পাপিয়া পিয়া।।
    

  • ঝরে বারি গগনে ঝুরু ঝুরু

    বাণী

    ঝরে বারি গগনে ঝুরু ঝুরু।
    জাগি একা ভয়ে নিদ্‌ নাহি আসে,
    ভীরু হিয়া কাঁপে দুরু দুরু।।
    দামিনী ঝলকে, ঝনকে ঘোর পবন
    ঝরে ঝর ঝর নীল ঘন।
    রহি’ রহি’ দূরে কে যেন কৃষ্ণা মেয়ে
    মেঘ পানে ঘন হানে ভুরু।।
    অতল তিমিরে বাদলের বায়ে
    জীর্ণ কুটীরে জাগি দীপ নিভায়ে,
    দূরে দেয়া ডাকে গুরু গুরু।।
    
  • ঢল ঢল নয়নে স্বপনের ছায়া গো

    বাণী

    ঢল ঢল নয়নে স্বপনের ছায়া গো।
    কোন্ অমরার কোন্ মায়া গো।।
    	মনের বনের ’পারে
    	চকিতে দেখেছি যারে,
    সে এলে কি আজ ধরি’ কায়া গো।।
    
  • তব ঐ দু’টি চঞ্চল আঁখি

    বাণী

    তব ঐ দু’টি চঞ্চল আঁখি।
    আদর সোহাগ প্রেম-অনুরাগ —
    	মান অভিমান মাখামাখি।।
    বুঝিতে পারি না তারই ভাষা
    তবু মনে বুঝিবার আশা,
    তাই বুঝি হায় নিল বাসা —
    	ওরই মাঝে মোরই আঁখি।।
    মুদিত কমলে ভ্রমর যেন
    বন্দি হইয়া রহি হেন,
    আঁখি ফিরাতে পারি না কেন —
    	ওরই মাঝে ডুবে থাকি।।
    
  • তরুণ অশান্ত কে বিরহী

    বাণী

    তরুণ অশান্ত কে বিরহী।
    নিবিড় তমসায় ঘন ঘোর বরষায় —
    দ্বারে হানিছ কর রহি রহি।।
    ছিন্ন পাখা কাঁদে মেঘ-বলাকা
    কাঁদে ঘোর অরণ্য আহত-শাখা
    	চোখে আশা-বিদ্যুৎ
    	এলে কোন মেঘদূত,
    বিধূর বঁধূর মোর বারতা বহি’।।
    
  • তাপসিনী গৌরী কাঁদে বেলা শেষে

    বাণী

    তাপসিনী গৌরী কাঁদে বেলা শেষে,
    উপবাস-ক্ষীণ তবু যোগিনী বেশে।।
    বুকে চাপি’ করতল বিল্বপত্র-দল,
    কেঁপে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে শিব-আবেশে।।
    অস্ত রবি তা’র সহস্র করে
    চরণ ধ’রে বলে ফিরে যেতে ঘরে,
    ‘শিব দাও শিব দাও’ ব’লে লুটায় ধূলি-তলে —
    কৈলাস-গিরি পানে চাহে অনিমেষে।।
    
  • তুষার-মৌলি জাগো জাগো গিরি-রাজ

    বাণী

    তুষার-মৌলি জাগো জাগো গিরি-রাজ।
    পঙ্গু তোমারে আজি হানিতেছে লাজ।।
    রুদ্র ও রুদ্রাণী অঙ্কে যাহার,
    দৈত্য হরিছে আজ সম্মান তার।
    হে মহা-মৌনী, জাগো, পর নব সাজ।।
    স্বর্গ তোমার শিরে, পদতলে হায়,
    আর্যাবর্ত কাঁদে চির অসহায়
    মেঘ-লোক হ’তে হান দৈত্যেরি বাজ।।
    
  • তোমার বিনা-তারের গীতি

    বাণী

    তোমার বিনা-তারের গীতি বাজে আমার বীণা-তারে
    রইল তোমার ছন্দ-গাথা গাঁথা আমার কণ্ঠ-হারে।।
    কি কহিতে চাও হে গুণী, আমি জানি আমি শুনি
    কান পেতে রই তারার সাথে তাই তো দূর গগন-পারে।।
    পালিয়ে বেড়াও উদাস হাওয়া গোপন কথার ফুল ফুটিয়ে গো
    আমি তারে মালা গেঁথে লুকিয়ে রাখি বক্ষে নিয়ে গো।
    হয়তো তোমার কথার মালা, কাঁটার মত করবে জ্বালা
    সেই জ্বালাতেই জ্বলবে আমার প্রেমের শিখা অন্ধকারে।।
    
  • তোমার বীণার মূর্ছনাতে বাজাও

    বাণী

    তোমার বীণার মূর্ছনাতে বাজাও আমার বাণী।
    তোমার সুরে শোনাও আমার গানের আধেকখানি।।
    	শুনব শুধু তোমার কথা
    	এবার আমার নীরবতা,
    আমার সুরের ছবি আঁকুক তোমার পদ্মপাণি।।
    
  • ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে

    বাণী

    ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে
    ভুলে আছিস দেশ জননী কেমন ক’রে॥
    ব্যথিত বুকে মাগো তোমার মন্দির গড়ি
    করি পূজা আরতি মাগো যুগ যুগ ধরি’
    ধূপ পুড়িয়া মাগো চন্দন শুকায়ে যায়
    এসো মা এসো পুন রানীর মুকুট প’রে॥
    দুঃখের পসরা মা আর যে বহিতে নারি
    কাঁদিয়া কাঁদিয়া শুকায়েছে আঁখি-বারি
    এ গ্লানি লাজ মাগো সহিতে নাহি পারি
    বিশ্ব বন্দিতা এসো দুখ-নিশি-ভোরে॥
    অতীত মহিমা ল’য়ে এসো মহিমাময়ী
    হীনবল সন্তানে কর মা ভুবনজয়ী
    দুখ তপস্যা মা কবে তব হবে শেষ
    আয় মা নব আশা রবির প্রদীপ ধ’রে॥
    
  • দক্ষিণ সমীরণ সাথে বাজো বেণুকা

    বাণী

    দক্ষিণ সমীরণ সাথে বাজো বেণুকা।
    মধু-মাধবী সুরে চৈত্র-পূর্ণিমা রাতে, বাজো বেণুকা।।
    বাজো		শীর্ণা-স্রোত নদী-তীরে
    		ঘুম যবে নামে বন ঘিরে’
    যবে		ঝরে এলোমেলো বায়ে ধীরে ফুল-রেণুকা।।
    		মধু মালতী-বেলা-বনে ঘনাও নেশা
    		স্বপন আনো জাগরণে মদিরা মেশা।
    			মন যবে রহে না ঘরে
    			বিরহ-লোকে সে বিহরে
    		যবে নিরাশার বালুচরে ওড়ে বালুকা।।
    
  • দূর বেণুকুঞ্জে বাজে মুরলী মুহু মুহু

    বাণী

    দূর বেণুকুঞ্জে বাজে মুরলী মুহু মুহু
    	যেন বারে বারে
    	ডাকে আমারে
    বাঁশুরিয়ার মধুর সুরের কুহু।।
    

  • দোলন চাঁপা বনে দোলে

    বাণী

    দোলন চাঁপা বনে দোলে —
    	দোল-পূর্ণিমা-রাতে চাঁদের সাথে।
    শ্যাম পল্লব কোলে যেন দোলে রাধা
    	লতার দোলনাতে॥
    যেন দেব-কুমারীর শুভ্র হাসি
    ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি’
    আরতির মৃদু জ্যোতি প্রদীপ-কলি
    	দোলে যেন দেউল-আঙিনাতে॥
    বন-দেবীর ওকী রুপালি ঝুমকা
    	চৈতি সমীরণে দোলে —
    রাতের সলাজ আঁখি-তারা
    	যেন তিমির আঁচলে।
    ও যেন মুঠিভরা চন্দন-গন্ধ
    দোলে রে গোপিনির গোপন আনন্দ,
    ও কী রে চুরি করা শ্যামের নূপুর —
    	চন্দ্র-যামিনীর মোহন হাতে॥
    
  • ধীরে ধীরে আসি'

    বাণী

    (সে) ধীরে ধীরে আসি'
    আধো ঘুমে বাজাল বাঁশি।
    	ফুল-রাখি দিল বাঁধি হাসি।।
    জাগিয়া নিশি-ভোরে
    না হেরি বাঁশির কিশোরে,
    	চাঁদ-তরী বেয়ে গেল ভাসি।।
    
  • ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে

    বাণী

    	ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে।
    	আমার প্রলয় সুন্দর এলে॥
    	পথে-পথে ঝরা কুসুম ছাড়ায়ে
    	রিক্ত শাখায় কিশলয় জড়ায়ে,
    	গৈরিক উত্তরী গগনে উড়ায়ে —
    	রুদ্ধ ভবনের দুয়ার ঠেলে॥
    	বৈশাখী পূর্ণিমা চাঁদের তিলক
    		তোমারে পরাব,
    মোর 	অঞ্চল দিয়া তব জটা নিঙাড়িয়া
    		সুরধুনী ঝরাব।
    	যে-মালা নিলে না আমার ফাগুনে
    	জ্বালা তারে তব রূপের আগুনে,
    	মরণ দিয়া তব চরণ জড়াব
    	হে মোর উদাসীন, যেয়ো না ফেলে॥
    
  • নয়ন মুদিল কুমুদিনী হায়

    বাণী

    		নয়ন মুদিল কুমুদিনী হায়!
    		তাহার ধ্যানের চাঁদ ডুবে যায়।।
    		ভরিল সরসী তা’রি আঁখি-জলে
    		ঢলিয়া পড়িল পল্লব-তলে,
    অকরুণ নিষাদের তীর সম অরুণ-কিরণ বেঁধে এসে গায়।।
    		কপোলের শিশির অভিমানে শুকালো,
    		পাপড়ির আড়ালে পরাগ লুকাল।
    		সরসীর জলে পড়ে আকাশের ছায়া
    		নাই সেথা তারা-দল, চাঁদের মায়া,
    জলে ডুবে মেটে না প্রাণের তৃষা হৃদয়ের মধু তার হৃদয়ে শুকায়।।
    
  • নাচে নটরাজ মহাকাল

    বাণী

    নাচে নটরাজ, মহাকাল।
    অম্বর ছাপিয়া পড়ে লুটাইয়া আলো-ছায়ার বাঘ-ছাল।।
    কালো সিন্ধু জলে তাথৈ তাথৈ রব
    শুনি সেই নৃত্যের নাচে মহাভৈরব
    বিষাণ মন্দ্রে বাজে মাভৈঃ মাভৈঃ রব
    প্রাণ পেয়ে জেগে ওঠে মৃত কঙ্কাল।।
    গঙ্গা তরঙ্গে অপরূপ রঙ্গে
    ছন্দ জাগে সেই নৃত্য-বিভঙ্গে
    জোছনা আশিস-ধারা ঝরে চরাচরে
    ছাপিয়া ললাট শশী ভাল।।
    
  • নাচে নন্দ-দুলাল নদী-তরঙ্গে

    বাণী

    নাচে নন্দ-দুলাল।
    নদী-তরঙ্গে অধীর রঙ্গে — বাজে মঞ্জির চঞ্চল তাল।।
    	চরণের নূপুর খুলে
    	ফুল হয়ে ঝরে তরুমূলে,
    পূবালী পবনে বন-ভবনে দোলে সে-ছন্দে পিয়াল তমাল।।
    	মধুকর কল-গুঞ্জনে
    	কাজরি গাহে নীপবনে,
    ময়ূর পাপিয়া উঠিল মাতিয়া বাজে বৃষ্টির বীণা করতাল।।
    
  • নারায়ণী উমা খেলে হেসে হেসে

    বাণী

    নারায়ণী উমা খেলে হেসে হেসে
    হিম-গিরির বুকে পাহাড়ি বালিকা বেশে॥
    গিরি-গুহা হতে জ্যোতির ঝরনা ছুটে চলে যেন চল ঝরনা,
    তুষার-সায়রে সোনার কমল যেন বেড়া ভেসে।
    			— খেলে হেসে হেসে।
    মাধবী চাঁদ ওঠে কৈলাস-চূড়ে,
    খেলা ভুলিয়া যায়, অনিমেষ চোখে চায়
    পাষাণ প্রতিমা প্রায় সেই সুদূরে।
    সতী-হারা যোগী পাগল শঙ্করে
    মনে পড়িয়া তার নয়নে বারি ঝরে,
    শিব-সীমন্তনী পাগলিনী প্রায় ‘শিব শিব’ বলে ধায় মুক্তকেশে॥
    
  • নিপীড়িতা পৃথিবী ডাকে

    বাণী

    নিপীড়িতা পৃথিবী ডাকে জাগো চন্ডিকা মহাকালি।
    মৃতের শ্মশানে নাচো মৃত্যুঞ্জয়ী মহাশক্তি দনুজ-দলনী করালি॥
    		প্রাণহীন শবে শিব-শক্তি জাগাও
    		নারায়ণের যোগ-নিদ্রা ভাঙাও
    অগ্নিশিখায় দশদিক রাঙাও বরাভয়দায়িনী নৃমুন্ডমালি॥
    শ্রী চন্ডিতে তোরই শ্রীমুখের বাণী
    কলিতে আবির্ভাব হবে তোর ভবানী।
    		এসেছে কলি, কালিকা এলি কই
    		শুম্ভ-নিশুম্ভ জন্মেছে পুন ঐ
    অভয়বাণী তব মাভৈঃ মাভৈঃ শুনিব কবে মাগো খর করতালি॥