বাণী

অনাদরে স্বামী প’ড়ে আছি আমি তব কোলে তুলে নাও
নিয়ে ধরণীর ধূলি আছি আমি ভুলি’ চরণের ধূলি দাও॥
	বিভবে বিলাসে সংসার কাজে
	অশান্ত প্রাণ কাঁদে বন্ধন মাঝে
বৃথা দ্বারে দ্বারে চেয়েছি সবারে এবার তুমি মোরে চাও॥
	যাহা কিছু প্রিয় জীবনের মম
	হরিয়া লহ তুমি, লও প্রিয়তম।
	সূর্যের পানে সূর্যমুখী ফুল
	যেমন চাহিয়া রয় বিরহ-ব্যাকুল
তেমনি প্রভু আমার এ মন তোমার পানে ফিরাও॥

বাণী

আদি পরম বাণী, ঊর বীণাপাণি।
আরতি করে তব কোটি কোবিদ জ্ঞানী।।
হিমেল শীত গত, ফাগুন মুঞ্জরে,
কানন-বীণা বাজে সমীরে মর্মরে।
গাহিছে মুহু মুহু আগমনী কুহু,
প্রকৃতি বন্দিছে নব কুসুম আনি’।।
মূক ধরণী করে বেদনা-আরতি,
বীণা-মুখর তারে কর মা ভারতী!
বক্ষে নব আশা, কণ্ঠে নব ভাষা
দাও মা, আশিস যাচে নিখিল প্রাণী।।
শুচি রুচির আলো-মরাল বাহিনী
আনিলে আদি জ্যোতি, সৃজিলে কাহিনী।
কণ্ঠে নাহি গীতি, বক্ষে ত্রাস-ভীতি,
কর প্রবুদ্ধ মা বর অভয় দানি’।।
ব্রহ্মবাদিনী আদিম বেদ-মাতা,
এসো মা, কোটি-দল হৃদি আসন পাতা।
অশ্রুমতী মা গো, নব বাণীতে জাগো,
রুদ্ধ দ্বার খোলো সাজিয়া রুদ্রাণী।।

বাণী

চঞ্চল সুন্দর নন্দকুমার।
গোপী চিতচোর প্রেম-মনোহর নওল কিশোর
অন্তর মাঝে বাজে বেণু তার নন্দকুমার
	নন্দকুমার, নন্দকুমার॥
শ্রাবণ আনন্দ নূপুর ছন্দ রুনুঝুনু বাজে
নন্দের আঙিনায় নন্দন চন্দ, নাচিছে হেলে দুলে গোপাল সাজে।
টলমল টলে রাঙা পদতলে লঘু হ’য়ে বিপুল ধরণীর ভার —
	নন্দকুমার, নন্দকুমার, নন্দকুমার॥
রূপ নেহারিতে এলো লুকায়ে দেবতা
কেহ গোপগোপী হলো, কেহ তরুলতা;
আনন্দ-অশ্রু নদী হ’য়ে বয়ে যায়, উতল যমুনায়।
প্রণতা প্রকৃতি নিরালা সাজায়,
বনডালায় পূজা ফুল সম্ভার।
	নন্দকুমার, নন্দকুমার, নন্দকুমার॥

বাণী

কাছে আমার নাইবা এলে হে বিরহী দূর ভালো।
নাই কহিলে কথা তুমি ব'লো গানে সুর ভালো।।
	নাই দাঁড়ালে কাছে আসি'
	দূরে থেকেই বাজিয়ো বাঁশি।
চরণ তোমার নাই বা পেলাম চরণের নূপুর ভালো।।
ওগো পথে পাওয়ার চেয়ে আমায় চাওয়ায় যেন পথ-বঁধু
দুই কূলেতে রইব দুজন বইবে মাঝে স্রোত-বঁধূ।
	পরশ তোমার চাই না প্রিয়
	তোমার হাতের আঘাত দিও
মিলন তোমার সইতে নারি বেদনা-বিধুর ভালো।।

বাণী

এসো বঁধু ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান।
দিব ও-চরণে ডারি’ মোর তনু মন প্রাণ।।
	জানি আমি অপরাধী
	তাই দিবানিশি কাঁদি’,
নিমেষের অপরাধের কবে হবে অবসান।।
	ফিরে গেলে দ্বারে আসি’
	বাসি কিনা ভালোবাসি,
কাঁদে আজ তব দাসী — তুমি তার হৃদে ধ্যান।।
	সে-দিন বালিকা-বধূ
	শরমে মরম-মধু,
পি’য়াতে পারিনি বঁধু — আজ এসে কর পান।।
	ফিরিয়া আসিয়া হেথা
	দিও দুখ দিও ব্যথা,
সহে না এ নীরবতা — হে দেবতা পাষাণ।।

বাণী

	কন্যার পায়ের নূপুর বাজে রে বাজে রে।
	রুমুঝুমু রুমুঝুমু বাজে রে বাজে রে।
যেন	ভোমরারি ঝাঁক উড়ে গেল ফুল-বনের মাঝে রে।।
	কালো জলে নামলো যেন বুনো হাসেঁর দল,
যেন	পাহাড় বেয়ে ছুটে এলো ঝর্ণা ছলছল
	থির সায়রে টাপুর-টুপুর ঝরে মেঘের জল
		যেন বাদল সাঝেঁ  রে।।
যেন	আচমকা নিঝুম রাতে গাঙে জোয়ার এলো
	ঝরা পাতায় চৈতী বাতাস বইলো এলোমেলো।
		সে সুর ওঠে রিমঝিমিয়ে
		আমার বুকে চমক দিয়ে
	মহুয়া-ডালে গানের পাখি	নীরব হলো লাজে রে।।