বাণী

গোধূলির শুভ লগন এনে সে কেন বিদায়ের বাঁশি বাজায়।
ওর মিলনের মালা ভালো লাগে না বুঝি গো, ও-শুধু বিরহের অশ্রু চায়।।
	কে জানিত ও-বিরহ-বিলাসী
	সকালের ফুল চায়, সন্ধ্যায় উদাসী,
দিনে যে ধরা দেয় দীনের মতন রাতে সে শূন্যে কেন মিশে যায়।।
	ঘরে এনে কেন ভোলাতে চায় ঘর
	আত্মা জড়ায়ে কাঁদে, আত্মীয়ে করে পর,
প্রেম-কৃপা-ঘন সে নাকি সুন্দর — কেন তবে অসহ দুঃখ দিয়ে কাঁদায়।।

বাণী

	গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী।
	দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয়-ভীতা মেদিনী।।
	দেখায় মেঘের ঝাপি তুলিয়া
	ফনা তুলি’ বিদ্যুৎ-ফণি ওঠে দুলিয়া,
	ঝড়ের তুব্‌ড়িতে বাজে তার অশান্ত রাগিণী।।
	মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল
	দিগন্তে দুলে তার এলোকেশ পিঙ্গল
	ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল তন্বী-মোহিনী।।
	অশনি-ডমরু ওঠে দমকি’
	পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি’
তার 	ডাক শুনে ছুটে আসে নদীজল যেন পাহাড়িয়া নাগিনী।।

বাণী

গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে।
তা’রি আশায় গানের ভেলা ভাসাই পারাবারে।।
	জানি জানি আমার এ সুর
	পাবেই পাবে চরণ বঁধুর
ঐ ভেলাতে আসবে বঁধু গভীর অন্ধকারে।।
ঘুমে যখন মগ্ন সবাই বন্ধু আমার আসে
ফুলের মতন সুরগুলি তার মুখ চেয়ে’হাসে।
	উদ্দেশে তার গানগুলি মোর
	যায় ভেসে যায় নেশায় বিভোর
যেমন ক’রে ছায় গো তপন চাঁদের অধিকারে।।

বাণী

গুল–বাগিচার বুলবুলি আমি রঙিন প্রেমের গাই গজল।
অনুরাগের লাল শারাব মোর আঁখি ঝলে ঝলমল (হায়)।।
	আমার গানের মদির ছোঁয়ায়
	গোলাপ কুঁড়ির ঘুম টুটে যায়,
সে গান শুনে প্রেমে–দীওয়ানা কবির আঁখি ছলছল (হায়)।।
লাল শিরাজীর গেলাস হাতে তন্বী সাকি পড়ে ঢুলে,
আমার গানের মিঠা পানির লহর বহে নহর–কূলে।
ফুটে ওঠে আনারকলি নাচে ভ্রমর রং–পাগল (হায়)।।
	সে সুর শুনে দিশেহারা
	ঝিমায় গগন ঝিমায় তারা,
চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা বনের চোখে শিশির জল (হায়)।।

১. বনের পাতায়

বাণী

গাগরী ভরণে চলে চপলা ব্রজনারী
যৌবন-লাবনি অঙ্গে বিথারি’।
কাজল-কালো নয়ন গরল মাখানো বাণ,
চকিত চাহনি হানে চতুরা শিকারী।।
চঞ্চল-অঞ্চল উড়ায়ে সাঁজের বায়
আধো আলো আধো ছায়া লুকোচুরি খেলে যায়,
রাঙা তপন হেসে লুকায় লতার পাশে কাঁদে দরশ-ভিখারি।।

বাণী

গভীর ঘুম ঘোরে স্বপনে শ্যাম-কিশোরে হেরে’ প্রেমময়ী রাধা।
রাধারে ত্যজিয়া আঁধার নিশীথে চন্দ্রার সাথে বাঁধা।(শ্যাম-চাঁদ)
যেন চাঁদের বুকে কলঙ্ক গো নির্মল শ্যাম-চাঁদের বুকে চন্দ্রা যেন কলঙ্ক গো।।
অরুণ নয়ানে মলিন বয়ানে জাগিল অভিমানিনী
(ভাবে) রাধার হৃদয় আধার যাহার সে কেন ভজে কামিনী।
শ্রীরাধার মান ভয়হীন, তাই শ্রীরাধা অভিমানিনী,
পরমশুদ্ধ প্রেম শ্রীরাধার, নির্ভয় অভিমানিনী।।
কৃষ্ণকেও সে ভয় করে না, নির্ভয় অভিমানিনী রাধা বুঝতে নারে গো
চির-সরল অমৃতময় গরল কেন হয় বুঝতে নারে গো
কাঁপে থরথর সারা কলেবর, ভাবে রাধা একি বিপরীত।
প্রেম ভিক্ষু কহে, বুঝি বুঝিবার নহে চঞ্চল শ্যামের রীত।।
বোঝা যে যায় না চঞ্চল শ্যামের রীত
অবুঝ মনের বোঝা যায় না তাতে তবু কখন সে রাধার, কখন সে চন্দ্রার।।

গীতিচিত্র: ‘অভিমানিনী’