বাণী

চাঁদ হেরিছে চাঁদ–মুখ তার সরসীর আরশিতে।
ছুটে তরঙ্গ বাসনা–ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে।।
হেরিছে রজনী – রজনী জাগিয়া
চকোর উতলা চাঁদের লাগিয়া,
কাঁহা পিউ কাঁহা ডাকিছে পাপিয়া
		কুমুদীরে কাঁদাইতে।।
না জানি সজনী কত সে রজনী কেঁদেছে চকোরী পাপিয়া,
হেরেছে শশীরে সরসী–মুকুরে ভীরু ছায়া–তরু কাঁপিয়া।
কেঁদেছে আকাশে চাঁদের ঘরণী
চির–বিরহিণী রোহিণী ভরণী
অবশ আকাশ বিবশা ধরণী
		কাঁদানীয়া চাঁদিনীতে।।

বাণী

ফুটলো যেদিন ফাল্গুনে, হায়, প্রথম গোলাপ-কুঁড়ি
বিলাপ গেয়ে বুলবুলি মোর গেল কোথায় উড়ি।।
	কিসের আশায় গোলাপ বনে
	গাইতো সে গান আপন মনে,
লতার সনে পাতার সনে খেতো লুকোচুরি (হায়)
সেই লতাতে প্রথম প্রেমের ফুটলো মুকুল যবে
পালিয়ে গেল ভীরু পাখি অমনি নীরবে।
	বাসলে ভালো যে জন কাঁদে
	বাঁধবো তা'রে কোন সে ফাঁদে,
ফুল নিয়ে তাই অবসাদে বনের পথে ঘুরি (হায়)।।

বাণী

মা এলো রে, মা এলো রে, বরষ পরে আপন ছেলের ঘরে
সাত কোটি ভাই বোন মিলিয়া আজি ডাকি আকুল স্বরে (মাগো আনন্দময়ী)
মা এসেছে! মা এসেছে! আকাশ-পাতাল ‘পরে
আনন্দ তাই ধরে না যে আজকে থরে থরে
শিউলি ফুলের মত আজ আনন্দ গান করে।।
কমল-মুকুল-শাপ্‌লা বনে ভ্রমর শোনায় গীতি —
জাগো জাগো, আজকে মোদের আগমনীর তিথি;
জল-তরঙ্গ বেজে ওঠে নদীর বালুচরে।।
বুকের মাঝে বাঁশি বাজে অঝোর কলরোলে,
দূর-প্রবাসী কাজ ভুলে আয় আপন মায়ের কোলে;
আজকে পেলাম মাকে যেন কত যুগের পরে।।

বাণী

ব’লো না ব’লো না ওলো সই
		আর সে কথা।।
তরু কি লতার কাছে
এসে কভু প্রেম যাচে
তরু বিনা নাহি বাঁচে
		অসহায় লতা।।
ভুলিতে যার নাই তুলনা
সখি তার কথা তুলো না
প্রাণহীন পাষাণে গড়া
		সে যে দেবতা।।

বাণী

সাবিত্রী সমান হও, লহ লহ এই আশিষ।
শ্বশুর শাশুড়ির মা বাপের, কুলের তারা হয়ে হাসিস।।
রামের মত স্বামী পাস, সতী হ’স সীতার সম
দশরথ কৌশল্যার মত শ্বশুর শাশুড়ি অনুপম।
লক্ষ্মণ সম দেবর পেয়ে সুখের সায়রে ভাসিস।।
গোয়ালে গরু, মরায়ে ধান সিঁথেয় সিঁদুর, মুখে পান
আল্‌তা পায়ে চির-এয়োতি যায় সুখে দিন এক সমান
অন্নপূর্ণা জগৎ জীবের মা হয়ে ফিরে আসিস।।
সভা-উজ্জ্বল জামাই পাস ভুবন-উজ্জ্বল দুঃখ পাস
ধরার মত সহ্য পাস জন্মায়স্তে কাল কাটাস।
পাকা চুলে পরিস্ সিঁদুর হয়ে থাকিস্ স্বামীর গো।
বেঁচে থাকিস্ যতকাল অক্ষয় থাক তোর হাতের নো।
পুত্র দিয়ে স্বামীর কোলে গঙ্গাজলে দেহ রাখিস।।

নাটিকাঃ ‘পুতুলের বিয়ে’

বাণী

পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর, বিধির বিধান সত্য হোক!
(এই) খোদার উপর খোদকারী তোর মানবে না আর সর্বলোক।।
নানান মুনির নানান মত্‌ যে, মানবি বল্‌ সে কার শাসন?
				কয়জনার বা রাখবি মন?
একজনকে মানলে করবে আর এক সমাজ নির্বাসন, চারদিকে শৃঙ্খল বাঁধন!
সকল পথে লক্ষ্য যিনি চোখ পুরে নে তাঁর আলোক।।
জাতের চেয়ে মানুষ সত্য, অধিক সত্য প্রাণের টান
				প্রাণ-ঘরে সব এক সমান।
বিশ্ব-পিতার সিংহ-আসল প্রাণ বেদীতেই অধিষ্ঠান,
				আত্মার আসন তাইত প্রাণ।
জাত-সমাজের নাই সেথা ঠাই জগন্নাথের সাম্য লোক
				জগন্নাথের তীর্থ লোক।।
চিনেছিলেন খ্রিষ্ট, বুদ্ধ, কৃষ্ণ, মোহাম্মদ ও রাম
				মানুষ কী আর কী তার দাম!
(তাই) মানুষ যাদের করত ঘৃণা, তাদের বুকে দিলেন স্থান,
				গান্ধী আবার গান সে-গান।
(তোরা) মানব-শত্রু, তোদেরই হায় ফুটল না সেই জ্ঞানের চোখ।।