বাণী

ফুল-ফাগুনের এলো মরশুম বনে বনে লাগল দোল্।
কুসুম-সৌখিন দখিন হাওয়ার চিত্ত গীত-উতরোল।।
অতনুর ঐ বিষ-মাখা শর নয় ও-দোয়েল শ্যামার শিস্,
ফোটা ফুলে উঠ্‌ল ভ’রে কিশোরী বনের নিচোল।।
গুল্‌বাহারের উত্তরী কার জড়াল তরু-লতায়,
মুহু মুহু ডাকে কুহু তন্দ্রা-অলস, দ্বার খোল।
রাঙা ফুলে ফুল্ল-আনন দোলে কানন-সুন্দরী,
বসন্ত তার এসেছে আজ বরষ পরে পথ-বিভোল্।

বাণী

আমি যদি আরব হ’তাম — মদিনারই পথ।
এই পথে মোর চ’লে যেতেন নূর নবী হজরত।।
পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্না হয়ে গ’লে যেতাম অম্‌নি পরম সুখে;
সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ্‌-ই-তুরে,
দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত।।
মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে
আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে।
হাসান হোসেন হেসে হেসে নাচতো আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত।।

বাণী

প্রিয় যাই যাই ব’লো না, না না না
আর ক’রো না ছলনা, না না না॥
আজো মুকুলিকা মোর হিয়া মাঝে
না-বলা কত কথা বাজে,
অভিমানে লাজে বলা যে হ’ল না॥
কেন শরমে বাধিল কে জানে
আঁখি তুলিতে নারিনু আঁখি পানে।
প্রথম প্রণয়-ভীরু কিশোরী
যত অনুরাগ তত লাজে মরি,
এত আশা সাধ চরণে দ’লো না॥

বাণী

কোন্ মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদ্না হানে
			জানি গো, সেও জানেই জানে।
আমি কাঁদি তাইতে যে তার ডাগর চোখে অশ্রু আনে,
			বুঝেছি তা প্রাণের টানে।।
বাইরে বাঁধি মনকে যত
ততই বাড়ে মর্ম-ক্ষত,
মোর সে ক্ষত ব্যথার মতো
			বাজে গিয়ে তারও প্রাণে,
			কে কয়ে যায় কানে কানে।।
উদাস বায়ু ধানের ক্ষেতে ঘনায় যখন সাঁঝের মায়া,
দুই জনারই নয়ন-পাতায় অম্‌নি নামে কাজল ছায়া।।
দুইটি হিয়াই কেমন কেমন —
বদ্ধ ভ্রমর পদ্মে যেমন,
হায়,অসহায় মূকের বেদন,
			বাজ্‌লো শুধু সাঁঝের গানে,
			পূবের বায়ুর হুতাশ তানে।।

বাণী

এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি॥
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি॥
কেতকী-কদম-যূথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা,
পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
তড়াগে পুকুরে থই থই করে শ্যামল শোভার নবনী॥
শাপলা শালুক সাজাইয়া সাজি শরতে শিশির নাহিয়া,
শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগামনী-গীত গাহিয়া।
অঘ্রাণে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনি॥
শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,
ভাটিয়ালি গাও মাঝিদের সাথে গো, কীর্তন শোনো রাতে মা।
ফাল্গুনে রাঙা ফুলের আবিরে রাঙাও নিখিল ধরণী॥

বাণী

যাদের তরে এ সংসারে খাটনু জনম ভর,
তাদের কেউ হবে না হে নাথ মরণ-সাথি মোর।।
	শত পাপ শত অধর্ম ক’রে
বিভব রতন আনলেম ঘরে
সে সকল ভাগ বাটোয়ারা ক’রে খাবে পাঁচ ভুত চোর।।
জীবনে তোমার লই নাই নাম তোমাতে হয় নাই মতি
মরণ-বেলায় তাই কাঁদি প্রভু কি হবে মোর গতি।
	চেয়ে দেখি আজ  যাবার বেলায়
	কর্ম কেবল মোর সাথে যায়
তরিবার আর না দেখি উপায় বিনা পদতরী তোর।।