আধুনিক

  • ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধ্যা

    বাণী

    ওরে	শুভ্রবসনা রজনীগন্ধ্যা বনের বিধবা মেয়ে,
    	হারানো কাহারে খুঁজিস নিশীথ-আকাশের পানে চেয়ে।।
    	ক্ষীণ তনুলতা বেদনা-মলিন,
    	উদাস মূরতি ভূষণবিহীন,
    	তোরে হেরি ঝরে কুসুম-অশ্রু বনের কপোল বেয়ে।।
    	তুইলুকায়ে কাঁদিস রজনী জাগিস সবাই ঘুমায় যবে,
    	বিধাতারে যেন বলিস — দেবতা আমারে লইবে কবে।
    	করুণ শুভ্র ভালোবাসা তোর
    	সুরভি ছড়ায় সারা নিশি ভোর,
    	প্রভাত বেলায় লুটাস ধূলায় যেন-কারে নাহি পেয়ে।।
    
  • কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও

    বাণী

    কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও (প্রিয়) মালা গাঁথ অকারনে
    আমি চয়েছিনু একটি কুসুম সেই কথা পড়ে মনে।।
    	তব ফুলবনে কত ছায়া দোলে
    	জুড়াইতে চেয়েছিনু তারি তলে
    চাহিলে না ফিরে চলে গেলে ধীরে ছায়া-ঢাকা অঙ্গনে।।
    অঞ্জলি পাতি' চেয়েছিনু, তব ভরা ঘটে ছিল বারি
    শুষ্ক-কন্ঠে ফিরিয়া আসিনু পিপাসিত পথচারী।
    	বহুদিন পরে দাঁড়াইনু এসে
    	তোমারি দুয়ারে উদাসীন বেশে
    শুকানো মালিকা কেন দিলে তুমি তব ভিক্ষার সনে।।
    
  • কত যুগ পাই নাই তোমার দেখা

    বাণী

    কত যুগ পাই নাই তোমার দেখা
    থাকিতে পারি না আর একা একা।।
    	জানি না কোথায় থাকো
    	সেথায় আমারে ডাকো
    মুছে এলো বুকে বঁধু স্মৃতির রেখা।।
    তুমি জলধি, তোমাতে মিশে শতেক নদী
    আম রুদ্ধ-সায়র কাঁদি নিরবধি।
    	দেখা কি পাব না হায়
    	আশা যে ফুরায়ে যায়
    শ্রাবণে এলো গো মেঘ, কাঁদিছে কেকা।।
    

  • কথার কুসুমে গাঁথা গানের মালিকা

    বাণী

    কথার কুসুমে গাঁথা গানের মালিকা কার।
    ভেসে এসে হতে চায় গো আমার গলার হার।।
    		আমি তারে নাহি জানি
    		তার সুরের সূত্রখানি,
    তবু বিজড়িত হয় কেন গো, আমার কঙ্কনে বারবার।।
    তার সুরের তুলির পরশে, ওঠে আমার ভুবন রাঙ্গি’,
    কোন বিস্মৃত জনমের যেন কত স্মৃতি ওঠে জাগি’।
    		আমার রাতের নিদে
    		তার সুর এসে প্রাণে বিঁধে,
    যার সুর এত চেনা, কবে দেখা পাবো সেই অচেনার।।
    
  • কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই

    বাণী

    উভয়ে : 	কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই সুদূর বিমানে আমরা দু’জনে।
    		কানন-কান্তর শিহরি’ ওঠে মোদের প্রণয়-মদির কূজনে।।
    স্ত্রী 	:	ভ্রমর গুঞ্জে মঞ্জুল গীতি, হেরিয়া আমার বঁধূর প্রীতি,
    পুরুষ :	আমার প্রিয়ার নয়নে চাহি’ কুসুম ফুটে ওঠে বিপিনে বিজনে।।
    স্ত্রী 	:	তোমা ছাড়া স্বর্গ চাহি না, প্রিয়!
    		মোদের প্রেমে চাঁদ আসে নেমে মাটির পাত্রে পান করি অমিয়।।
    পুরুষ :	বিশ্ব ভুলায়ে ও-রাঙা পায়ে আমারে বেঁধেছে জীবনে মরণে।।
    
  • কবি সবার কথা কইলে এবার

    বাণী

    কবি,		সবার কথা কইলে, এবার নিজের কথা কহ।
    (কেন)	নিখিল ভুবন অভিমানের আগুন দিয়ে দহ।।
    		কে তোমারে হান্‌ল হেলা, কবি!
    (হায়!)	সুরে সুরে আঁক কি গো সেই বেদনার ছবি?
    		কা’র বিরহ রক্ত ঝরায় বক্ষে অহরহ।।
    		কোন্‌ ছন্দময়ীর ছন্দ দোলে আমার গানে গানে,
    		তোমার সুরের স্রোত ব’য়ে যায় কাহার প্রেমের টানে গো —
    		কাহার চরণ পানে?
    		কাহার গলায় ঠাঁই পেল না ব’লে
    (তব)		কথার মালা ব্যথার মত প্রতি হিয়ায় দোলে,
    (তোমার)	হাসিতে যে বাঁশি বাজে, সে ত’ তুমি নহ।।
    

    ১. সবার কথা কইলে কবি নিজের কথা কহ।

  • কলঙ্ক আর জোছনায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ

    বাণী

    কলঙ্ক আর জোছনায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ
    জাগালে জোয়ার ভাঙ্গিলে আবার সাগর-কুলের বাঁধ।।
    	তিথিতে তিথিতে সুদূর অতিথি
    	ভোলাও জাগাও ভুলে যাওয়া স্মৃতি
    এড়াইতে গিয়ে পরানে জড়াই তোমার রূপের ফাঁদ।।
    চাহি না তোমায় তবু তোমারেই ভাবি বাতায়নে বসি’
    আমার নিশীথে তুমি আনিয়াছ শুল্কা চতুর্দশী।
    	সুন্দর তুমি তবু হয় মনে
    	আছে কলঙ্ক জোছনার সনে
    মুখোমুখি বসে কাঁদে তাই বুকে সাধ আর অবসাদ।।
    
  • কাহার তরে হায় নিশিদিন কাঁদে মন-প্রাণ

    বাণী

    কাহার তরে হায় নিশিদিন কাঁদে মন-প্রাণ।
    জানে শুধু সেই, জানে মোর হৃদি ব্যথা-ম্লান।।
    কমল-পাতে যেন জল, — প্রণয় তার সই
    বুলবুলি চপল দ'লে যায় লতিকা বিতান।।
    জানে শুধু সে নিতে মন, দিতে জানে না
    ছলিয়া চলে সে-মুকুল, বারণ মানে না।
    জীবন ল'য়ে সে খেলে মরণ-খেলা,
    সকালে যারে চাহে তাহে বিকালে হেলা।
    কুসুম-সমাধি রচে সে নিঠুর পাষাণ।।
    চাহি শুধু এই, — যেন সে বাসিয়া ভালো
    এমনি ব্যথা পায় সে ওগো ভগবান।।
    
  • কে ডাকিলে আমারে আঁখি তুলে

    বাণী

    কে	ডাকিলে আমারে আঁখি তুলে'।
    	এই প্রভাতে তটিনী-কূলে কূলে।।
    ঐ	ঘুমায়ে সকলি, জাগেনি কেউ 
    	জল নিতে এখনো আসেনি বউ, 
    	শুধু তব নদীতে জেগেছে ঢেউ — 
    	মেলেছ নয়ন কানন-ফুলে।।
    	যে সুবাস ঝরে ও-এলোকেশে 
    	কমলে তা' দিলে নাহিতে এসে', 
    	তব তনু-মন দীঘিতে ভেসে' —
    	মাতাইছে, মধুপ পথ ভুলে।
    ও	শিশির-কপোল-স্বেদ বারি 
    	পড়িল ঝরি' নয়নে আমারি, 
    	জাগিয়া হেরি রূপ-মনোহারী —
    	দাঁড়ায়ে উষসী তোরণ-মূলে।।
    
  • কে বলে গো তুমি আমার নাই

    বাণী

    কে বলে গো তুমি আমার নাই?
    তোমার গানে পরশ তব পাই।।
    তোমায়-আমায় এই নীরবে
    জানাজানি অনুভবে,
    তোমার সুরের গভীর রবে আমারি কথাই।।
    হে বিরহী আমায় বারে বারে
    স্মারণ করো সুরের সিন্ধু পারে
    ওগো গুণী পেয়ে মায়
    যদি তোমার গান থেমে যায়,
    উঠবে কাঁদন সুরের সভায় চাই না কাছে তাই।।
    
  • কেন মনোবনে মালতী-বল্লরি দোলে

    বাণী

    কেন	মনোবনে মালতী-বল্লরি দোলে - জানি না।
    কেন	মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব-তলে - জানি না।।
    কেন	ঊর্মিলা-ঝরনার পাশে
    সে	আপন মঞ্জরি-ছায়া দেখে' হাসে,
    কেন	পাপিয়া কুহু মুহু মুহু বোলে, জানি না।।
    চৈতালি-চাঁপা কয়, মালতী শোন
    শুনেছিস বুঝি মধুকর গুঞ্জন,
    তাই বুঝি এত মধু সুরভি উথলে —
    মধু-মালতী বলে, জানি না, জানি না।।
    
  • গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়

    বাণী

    গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়, কে যেন আমারে ডাকে —
    	সে কি তুমি, সে কি তুমি?
    কার স্মৃতি বুকে পাষাণের মত ভার হয়ে যেন থাকে —
    	সে কি তুমি, সে কি তুমি?
    কাহার ক্ষুধিত প্রেম যেন, হায়, ভিক্ষা চাহিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়;
    কার সকরুণ আঁখি দু’টি যেন রাতের তারার মত
    মুখপানে চেয়ে থাকে – সে কি তুমি, সে কি তুমি?
    নিশির বাতাস কাহার হুতাশ দীরঘ নিশাস সম
    ঝড় তোলে এসে অন্তরে মোর, ওগো দুরন্ত মম।
    	সে কি তুমি, সে কি তুমি?
    মহাসাগরের ঢেউ–এর মতন, বুকে এসে বাজে কাহার রোদন,
    ‘পিয়া পিয়া’ নাম জপে অবিরাম বনের পাপিয়া পাখি
    আমার চম্পা শাখে – সে কি তুমি, সে কি তুমি?
    
  • গভীর নিশীথে জাগি’ খুঁজি তোমারে

    বাণী

    গভীর নিশীথে জাগি’ খুঁজি তোমারে।
    দূর গগনে প্রিয় তিমির-‘পারে।।
    জেগে যবে দেখি হায় তুমি নাই কাছে
    আঙিনাতে ফুটে’ ফুল ঝ’রে পড়ে আছে,
    বাণ-বেঁধা পাখি সম আহত এ প্রাণ মম —
    লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।।
    মৌন নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে,
    এসো প্রিয়, এই বেলা বক্ষে নীরবে।
    কত কথা কাঁটা হ’য়ে বুকে আছে বিঁধে
    কত আভিমান কত জ্বালা এই হৃদে,
    দেখে যাও এসো প্রিয় কত সাধ ঝ’রে গেল —
    কত আশা ম’রে গেল হাহাকারে।।
    

  • গান ভুলে যাই

    বাণী

    গান ভুলে যাই, মুখ পানে চাই, সুন্দর হে (সুন্দর মোর!)।
    তব নয়ন পানে চাহি’ কণ্ঠের সুর কাঁপে থর থর হে (সুন্দর মোর!)।।
    		তোমার অনুরাগে, ওগো বুল্‌বুল্‌
    	মোর	গানের লতায় ফোটে কথার ফুল,
    অশ্রু হয়ে সেই ফুল তব পায়ে ঝরিতে চায় ঝর ঝর হে।।
    এ নহে গান প্রিয়, কান্না এ যে তব বিরহে,
    অন্তর-শিলাতলে রোদনের সুরধুনী সুর হয়ে বহে।
    		প্রিয়, এ নহে গানের ছন্দ,
    		এ যে আনন্দে-বিষাদে মনের দ্বন্দ্ব,
    (এ যে) রাগিণীর তলে তব অনুরাগিণীর মর্মের ক্রন্দন-বিলাপ মর্মর হে।।
    
  • গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে

    বাণী

    গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে।
    তা’রি আশায় গানের ভেলা ভাসাই পারাবারে।।
    	জানি জানি আমার এ সুর
    	পাবেই পাবে চরণ বঁধুর
    ঐ ভেলাতে আসবে বঁধু গভীর অন্ধকারে।।
    ঘুমে যখন মগ্ন সবাই বন্ধু আমার আসে
    ফুলের মতন সুরগুলি তার মুখ চেয়ে’হাসে।
    	উদ্দেশে তার গানগুলি মোর
    	যায় ভেসে যায় নেশায় বিভোর
    যেমন ক’রে ছায় গো তপন চাঁদের অধিকারে।।
    
  • ঘুমাও ঘুমাও দেখিতে এসেছি

    বাণী

    ঘুমাও,ঘুমাও,দেখিতে এসেছি ভাঙাতে আসিনি ঘুম
    কেউ জেগে কাঁদে,কারো চোখে নামে নিদালির মৌসুম॥
    	দেখিতে এলাম হ'য়ে কুতুহলী
    	চাঁপা-ফুল দিয়ে তৈরী পুতুলী
    দেখি,শয্যায় স্তূপ হ'য়ে আছে জোছনার কুমকুম
    আমি নই, ঐ কলঙ্কী চাঁদ নয়নে হেনেছে চুম্ ।।
    রাগ করিও না, অনুরাগ হ'তে রাগ আরো ভালো লাগে,
    তৃষ্ণাতুরের কেউ জল চায় কেউ বা শিরাজি মাগে।
    	মনে কর, আমি লোলুপ বাতাস
    	চোর-জোছনা, ফুলের সুবাস
    ভয় নাই, আমি চলে যাই ডাকি' নিশীথিনী নিঃঝুম।।
    
  • ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হ’য়ে

    বাণী

    ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হ’য়ে আমার গানের বুলবুলি —
    করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।।
    ফুল ফুটিয়ে ভোর বেলাতে গান গেয়ে
    নীরব হ’ল কোন নিষাদের বান খেয়ে;
    বনের কোলে বিলাপ করে সন্ধ্যা–রাণী চুল খুলি’।।
    কাল হ’তে আর ফুটবে না হায় লতার বুকে মঞ্জরী,
    উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুণ নিশাস্‌ মর্মরি’।
    গানের পাখি গেছে উড়ে, শূন্য নীড় —
    কণ্ঠে আমার নাই যে আগের কথার ভীড়
    আলেয়ার এ আলোতে আর আসবে না কেউ কূল ভুলি’।।
    
  • ছেড়ে দাও মোরে আর হাত ধরিও না

    বাণী

    ছেড়ে দাও মোরে আর হাত ধরিও না
    প্রেম যারে দিতে পারিলে না
    	তারে আর কৃপা করিও না।।
    আমি  করুনা চাহিনি কভু কারো কাছে
    বহু লোক পারে, তব কৃপা যারা যাচে
    যারে  হৃদয়ে দিলে না ঠাঁই
    	তার তরে কাদিঁও আখিঁজল ঝুরিও না।।
    ভুল করেছিনু যেথা শুধু বিষ অসুন্দরের ভিড়,
    সেই   পৃথিবীতে কেঁদেছি খুজিঁয়া প্রেম-যমুনার তীর।
    যার তরণী ভাসিল বিরহের পারাবারে
    পিছু ডেকে আর ফিরাতে চেয়ো না তারে
    আমারে পাষাণ-বিগ্রহ ক'রে
    	আর মালা পরিও না।।
    

  • জাগো মালবিকা জাগো মালবিকা

    বাণী

    জাগো মালবিকা! জাগো মালবিকা!
    ডাকে তোমায় গগন-সীমায় মেঘ-বালিকা।।
    বরষার মিনতি মানো, মেঘপানে ভুরু হানো,
    বন-ডালি ভরি' আনো নীপ-যূথিকা।।
    তব অবগুণ্ঠন খোলো, তমাল ঝুলনায় দোলো,
    তরঙ্গ-লহরি তোলো সাগরিকা।।
    
  • জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ

    বাণী

    জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ।
    তুমি আপনি এসে দেবে ধরা দূর-আকাশের চাঁদ।।
    	চকোর নহি মেঘও নহি
    	আপন ঘরে বন্দী রহি’
    আমি শুধু মনকে কহি কাঁদ নিশি দিন কাঁদ।।
    কূল-ডুবানো জোয়ার কোথা পাব হে সুন্দর?
    হে চাঁদ আমি সাগর নহি পল্লী-সরোবর।
    	নিশীথ রাতে আমার নীরে,
    	প্রেমের কুমুদ ফোটে ধীরে,
    মোর ভীরু প্রেম যেতে নারে ছাপিয়ে লাজের বাঁধ।।