আধুনিক

  • আমি পথ-ভোলা ভিনদেশি গানের পাখি

    বাণী

    আমি	পথ-ভোলা ভিনদেশি গানের পাখি
    	তোমাদের সুরের সভায় এই অজানায় লহ গো ডাকি'।।
    	তোমরা বেঁধেছে বাসা যে তরু-শাখায়
    	আমারে বসিতে দিও তাহারি ছায়ায়
    	গাহিবার আছে আশা, জানি না গানের ভাষা
    তবু	ভালোবাসা দিয়ে বাঁধ গো রাখি।।
    	মায়াময় তোমাদের তরুলতা, ফুল
    	তোমাদের গান শুনে' পথ হ'ল ভুল।
    	যেন শতবার এসে' জন্মেছি এই দেশে-
    বন্ধু	হে বন্ধু, অতিথিরে চিনিবে না-কি।।
    

  • আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে

    বাণী

    আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে
    আশা-প্রদীপ আমি নিশির শীশ-মহলে।।
    রাতের কপোলে আমি ছলছল অশ্রুর জল,
    আমি ধরণীতে হিম-কণা টলমল, নব দুর্বাদলে।।
    নব অরুণোদয়ের আমি ইঙ্গিত
    বিহগ-কণ্ঠে আমি জাগাই শুভ-সঙ্গীত।
    আমিকনক-কদম তিমির নীপ শাখায়
    আমিমধ্যমণি মালিকায়, শ্যাম গগন-গলে।।
    

  • আমি যার নূপুরের ছন্দ

    বাণী

    আমি যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর - 
    কে সেই সুন্দর কে! 
    আমি যার বিলাস-যমুনা বিরহ-বিধুর 
    কে সেই সুন্দর কে।। 
    যাহার গানের আমি বনমালা 
    আমি যার কথার কুসুম-ডালা, 
    না-দেখা সুদূর - 
    কে সেই সুন্দর কে।। 
    যার শিখী-পাখা লেখনী হয়ে 
    গোপনে মোরে কবিতা লেখায় 
    সে রহে কোথায় হায়! 
    আমি যার বরষার আনন্দ-কেকা 
    নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনী-রেখা, 
    যে মম অঙ্গে কাঁকন-কেয়ূর 
    কে সেই সুন্দর কে।। 
    
  • আমি সন্ধ্যামালতী বনছায়া অঞ্চলে

    বাণী

    আমি	সন্ধ্যামালতী বনছায়া অঞ্চলে
    	লুকাইয়া রই ঘন পল্লব তলে ॥
    	বিহগের গীতি ভ্রমরের গুঞ্জন, নীরব হয় যখন –
    আমি	চাঁদেরে তখন পূজা করি আঁখি-জলে ॥
    আমি	লুকাইয়া কাঁদি বনের শকুন্তলা
    	মনের কথা এ জনমে হ’ল না বলা।
    গভীর নিশীথে বন-ঝিল্লির সুরে, ডাকি দূর বন্ধুরে –
    আমি	ঝ’ড়ে পড়ি যবে প্রভাতে সবার হৃদয় মুকুল খোলে ॥
    

  • আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি

    বাণী

    আমি	সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি
    তুমি	সুন্দর, তব গান গেয়ে নিজেরে ধন্য মানি।।
    		আসিয়াছি সুন্দর ধরণীতে
    		সুন্দর যারা তাদেরে দেখিতে
    	রূপ-সুন্দর দেবতার পায় অঞ্জলি দেই বাণী।।
    	রূপের তীর্থে তীর্থ-পথিক যুগে যুগে আমি আসি'
    	ওগো সুন্দর বাজাইয়া যাই তোমার নামের বাশিঁ।
    		পরিয়া তোমার রূপ-অঞ্জন
    		ভুলেছে নয়ন রাঙিয়াছে মন
    	উছলি' উঠুক মোর সঙ্গীতে সেই আনন্দখানি।।
    
  • আয় ঘুম আয় ঘুম আয় মোর গোপাল ঘুমায়

    বাণী

    আয় ঘুম আয় ঘুম আয় মোর গোপাল ঘুমায়
    বহু রাত্রি হল আর জাগাসনে মায়।।
    কোলে লয়ে তোরে ধীরে ধীরে দোলাবো
    ঘুম-পাড়ানিয়া গান তোরে শোনাবো
    গায়ে হাত বুলাবো পাঙ্খা ঢুলাবো
    মন ভুলাবো কত রূপকথায়।।
    তোরে	কে বলে চঞ্চল একচোখো সে
    মোর	শান্ত গোপাল থাকে গোষ্ঠে ব’সে
    তোরে	কে বলে ঝড় তোলে থির যমুনায়
    সে যেদিন রাত ঘোরে তার মা’র পায় পায়।।
    
  • আসে রজনী সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে

    বাণী

    আসে রজনী, সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে
    ছায়া-আঁচল-ঢাকা কানন-তলে।।
    তিমির দু’ কূল দুলে গগনে, গোধূলি-ধূসর সাঁঝ-পবনে
    তারার মানিক অলকে ঝলে।।
    পূজা আরতি লয়ে চাঁদের থালায়
    আসিল সে অস্ত-তোরণ নিরালায়।
    ললাটের টিপ্‌ জ্বলে সন্ধ্যা-তারা
    গিরি-দরি বনে ফেরে আপন-হারা
    থামে ধীরে ধীরে বিরহীর নয়ন-জলে।।
    
  • উঠেছে কি চাঁদ সাঁঝ গগনে

    বাণী

    উঠেছে কি চাঁদ সাঁঝ গগনে
    আজিকে আমার বিদায় লগনে।।
    জানালা পাশে চাঁপার শাখে
    ‘বউ কথা কও’ পাখি কি ডাকে?
    ফুটেছে কি ফুল মালতী বকুল —
    আমার সাধের কুসুম বনে সাঁঝ গগনে।।
    তুলসী তলায় জ্বলেছে কি দীপ
    পরেছে আকাশ তারকার টিপ?
    হারিয়ে যাওয়া বঁধূ অবেলায়
    এলো কি ফিরে দেখিতে আমায়,
    ঝুরিছে বাঁশি পিলু বারোয়াঁয় —
    কেন গো আমার যাবার ক্ষণে।।
    
  • এক্‌লা ভাসাই গানের কমল

    বাণী

    	এক্‌লা ভাসাই গানের কমল সুরের স্রোতে।
    	খেলার ছলে ওপার পানে এপার হ’তে।।
    	আসবে গো এই গাঙের কূলে হয়ত ভুলে আমার প্রিয়া
    	খোঁপায় নেবে আমার গানের কমল তুলে তামার প্রিয়া
    	খুঁজতে আমায় আসবে সুরের নদী-পথে।।
    	নাম-হারা কোন্ গাঁয়ে থাকে অচেনা সে,
    তারে	না-ই জানিলাম, গান ভেসে যাক্ তাহার আশে।
    	নদীর জলে আল্‌তা-রাঙা পা ডুবায়ে, রয় সে মেয়ে
    	গানের কমল লাগে গো তা’র কমল-পায়ে, উজান বেয়ে,
    	সেদিন অমর হয় মোর গান, যায় অমরায় পুষ্প-রথে।।
    
  • এখনো ওঠেনি চাঁদ এখনো ফোটেনি তারা

    বাণী

    এখনো ওঠেনি চাঁদ এখনো ফোটেনি তারা
    এখনো দিনের কাজ হয়নি যে মোর সারা —
    		হে পথিক যাও ফিরে।।
    এখনো বাঁধিনি বেণী, তুলিনি এখনো ফুল
    জ্বালি নাই মণিদীপ মম মন–মন্দিরে —
    		হে পথিক যাও ফিরে।।
    পল্লব–গুণ্ঠনে নিশি–গন্ধার কলি
    চাহিতে পারে না লাজে দিবস যায়নি বলি’।
    এখনো ওঠেনি ঢেউ থির সারসির নীরে —
    		হে পথিক যাও ফিরে।।
    যবে ঝিমাইবে চাঁদ ঘুমে তখন তোমার লাগি’
    র’ব একা পথ চেয়ে বাতায়ন–পাশে জাগি’
    কবরীর মালা খুলে ফেলে দেব ধীরে ধীরে —
    		হে পথিক যাও ফিরে।।
    

  • এখনো মেটেনি আশা এখনো মেটেনি সাধ

    বাণী

    এখনো মেটেনি আশা এখনো মেটেনি সাধ।
    এখনো নয়ন মানে নাই তার চাহনির অপরাধ।।
    	আজো ঢেউগুলি নীল সায়রের কোলে
    	জল-তরঙ্গে ঝঙ্কার তোলে
    পিয়াসি চাতক আজো চেয়ে ফেরে বরষার পরসাদ।।
    কবে ফুটছিল রূপের কুসুম বনানীর লতা-গাছে,
    আজো গৌরী-চাঁপার রঙটুকু তার মরমে লাগিয়া আছে।
    	চ'লে গেছে চাঁদ আলো আবছায়
    	দাগ ফেলে হিয়া-আয়নার গায়
    থেমেছে কানুর বাঁশরি থামেনি যমুনার কলনাদ।।
    ঢাল পিয়ালে লাল সিরাজী নিত্য দোদুল তালে তালে
    আঁকবো বুকে প্রীতির ব্যথা রঙ্গিন নেশায় রঙ্গিন জালে।।
    মত্ত হবো চিত্ত হারা বেদনা ভরা বদমেজাজি
    করলে পাগল ব্যর্থ আশায় করলে প্রেমরে দাগাবাজি।।
    রঙ্গিন বঁধু তুমি শুধু, তুমি শুধু সত্যি হবে
    রঙ্গিন নেশায় রঙ্গিন পথে তুমি শুধু সাথী হবে।।
    শুল্ক তালু কণ্ঠ আমার দে রে আমার রুগ্ন গালে
    দে রে সাকি দে রে ঢেলে নিত্য দোদুল তালে তালে।।
    
  • এতো ঘুম নয় সই নয়ন ভরা রঙিন স্বপনে

    বাণী

    এতো ঘুম নয় সই নয়ন ভরা রঙিন স্বপনে
    আমি যেন হারিয়ে গেছি কোন ফুলবনে
    	ওগো রঙিন স্বপনে।।
    আমি যেন চাঁদনি রাতে
    মিশিয়ে গিয়ে হাওয়ার সাথে
    গোপন প্রিয়ার গোপন কথা শুনছি গোপনে।।
    আমি যেন মৌমাছিদের হালকা পাখায় বসি
    কোন প্রেয়সী মন টানে মোর কোন সে রুপসী।
    আমি যেন কেমন করে
    মেতেছি মোর রূপের তরে
    অশান্ত যৌবনের একি বাহুর বাঁধনে।।
    

  • এলো ঐ পূর্ণ শশী ফুল-জাগানো

    বাণী

    এলো ঐ		পূর্ণ শশী		ফুল-জাগানো
    বহে বায়		বকুল-বনে	ঘুম-ভাঙানো।।
    লাগিল		জাফরানি-রঙ	শিউলি-ফুলে
    ফুটিল		প্রেমের কুঁড়ি	পাপড়ি খুলে,
    খুশির আজ	আমেজ জাগে	মন-রাঙানো।।
    চাঁদিনী		ঝিলমিলায়	ঝিলের জলে,
    আবেশে		শাপলা ফুলের	মৃণাল টলে,
    জাগে ঢেউ	দীঘির বুকে	দোল-লাগানো।।
    এসো আজ	স্বপন-কুমার	নিরিবিলি
    খুলিয়া		গোপন প্রাণের	ঝিলিমিলি,
    এসো মোর	হতাশ প্রাণে	ভুল-ভাঙানো।।
    
  • এসো প্রিয় মন রাঙায়ে

    বাণী

    এসো প্রিয়, মন রাঙায়ে ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙায়ে
    মন মাধবী বন দুলায়ে, দুলায়ে, দুলায়ে।।
    শোন ‘পিউ পিউ’ ডাকে পাপিয়া
    মোরে সেই সুরে ডাক ‘পিয়া, পিয়া’
    তব আদর-পরশ বুলায়ে, বুলায়ে, বুলায়ে।।
    	যদি আন কাজে ভুলে রহি
    	চলে যেও না হে মোর বিরহী
    দিও প্রিয়, কাজ ভুলায়ে, ভুলায়ে, ভুলায়ে।।
    
  • ও কে উদাসী আমায় হায়

    বাণী

    ও কে উদাসী আমায় হায়
    ডাকে আয় আয়
    	গোধূলি-বেলায় বাজায়ে বাঁশরি।
    তা’র পাহাড়ি সুরে
    মোর নয়ন ঝুরে
    	মম কুল-লাজ গৃহ-কাজ যাই পাশরি’।।
    তা’র সুরের মায়ায় আকাশ ঝিমায়,
    	চাঁদের চোখে তিমির ঘনায় —
    তা’র বিরহে মধুর মোহে জীবন মরণ পলকে বিসরি।।
    
  • ওগো দেবতা তোমার পায়ে গিয়াছিনু ফুল দিতে

    বাণী

    ওগো	দেবতা তোমার পায়ে গিয়াছিনু ফুল দিতে
    মোর	মন চুরি ক’রে নিলে কেন তুমি অলখিতে।।
    আজি	ফুল দিতে শ্রীচরণে
    মম	হাত কাঁপে ক্ষণে;
    কেন	প্রণাম করিতে গিয়া- প্রিয় সাধ জাগে পরশিতে।।
    তুমি	দেবতা যে মন্দিরে- কাছে এলে যাই ভুলে
    বঁধু	আমি দীন দেবদাসী কেন তুমি মোরে ছুঁলে।
    		তুমি কাছে এলে যাই ভুলে।
    আমি	হাতে আনি হেমঝারি’,
    তুমি	কেন চাহ আঁখি-বারি;
    আমি	পূজা-অঞ্জলি আনি, তুমি কেন চাহ মালা নিতে।।
    

  • ওগো তারি তরে মন কাঁদে হায়

    বাণী

    ওগো	তারি তরে মন কাঁদে হায়, যায় না যারে পাওয়া
    	ফুল ফোটে না যে কাননে, কাদেঁ দখিন হাওয়া।।
    যে	মায়া-মৃগ পালিয়ে বেড়ায়   
    	কেন এ মন তার পিছে ধায়
    যে	দ'লে গেল পায়ে আমায় কেন তাহারি পথ চাওয়া।।
    যে	আমারে ভুলে হলো সুখি যায় না তারে ভোলা,
    যে	ফিরিবে না আর, তারি তরে রাখি দুয়ার খোলা।
    	মৌন পাষাণ যে দেবতা
    	হেরার ছলে কয় না কথা
    	তারি দেউল দ্বারে কেন বন্দনা গান গাওয়া।।
    
  • ওগো পিয়া তব অকরুণ ভালোবাসা

    বাণী

    ওগো পিয়া তব অকরুণ ভালোবাসা।
    অন্তরে দিল বিপুল বিরহ, কবিতায় দিল ভাষা।।
    	মোর গানে দিল সুর
    	করুণ ব্যথা বিধুর,
    বাণীতে দিল সুদূর স্বর্গের পিপাসা।।
    তুমি ভালো করিয়াছ ভালোবাস নাই মোরে,
    রাখ নাই ধ’রে আমারে তোমার ক’রে।
    	মম বিরহের বেদনাতে
    	তাই ত্রিভুবন কাঁদে সাথে,
    ভুলেছি সবারে চেয়ে তোমারে পাবার আশা।।
    
  • ওগো সুন্দর তুমি আসিবে বলিয়া

    বাণী

    ওগো সুন্দর! তুমি আসিবে বলিয়া বনপথে পড়ে ঝরি’
    				(রাঙা) অশোকের মঞ্জরি।
    হাসে বনদেবী বেণীতে জড়ায়ে মালতীর বল্লরী,
    				নব কিশলয় পরি’।।
    	কুমুদী-কলিকা ঈষৎ হেলিয়া
    	চাঁদেরে নেহারি হাস মুচিকিয়া,
    মহুয়ার বনে ভ্রম-ভ্রমরী ফিরিতেছে গুঞ্জরি’।।
    যাহা কিছু হেরি ভাল লাগে আজ লুকাইতে নারি হাসি,
    কাজ করি আর শুনি যেন কানে মিঠে পাহাড়িয়া বাঁশি।
    	এক শাড়ি খুলে পরি’ আর শাড়ি
    	বারে বারে মুখ মুকুরে নেহারি,
    দুরু দুরু হিয়া উঠে চমকিয়া, অকারণে লাজে মরি।।
    
  • ওরে ও-স্রোতের ফুল

    বাণী

    ওরে ও-স্রোতের ফুল!
    ভেসে ভেসে হায় এলি অসহায় কোথায় পথ-বেভুল।।
    	কোল্ খালি ক’রে কোন্ লতিকার
    	নিভাইয়া নয়নের জ্যোতি কা’র,
    বনের কুকুম অকূল পাথারে খুঁজিয়া ফিরিস্ কূল।।
    ভবনের স্নেহ নারিল রাখিতে ঠেলে ফেলে দিল যা’রে,
    সারা ভুবনের স্নেহ কি কখনো তাহারে ধরিতে পারে।
    	জল নয়, তোর জননী যে ভুঁই
    	অভিমানী! সেথা চল্ ফিরে তুই,
    ধূলিতেও যদি ঝরিস্ সেথায় স্বর্গ সেই অতুল।।