দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার
বাণী
দোলে নিতি নব রূপের টেউ-পাথার ঘনশ্যাম তোমারি নয়নে। আমি হেরি যে নিখিল বিশ্বরূপ-সম্ভার তোমারি নয়নে॥ তুমি পলকে ধর নাথ সংহার-বেশ হও পলকে করুণা-নিধান পরমেশ। নাথ ভরা যেন বিষ অমৃতের ভান্ডার তোমার দুই নয়নে॥ ওগো মহা-শিশু, তব খেলা-ঘরে একি বিরাট সৃষ্টি বিহার করে, সংসার চক্ষে তুমিই হে নাথ, সংসার তোমারি নয়নে॥ তুমি নিমেষে রচি নব বিশ্বছবি ফেল নিমেষে মুছিয়া হে মহাকবি, করে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড ভুবন-সঞ্চার তোমারি নয়নে॥ তুমি ব্যাপক ব্রহ্ম চরাচরে জড় জীবজন্তু নারী-নরে, কর কমল-লোচন, তোমার রূপ বিস্তার হে আমারি নয়নে॥
পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে
বাণী
পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে। ‘পিউ পিউ পিউ কাঁহা’ পাপিয়া পিয়া বোলে।। সে পিয়া পিয়া সুরে বাদল ঝুরে, নদী-তরঙ্গ দোলে। কূলে কূলে কুলু কুলু নদী-তরঙ্গ দোলে। ফুটিল দল মেলি’ কেতকী, বেলি, শিখী পেখম খোলে। দু’লে দু’লে দু’লে নেচে’ শিখী পেখম খোলে।। পিয়ায় যা’রা নাহি পেল হেথায়, তাহারা কি এসেছে ধরায় পুন হইয়া পাপিয়া পাখি? দেখিয়া ঘরে ঘরে তরুণীর কালো আঁখি ‘পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা’ আজিও উঠিছে ডাকি’! পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে।।
আমার দুখের বন্ধু তোমার কাছে
বাণী
আমার দুখের বন্ধু, তোমার কাছে চাইনি ত’ এ সুখ। আমি জানিনি ত বুকে পেয়েও কাঁদবে এ মন বুক।। আমার শাখায় যবে ফোটেনি ফুল আমি চেয়েছি পথ আশায় আকুল, আজ ফোটা ফুলে কাঁদে কেন কুসুম ঝরার দুখ।। প্রিয় মিলন-আশায় ছিনু সুখে ছিলে যবে দূর, আজ কাছে পেয়ে পরান কাঁদে বিদায়-ভয়াতুর। এ যে অমৃতে গরল মিশা প্রাণে কেবলি বাড়িছে তৃষা, আমার স্বর্গে কেন মলিন ধরার বেদন জাগরূক।।
জরীন হরফে লেখা
বাণী
জরীন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা (নীল) আসমানের কোরআন। সেথা তারায় তারায় খোদার কালাম (তোরা) পড়, রে মুসলমান নীল আসমানের কোরআন।। সেথা ঈদের চাঁদে লেখা মোহাম্মদের ‘মীম’-এর রেখা, সুরুযেরই বাতি জ্বেলে’ পড়ে রেজোয়ান।। খোদার আরশ লুকিয়ে আছে ঐ কোরআনের মাঝে, খোঁজে ফকির-দরবেশ সেই আরশ সকাল-সাঁঝে। খোদার দিদার চাস রে, যদি পড় এ কোরআন নিরবধি; খোদার নুরের রওশনীতে রাঙ রে দেহ-প্রাণ।।
সাম্যের গান গাই (দ্বিতীয় খন্ড)
বাণী
সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! পুরুষ-হৃদয়হীন, মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ। ধরায় যাদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব, বরষে বরষে যাদের স্মরণে, করি মোরা উৎসব, খেয়ালের বশে তাদের জম্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা। লব-কুশে বনে ত্যাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা! নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে, স্নেহ প্রেম, দয়া মায়া, দীপ্ত নয়নে পরল কাজল বেদনার ঘন ছায়া। সে-যুগ হয়েছে বাসি, যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী! বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যর যুগ আজি, কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি’! নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে। যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই! স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরিতে নারী করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্ সে অত্যাচারী? যে ঘোম্টা তোমা করিয়াছে ভীরু, উড়াও সে আবরণ! দূর ক’রে দাও দাসীর চিহ্ন যেথা যত আভরণ! কখন আসিল “প্লুটো” যমরাজা নিশিথ পাখায় উড়ে, ধরিয়া তোমায় পুড়িল তাহার আঁধার বিবর-পুরে! ভেঙ্গে যম্পুরী নাগিনীর মত আয় মা পাতাল ফুঁড়ি’। আধাঁরে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি! পুরুষ যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও-পদাঘাতে লুটায়ে পড়িবে ও-চরণ-তলে দলিত যমের সাথে! সেদিন সুদূর নয়- যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।
কবিতাঃ নারী (দ্বিতীয় খন্ড)