বাণী

স্নিগ্ধ-শ্যাম-বেণী-বর্ণা এসো মালবিকা
অর্জুন-মঞ্জরি-কর্ণে গলে নীপ-মালিকা, মালবিকা।।
ক্ষীণা তন্বী জল-ভার-নমিতা
শ্যাম জম্বু-বনে এসো অমিতা
আনো কুন্দ মালতী যুঁই ভরি থালিকা, মালবিকা।।
ঘন নীল বাসে অঙ্গ ঘিরে
এসো অঞ্জনা রেবা-নদীর তীরে।
পরি’ হংস-মিথুন আঁকা শাড়ি ঝিল্‌মিল্‌
এসো ডাগর চোখে মাখি সাগরের নীল
ডাকে বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দিগ্‌-বালিকা, মালবিকা।।

বাণী

সখি বল কোন দেশে যাই।
সে বৃন্দা আছে সে বন আছে তবু সে বৃন্দাবন নাই —
গোবিন্দ বিনে লো বৃন্দে (বৃন্দে গো) রাধার বৃন্দাবন হয়েছে আঁধার।
বনে সীতার ছিল যে রাম, মোর বনে নাই ঘনশ্যাম।
আমি কি লয়ে থাকি, কেন দেহ রাখি।
পিঞ্জর আছে প'ড়ে, নাই শ্যাম পাখি,
আর ময়ূর ডাকে না 'কে গো' বলিয়া।
পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
কৃষ্ণপ্রিয়া গো 'প্রিয়া প্রিয়া' বলে পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
পথে পথে আর রহে না গো ব্রজগোপিনী আড়ি পাতিয়া।
আজি রাধার সাথে সবার আড়ি,
কৃষ্ণপ্রিয়ার কৃষ্ণ গেছে ছাড়ি'
তাই রাধার সাথে সবার আড়ি, সখি গো —
শুকায়ে গিয়াছে দ্বাদশ কুঞ্জ,
পূর্ণ চাঁদেরই ব্রজে একাদশীর তিথি,
হয়ত আবার বাজিবে বেণু তার, রবে না ব্রজে যবে রাধার স্মৃতি।।

বাণী

সন্ধ্যা–গোধূলি লগনে কে
রাঙিয়া উঠিলে কারে দেখে।।
হাতের আলতা পড়ে গেল পায়ে
অস্ত–দিগন্ত বনান্ত রাঙায়ে,
আঁখিতে লজ্জা, অধরে হাসি —
কেন অঞ্চলে মালা ফেলিলে ঢেকে।।
চিরুনি বিনোদ বিনুনীতে বাঁধে
দেখিলে সে কোন সুন্দর চাঁদে,
হৃদয়ে ভীরু প্রদীপ শিখা
কাঁপে আনন্দে থেকে থেকে।।

বাণী

সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ-বেদনা-অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষী, শস্য-লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বঁধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহা-মানবের মহা-শিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নি ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন্‌ রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।

কবিতাঃ নারী (প্রথম খন্ড)

বাণী

সোনার মেয়ে! সোনার মেয়ে!
তোমার রূপের মায়ায় আমার নয়ন- ভুবন গেল ছেয়ে'।।
	ঝরে তোমার রূপের ধারা—
	চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা,
আকাশ-ভরা হাজার তারা তোমার মুখে আছে চেয়ে'।।
	কোন গ্রহ-লোক ব্যথায় ভ'রে
	কোন অমরা শূন্য ক'রে
(ওগো) রাখলে চরণ ধরার পরে রঙ-সায়রের রঙের নেয়ে।
	শিল্পী আকেঁ তোমার ছবি
	তোমারি গান গাহে কবি
নিশীথিনী হারিয়ে রবি চাঁদ হাতে পায় তোমায় পেয়ে।।

বাণী

সখি গো বৃথা প্রবোধ দিস্‌নে ললিতে
কোন্ প্রাণে তুই বলতে পারিলি মোর শ্রীকৃষ্ণে ভুলিতে।।
সেই নন্দপুরের চন্দ্র বিহনে নাহি আনন্দ মোর।
তারে না হেরিলে তিলেকের তরে বাঁচে না চিত-চকোর।।
বলে দে বলে দে কোথা আমার প্রাণসখা
				ভাসি আমি আঁখি-নীরে 
কেঁদে কেঁদে অন্ধ হলাম ভাসি আমি আঁখি-নীরে।
সখি, এই তো আমার সাধনা
আমার মত জগত কাঁদুক, এই তো আমার কামনা।।
কাঁদতে হবে — 
যে হরিরে মোর হরিবে, তায় রাধার মত কাঁদতে হবে।
সে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে চিরজীবন কাঁদবে ভবে।
সখি কাঁদলে তারে যায় না পাওয়া
তাহলে সখি আমি পেতাম 
যদি কাঁদলে তারে পাওয়া যেত যশোমতী তারে হারাত না।
সে যে প্রেমের চির-কাঙাল 
প্রেম বিনে তায় যায় না পাওয়া।