এমনি মধুর ক্ষণে প্রিয়তম নাহি পাশে। আকুল পরান মম চম্পা-ফুল-সুবাসে।। উতলা সমীরে বাজে ব্যাকুল বাঁশি কাননে উছলি’ পড়ে সুরের রাশি, আলোকে সুরভি তারি গগন ভরিয়া হাসে।। বাতায়নে মোর নিশীথের তারা সুধায় নীরবে ডাকি, ‘হায় গো উদাসী এমন নিশায় সজল কেন গো আঁখি।’ সুদূরে রহিল বঁধু একেলা আমি অসহ বিরহ সহি দিবসযামী, আশার মালিকা রচি’, বসিয়া তাহারি আশে।।
যবে তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় তুমি করিবে প্রণাম, তব দেবতার নাম নিতে ভুলিয়া বারেক প্রিয় নিও মোর নাম।। একদা এমনি এক গোধূলি বেলা যেতেছিলে মন্দির-পথে একেলা, জানি না কাহার ভুল তোমার পূজার ফুল আমি লইলাম — সেই দেউলের পথ সেই ফুলেরই শপথ প্রিয়, তুমি ভুলিলে হায় আমি ভুলিলাম।। পথের দুঁধারে সেই কুসুম ফোটে — হায় এরা ভোলেনি, বেঁধেছিলে তরু শাখে লতার যে ডোর হের আজো খোলেনি। একদা যে নীল নভে উঠেছিল চাঁদ ছিল অসীম আকাশ ভরা অনন্ত সাধ, আজি অশ্রু-বাদল সেথা ঝরে অবিরাম।।
এলো শারদশ্রী কাশ-কুসুম-বসনা রসলোক-বাসিনী ল’য়ে ভাদরের নদী সম রূপের ঢেউ মৃদু মধু-হাসিনী।। যেন কৃশাঙ্গী তপতী তপস্যা শেষে সুন্দর বর পেয়ে হাসে প্রেমাবেশে, আমন ধানের শিষে মন ভোলানো কোন্ কথা কয় সে মঞ্জুল-ভাষিণী।। শিশির স্নিগ্ধ চাঁদের কিরণ ওকি উত্তরী তার, অরণ্য কুন্তলে খদ্যোত মণিকা মালতীর হার। তার আননের আবছায়া শতদলে দোলে হংসধ্বনিতে মায়া মঞ্জীর বোলে, সে আনন্দ এনে কেঁদে চলে যায় বিজয়ায় বেদনার বেদমতী সন্ন্যাসিনী।।
গীতি আলেখ্য : ‘শারদশ্রী’
(মা) আয় মুক্তকেশী আয় (মা) বিনোদ-বেণী বোঁধ দোব এলোচুলে। প্রভাত রবির রাঙা জবা (মা) দুলিয়ে দোব বেণী মূলে॥ মেখে শ্মশান ভস্ম কালি, ঢাকিস্ কেন রূপের ডালি তোর অঙ্গ ধুতে গঙ্গাবারি আনব শিবের জটা খুলে॥ দেব না আর শ্মশান যেতে, সহস্রারে রাখব ধ’রে। খেলে সেথায় বেড়াবি মা রামধনু রং শাড়ি প’রে। ক্ষয় হলো চাঁদ কেঁদে কেঁদে (তারে) দেব মা তোর খোঁপায় বেঁধে মোর জীবন মরণ বিল্ব জবা দিব মা তোর পায়ে তুলে॥
মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে। তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান, (ওরে) এমন মধুর লাগে।। ওরে গোলাপ নিরিবিলি নবীর কদম ছুঁয়েছিলি — তাঁর কদমের খোশবু আজো তোর আতরে জাগে।। মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে তাঁর পেশানির জ্যোতি মেখে, ওরে ও চাঁদ রাঙলি কি তুই গভীর অনুরাগে।। ওরে ভ্রমর তুই কি প্রথম চুমেছিলি তাঁহার কদম, গুন্গুনিয়ে সেই খুশি কি জানাস্ রে গুল্বাগে।।
তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয় শতরূপে শতবার। জনমে জনমে চলে তাই মোর অনন্ত অভিসার।। বনে তুমি যবে ছিলে বনফুল গেয়েছিনু গান আমি বুল্বুল্, ছিলাম তোমার পূজার থালায় চন্দন ফুলহার।। তব সংগীতে আমি ছিনু সুর নৃত্যে নূপুর–ছন্দ, আমি ছিনু তব অমরাবতীতে পারিজাত ফুল–গন্ধ। কত বসন্তে কত বরষায় খুঁজেছি তোমায় তারায় তারায়, আজিও এসেছি তেমনি আশায় ল’য়ে স্মৃতি–সম্ভার।।
