সাম্যের গান গাই (প্রথম খন্ড)
বাণী
সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ-বেদনা-অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল, নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল। তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ? অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান। জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষী, শস্য-লক্ষ্মী নারী, সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’। পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ, কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ। দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বঁধু, পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু। শষ্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল, নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল। নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’ ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে। নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’ জন্ম লভিছে মহা-মানবের মহা-শিশু তিলে তিলে। জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান মাতা ভগ্নি ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান। কোন্ রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে, কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে। কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত বোন দিল সেবা, বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা? কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী, প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।
কবিতাঃ নারী (প্রথম খন্ড)
ও ভাই হাজি! কোন্ কাবা ঘর
বাণী
ও ভাই হাজি! কোন্ কাবা ঘর হজ করিয়া এলে। গিয়ে কি ভাই খোদায় পাওয়ার পথের দিশা পেলে।। খোদার ঘরের দিদার পেয়ে বল কেমন ক’রে ফিরে এলে দুনিয়াদারীর এই না-পাক ঘরে, কেউ বলেছে কি কোন্ কাবাতে গেলে খোদায় মেলে।। খেলেছিলেন নবীজী যে-মক্কা মদিনায় বেহোঁশ হয়ে পড়নি কি পৌঁছিয়া সেথায়, কেমন ক’রে ফিরে এলে সেই মদিনা ফেলে এই দুনিয়ার কারবালাতে অধিক তৃষা আরো এনেছ কি আব্হায়াতের পানি? দিতে পারো? মোর আঁধার ঘরে দিতে পারো নূরের চেরাগ জ্বেলে?
তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে
বাণী
তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে। তুমি কান্না পাওয়াও কাননকে গো ফুল-ঝরা প্রভাতে॥ তুমি ভৈরবী সুর উদাস বিধুর অতীত দিনের স্মৃতি সুদূর, তুমি ফোটার আগে ঝরা মুকুল বৈশাখী হাওয়াতে॥ তুমি কাশের ফুলের করুণ হাসি মরা নদীর চরে তুমি শ্বেত-বসনা অশ্রুমতী উৎসব-বাসরে। তুমি মরুর বুকে পথ-হারা গোপন ব্যথার ফল্গুধারা, তুমি নীরব বীণা বাণীহীনা সঙ্গীত-সভাতে॥