বাণী

কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
হে কিশোর বেণুকা বাজাও।
মোর অনুরাগ যায় সেথা, তনু যেতে নারে,
তুমি সেই ব্রজের পথ দেখাও।।
মোর অন্ধ আঁখি কাঁদে চাঁদের তৃষায়
তব পানে হাত তুলে রাত কেটে যায়,
বঁধু, এই ভিখারিনী সেই মাধুকরী চায় –
মধুবনে, গোপীগণে যে মধু দাও।।
প্রেমহীন-নীরস জীবন ল’য়ে
পথে পথে ফিরি বৈরাগিনী হয়ে,
বুঝি আমি চাই তব প্রেম নাহি পাই –
কৃপা কর প্রেমময়, তুমি মোরে চাও।।

বাণী

গভীর রাতে জাগি’ খুঁজি তোমারে।
দূর গগনে প্রিয় তিমির–‘পারে।।
জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে
আঙিনায় ফুটে’ ফুল ঝ’রে পড়ে আছে,
বাণ–বেঁধা পাখি সম আহত এ প্রাণ মম —
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।।
মৌনা নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে,
এসো প্রিয়, এই বেলা বক্ষে নীরবে।
কত কথা কাঁটা হ’য়ে বুকে আছে বিঁধে
কত আভিমান কত জ্বালা এই হৃদে,
দেখে যাও এসো প্রিয় কত সাধ ঝ’রে গেল —
কত আশা ম’রে গেল হাহাকারে।।

১. দেখিবে এসো প্রিয়

বাণী

কেন		প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া
		কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া গো।
আমি		যত ভুলি ভুলি করি, তত আঁকড়িয়া ধরি
		শ্যামের সে রূপ ভোলা কি যায়, নিখিল শ্যামল যার শোভায়
		আকাশে সাগরে বনে কান্তারে লতায় পাতায় সে রূপ ভায়।
আমার		বঁধুর রূপের ছায়া বুকে ধরি’ আকাশ-আরশি নীল গো
বহে		ভুবন প্লাবিয়া কালারে ভাবিয়া কালো সাগর-সলিল গো। সখি গো —
		যদি ফুল হয়ে ফুটি তরু-শাখে, সে যে পল্লব হয়ে ঘিরে থাকে। সখি গো —
আমি		যেদিকে তাকাই হেরি ও-রূপ কেবল
সে যে		আমারি মাঝারে রহে করি’ নানা ছল
সে যে		বেণী হয়ে দোলে পিঠে চপল চতুর।
সে যে		আঁখির তারায় হাসে কপট নিঠুর।
		তারে কেমনে ভুলিব, সখি কেমনে ভুলিব।
থাকে		কবরী-বন্ধে কালো ডোর হয়ে কাল্‌ফণী কালো কেশে গো
থাকে		কপালের টিপে, চোখের কাজলে কপোলের তিলে মিশে’ গো!
আমার 	এ-কূল ও-কূল দু’কূল গেল।
		কূলে সই পড়িল কালি সেও কালো রূপে এলো।
রাখি		কি দিয়া মন বাঁধিয়া, বাঁধিয়া বাঁধিয়া বাঁধিয়া গো।।

বাণী

আমি	কেমন ক’রে কোথায় পাব কৃষ্ণ চাঁদের দেখা।
	অন্ধকারে খুঁজি তাঁহার ব্রজের পথ-রেখা।।
		মেঘে ঢাকা আকাশ সম
		পাপে মলিন হৃদয় মম
	সে-আকাশে উঠবে কি সে কৃষ্ণ-শশী-লেখা।।
		অশান্ত তার বেণু বাজে
		আমার ব্যাকুল বুকের মাঝে,
	(আমি) শুনেছি, সে ডাকে তা’রেই যে বিরহী একা।।

নাটক : ‘বিল্বমঙ্গল’ (বিল্বমঙ্গলের গান)

বাণী

	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐনূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
	তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
	আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,
	সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
	মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে
	বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!
				ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!
				তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
	দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,
	দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
		বিন্দু তাহার নয়ন –জলে
		সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
			কপোল–তলে!
	বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –
			হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”
			তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে।
		এবার মহা–নিশার শেষে
		আসবে ঊষা অরুণ হেসে
			করুণ্ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!
			আলো তার ভরবে এবার ঘর!
			তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

বাণী

মাধব গোবিন্দ শ্রীকৃষ্ণ মুরারি॥
কহ নাম মুখে গাহ সুখে দুখে
মণিহারই করে গেঁথে রাখ বুকে
	গোলকে হরি তার সখা সাথী প্যারী॥
পেল না ব্রহ্মা শিব ধেয়ানে যাহারে
বাঁধিল গোকুলে গোয়ালিনী তারে
	যুগে যুগে সে যে প্রেমের ভিখারি॥
লীলা রসে তাহার ডুবে রও অবিরাম
এ সংসার হবে রে সুমধুর ব্রজধাম
	ধরিবেন হৃদয়ে তোরে গিরিধারী॥