বাণী

বাদল ঝর ঝর আসিল ভাদর
বহিছে তরলতর পুবালি পবন।
মেঘলা যামিনী, দামিনী চমকায়
কালো মেয়ের ভীরু প্রেমের মতন।।
আমি ভুলে গেছি, মেঘেরা ভোলেনি
সেই কালো চোখ, সেই বিনুনী-বেণী,
প্রিয়ার দূতী সম, স্বরণে আনে মম
এসেছিল একদিন এমন শুভ-লগন।।
আর কিছু ছিল কি, ছিল না ত’ স্মরণে,
শুধু জানি দুই জন ছিনু এই ভুবনে।
সহসা মোদের মাঝে ছুটে এলো পারাপার
কে কোথায় হারাইনু, কূল নাহি পেনু আর,
মনে পড়ে বরষায়, তার সেই অসহায়
বিদায় বেলার আঁখি অশ্রু-সঘন।।

বাণী

বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে আমার তনুর তীরে।
তুমি আসিলে না, (হায়!) আশার সূর্য ডুবিল সাগর-নীরে।।
	চলে যাই যদি, চিরদিন মনে
	তোমার সে-কথা রহিবে স্মরণে
শুধু সেই কথা শোনার লাগিয়া হয়তো আসিব ফিরে।।
শুধু সেই আশে হয়তো এ তনু মরণে হবে না লীন
পথ চেয়ে চেয়ে, তব নাম গেয়ে বাজাব বিরহ-বীণ।
	হের গো, আমার যাবার সময় হলো
	তোমার সে-কথা মিথ্যা হবে না বলো,
কোন শুভক্ষণে নিমেষের তরে জড়াবে কন্ঠ ঘিরে।।

বাণী

বন-বিহঙ্গ যাও রে উড়ে মেঘ্‌না নদীর পাড়ে
দেখা হলে আমার কথা কইয়ো গিয়া তারে।
কোকিল ডাকে বকুল-ডালে, যে-মালঞ্চে সাঁঝ-সকালে রে,
আমার বন্ধু কাঁদে সেথায় গাঙেরি কিনারে।।
গিয়া তারে দিয়া আইস আমার শাপ্‌লা-মালা
আমার তরে লইয়া আইস তাহার বুকের জ্বালা।
সে যেন রে বিয়া করে, সোনার কন্যা আনে ঘরে রে,
আমার পাটের জোড় পাঠাইয়া দিব সে-কন্যারে।।

বাণী

বাঁশি কে বাজায় বনে আমি চিনি আমি চিনি,
কলসে কাঁকন চুড়ি তাল দিয়ে কয় গো রিনিঝিনি।
			আমি চিনি আমি চিনি।।
বুঝি গো বন পাপিয়া তারেই দেখে
‘চোখ গেল, চোখ গেল’ বলে উঠে ডেকে।
ও বাঁশি বাজলে ‘জলে যাসনে’, (ও বৌ যাস্‌নে)
বলে ‘ননদিনী’ ‘ননদিনী’।আমি চিনি আমি চিনি।।
মোর সেই বাঁশুরিয়ায় চেনে পাড়ার পড়শিরা
চেনে তায় যায় যমুনায় গো যত প্রেমের গরবীরা।
সে যে মোর ঘর জ্বালানো পর ভুলানো
আমার কালো বরণ গো, তমালের ডাল দুলানো।
মন কয় আমায় নিয়ে গো সেই ত খেলে ছিনিমিনি।।

বাণী

বুনো ফুলের করুণ সুবাস ঝুরে।
নাম-না-জানা গানের পাখি, তোমার গানের সুরে।।
	জানাতে হায় এলে কোথা
	বনের ছায়ার মনের ব্যথা,
তরুর ছায়া ফেলে এলে মরুর বুকে উড়ে।।
এলে চাঁদের তৃষ্ণা নিয়ে কৃষ্ণা তিথির রাতে,
পাতার বাসা ফেলে এলে সজল নয়ন-পাতে।
	ওরে পাখি, তোর সাথে হায়
	উড়তে নারি দূর অলকায়,
বন্ধনে যে বাঁধা আমি মলিন মাটির পুরে।।

বাণী

বিধুর তব অধর-কোণে মধুর হাসির রেখা।
তারি লাগি' ভিখারি মন ফেরে একা একা।।
সজাগ হয়ে আছে শ্রবণ, থির হয়েছে অধীর পবন।
তুমি কথা কইবে কখন গাইবে কুহু কেকা।।
কখন তুমি চাইবে, প্রিয়া, সলাজ অনুরাগে।
তিমির-তীরে অরুণ ঊষা তারি আশায় জাগে।
কেমন ক'রে চাঁদ যে টানে — সিন্ধু জানে, জোয়ার জানে —
দেখিতে আসি, আসিনিকো দিতে তোমায় দেখা।।

নাটক: ‌‘চক্রব্যূহ’