বাণী

বিশ্ব ব্যাপিয়া আছ তুমি জেনে শান্তি ত’ নাহি পাই।
রূপ ধরে এসো, দাঁড়াও সুমুখে, দেখিয়া আঁখি জুড়াই॥
	আমার মাঝারে যদি তুমি রহ
	কেন তবে এই অসীম বিরহ
কেন বুকে বাজে নিবিড় বেদনা মনে হয় তুমি নাই॥
চাঁদের আলোকে ভরে না গো মন, দেখিতে চাই যে চাঁদ,
ফুলর গন্ধ পাইলে, জাগে যে ফুল দেখিবার সাধ।
	(ওগো) সুন্দর, যদি নাহি দেবে ধরা
	কেন প্রেম দিলে বেদনায় ভরা
রূপের লাগিয়া কেন প্রাণ কাঁদে রূপ যদি তব নাই॥

বাণী

	বল দেখি মা নন্দরানী ওগো গোকুলবালা
(ওমা)	কেমন করে তোদের ঘরে (মা) এলো নন্দলালা।
	(মা তুই) কোন সাধনায় দধি মথন করে
	তুললি ননী হৃদয় পাত্র ভরে;
	তুই সেই নবনি দিয়ে যতন করে
	(মা তুই) গড়লি কি এই ননীর পুতুল আঁধার চিকনকালা।।
	অমন রসবিগ্রহ মা গড়তে পারে কে?
	গোপঝিয়ারি গড়তে পারে কে?
	গোকুল মেয়ে নস্ তুই মা তুই কুমারের ঝি।
	(মাগো) তুই নস্ যোগিনী তবু স্বগুণ বলে
	(মা তুই) শ্রীকৃষ্ণে বাঁধলি উদূখলে
	(আমায়) সেই যোগ তুই শিখিয়ে দে মা বসেই জপমালা।।

বাণী

বেণুকার বনে কাঁদে বাতাস বিধুর —
সে আমারি গান, প্রিয় সে আমারি সুর॥
হলুদ চাঁপার ডালে সহসা নিশীথ কালে
ডেকে ওঠে সাথি হারা পাখি ব্যথাতুর॥
নদীর ভাটির স্রোতে শ্রান্ত সাঁঝে
অশ্রু জড়িত মোর সুর যে বাজে।
সে সুরের আভাসে আঁখিপুরে জল আসে,
মনে পড়ে চলে-যাওয়া প্রিয়রে সুদূর॥

বাণী

বল্‌	নাহি ভয় নাহি ভয়!
বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!
তুই	নির্ভর কর্‌ আপনার ‘পর আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর্‌
ওরে	যে যায় যাক্ সে, তুই শুধু বল্ ‘আমার হয়নি লয়’!
বল্‌	‘আমি আছি’, আমি পুরুষোত্তম, আমি চির-দুর্জয়!
বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
যে	গেল সে নিজেরে নিঃশেষ করি’ তোদের পাত্র দিয়ে গেল ভরি’!
ঐ	বন্ধ মৃত্যু পারেনি ক’ তাঁরে পারেনি করিতে লয়!
তাই	আমাদের মাঝে নিজেরে বিলায়ে সে আজি শান্তিময়
বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে	রুদ্র তখনি ক্ষুদ্রেরে গ্রাসে আগেই যবে সে ম’রে থাকে ত্রাসে
ওরে	আপনার মাঝে বিধাতা জাগিলে বিশ্বে সে নির্ভয়
এই	ক্ষুদ্র কারায় কভু কি ভয়াল ভৈরব বাঁধা রয়?
বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে	আত্ম-অবিশ্বাসী, ভয়ে-ভীত! কেন হেন ঘন অবসাদ চিত
বল্‌	পর-বিশ্বাসে পর-মুখপানে চেয়ে কি স্বাধীন হয়?
তুই	আত্মাকে চিন্, বল আমি আছি,’ ‘সত্য আমার জয়’!
বল্‌	মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!

বাণী

বন্ধু তোমার দুয়ার বন্ধ।
তবু তোমার গৃহের পথে ছুটে কমল-গন্ধ॥
বন্ধু তোমার অলক-উড়া মনে পড়ে মনে পড়ে,
বন্ধু তোমার পুলক ঝরা আজও আছে বক্ষে ঝ’রে।
প্রথম যেদিন দুয়ার খোলা
দেখি তোমায় আপন ভোলা;
রাজপথেতে লোকের মেলা
	তুমি আপন সুরে অন্ধ॥
বন্ধু তুমি ভুলে যাওয়া গানের বুঝি সুর
হারিয়ে পাওয়া আলোকপুরের স্বপ্ন সুমধুর,
বন্ধু তোমার হাতের বীণা
তোমার মতই লজ্জাহীনা
তোমার মতই ছিন্ন ভিনা
	তোমার মতই হত-ছন্দ॥

[অগ্রন্থিত নজরুল, সংকলন ও সম্পাদনাঃ ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, ডি. এম. লাইব্রেরি, কলকাতা, ২০০৩]

বাণী

বাঁশিতে সুর শুনিয়ে নূপুর রুনঝনিয়ে
	এলে আজি বাদলপ্রাতে।
কদম কেশর ঝুরে পুলকে তোমার পায়ে,
তমাল বিছায়ে ছায়া শ্যামল আদুল গায়ে।
অলকা পথ বাহি আসিলে মেঘের নায়ে,
নাচের তালে বাজিয়া ওঠে চুড়ি কাঁকন হাতে।।
ধানি রঙের শাড়ি ফিরোজা রঙ উত্তরীয়
প'রেছি এ শ্রাবণ দোলাতে দুলিতে প্রিয়।
কেশের কমল-কলি, বনমালী, তুলিয়া আদরে
চাঁচর চিকুরে আপনি পরিও
তোমার রূপের কাজল পরায়ো আমার আঁখি পাতে।।