বাণী

দে দোল্‌ দে দোল্‌ ওরে দে দোল্‌ দে দোল্‌
জাগিয়াছে ভারত সিন্ধু তরঙ্গে কল-কল্লোল।।
পাষাণ গলেছে রে অটল টলেছে রে
জেগেছে পাগল রে ভেঙেছে আগল।।
বন্ধন ছিল যত হল খানখান রে
পাষাণ পুরীতে ডাকে জীবনেরি বান রে
মৃত্যু ক্লান্ত আজি কুড়াইয়া প্রাণ রে
দুর্মদ যৌবন আজি উতরোল।।
অভিশাপ রাত্রির আয়ু হল ক্ষয় রে
আর নাহি অচেতন আর নাহি ভয় রে
আজও যাহা আসেনি আসিবে সে জয় রে
আনন্দ ডাকে দ্বারে খোল দ্বার খোল।।

বাণী

	দীন দরিদ্র কাঙালের তরে এই দুনিয়ায় আসি’,
	হে হজরত বাদশাহ হয়েছিলে উপবাসী।
(তুমি)	চাহ নাই কেহ হইবে আমীর, পথের ফকির কেহ
(কেহ)	মাথা গুঁজিবার পাইবে না ঠাঁই, কাহারো সোনার গেহ,
	ক্ষুধার অন্ন পাইবে না কেহ, কারো শত দাস-দাসী।।
(আজ)	মানুষের ব্যথা অভাবের কথা ভাবিবার কেহ নাই
	ধনী মুস্‌লিম ভোগ ও বিলাসে ডুবিয়া আছে সদাই,
(তাই)	তোমারেই ডাকে যত মুস্‌লিম গরীব শ্রমিক চাষী।।
	বঞ্চিত মোরা হইয়াছি আজ তব রহমত হ’তে
	সাহেবী গিয়াছে, মোসাহেবী করি ফিরি দুনিয়ার পথে,
	আবার মানুষ হব কবে মোরা মানুষেরে ভালবাসি’।।

বাণী

‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
দেশবন্ধুর পার্শ্বে জ্বলিছে দেশপ্রিয়ের চিতা
এতদিন পরে বক্ষে এসেছে দুঃখের সাথি মিতা,
বহিছে অশ্রুগঙ্গা, জ্বলিছে শোকের দীপাম্বিতা —
নিভে যাবে চিতা, রয়ে যাবে ধুম, চিরদিন বুকে জাগি’।।
তুমি এসেছিলে হিন্দু-মুসলমানের মিলন-হেতু
পদ্মা ও ভাগীরথীর মাঝারে তুমি বেঁধেছিলে সেতু,
অন্ধকারের বুকে ছিলে তুমি দীপ্ত চন্দ্র-কেতু —
বন্ধন হল নন্দন-ফুল-হার তোমার ছোয়া লাগি’।।

দ্বিতীয় খন্ড

বাণী

দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যেথা থাকে
ভিখারিনী বেশে সেথা দেখেছি মোর মাকে
		মোর অন্নপূর্ণা মাকে॥
অহংকারের প্রদীপ নিয়ে স্বর্গে মাকে খুঁজি
মা ফেরেন ধূলি পথে যখন ঘটা করে পূজি
ঘুরে ঘুরে দূর আকাশে প্রণাম আমার ফিরে আসে
যথায় আতুর সন্তানে মা কোল বাড়ায়ে ডাকে॥
নামতে নারি তাদের কাছে সবার নীচে যারা
তাদের তরে আমার জগন্মাতা সর্বহারা।
অপমানের পাতাল তলে লুকিয়ে যারা আছে
তোর শ্রীচরণ রাজে সেথা নে মা তাদের কাছে
আনন্দময় তোর ভুবনে আনব কবে বিশ্বজনে
আমি দেখব জ্যোতির্ময়ী রূপে সেদিন তমসাকে
		আমার অন্নপূর্ণা মাকে॥

বাণী

দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার কর নাইয়া।
রজনী আঁধার ঘোর, মেঘ আসে ছাইয়া।।
যাত্রী গুনাহ্গার, জীর্ণ তরুণী,
অসীম পাথারে কাঁদি পথ হারাইয়া।।
হে-চির কাণ্ডারী, পাপে তাপে বোঝাই তরী
তুমি না করিলে পার, পার হব কেমন করি’,
সুখ-দিনে ভুলে’ থাকি, বিপদে তোমারে স্মরি –
ডুবাবে কি তব নাম আমারে ডুবাইয়া।।
মা’র কাছে মার খেয়ে শিশু যেমন মাকে ডাকে
যত দাও দুখ শোক, ডাকি ততই তোমাকে,
জানি শুধু তুমি আছ, আসিবে আমার ডাকে –
তোমারি এ তরী প্রভু, তুমি চল বাহিয়া।।

বাণী

‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে মা’র কোলে মাথা রাখি’,
ঘুমাতে এসেছে শ্রান্ত সেননী, জাগায়ো না তারে ডাকি’।
দেশের লাগিয়া দিয়াছে সকলি, দেয়নি নিজেরে ফাঁকি —
তাহারি শুভ্র শান্ত হাসিটি অধরে রয়েছে লাগি’।।
স্বার্থ অর্থ বিলাস বিভব গৌরব সম্মান
মায়ের চরণে দিয়াছে সে-বীর অকাতরে বলিদান,
রাজ-ভিখারির ছিল সম্বল শুধু দেহ আর প্রাণ
তাই দিয়ে দিল শেষ অঞ্জলি দানবীর বৈরাগী।।

প্রথম খন্ড