বাণী

	ওরে ব্যাকুল বেণুবন!
	তোকে দিয়েই হতো শ্যামের মুরলি মোহন।।
	তোর শাখাতে লেগে আছে শ্যামের হাতের ছোঁওয়া।
	আজো কি তার পরশ-লোভে ডালগুলি তার নোওয়া।
	আমার পড়লো মনে তোরে দেখে ও-বেণুবন পড়লো মনে,
	বৃন্দাবনে যে সাতটি সুর বাজাত শ্যাম বাঁশির সনে।।
	তার প্রথম সুরে আয় আয় ব’লে গোপিকায় ডাকে দূরে,
	তার দ্বিতীয় সুরে বহে যমুনা উজান ব্রজকুমারী ঝুরে।
	তার তৃতীয় সুরে সেই সুরে বাজে তার পায়ের নূপুর
	সেই সুর শুনে নাচে বনের ময়ূর।
	শুনি চতুর্থ সুর গুরু-গম্ভীর রোল,
	মেঘে মৃদঙ্গ বাজে লাগে ঝুলনায় দোল্।
	পঞ্চম সুরে তার কোয়েলা বোলে
	ব্রজ-বসন্ত আসে মাতে হোরির রোলে।
	ষষ্ঠ সুরে কেঁদে ডাকে সে রাধায়
	সপ্তমে নিষাদ সে ভুবন কাঁদায়।
আখর	: [নিষাদ সে তাই সাধ মিটিল না
	ডাকিয়া বাঁশির সুরে বধে হরিণীরে — নিষাদ সে
	তারে ভালোবেসে সাধ মেটে না — নিষাদ সে।।]

বাণী

ও কালো বউ! জল আনিতে যেয়ো না আর বাজিয়ে মল।
তোমায় দেখে শিউরে ওঠে কাজ্‌লা দীঘির কালো জল।
		ওগো কাজ্‌লা দীঘির কালো জল।।
	দেখে তোমার কালো আঁখি
	কালো কোকিল ওঠে ডাকি’
তোমার চোখের কাজল মাখি’ হয় সজল ঐ মেঘ-দল
		ওগো হয় সজল ঐ মেঘ-দল।।
	তোমার কালো রূপের মায়া
	দুপুর রোদে শীতল ছায়া
কচি অশথ্‌ পাতায় টলে ঐ কালো রূপ টলমল।।
	ভাদর মাসের ভরা ঝিলে
	তোমার রূপের আদর মিলে গো —
তোমার তনুর নিবিড় নীলে আকাশ করে টলমল।
		ঐ আকাশ করে টলমল।।

বাণী

ও কালো ডাগর চোখে বল জল আনিল কে।
কে গো সেই নিঠুর হিয়া না জানি কিসের ঝোঁকে।।
দু আঁখি ছাপিয়ে গেল তিতিল
কপোলখানি উজল নীলাকাশে সহসা ঢাকিল কে।।
পড়েছে ঘোমটা খসে খোঁপাটি গেছে খুলে
ঢেকেছে মুখখানি তার পাগল এলো চুলে।
না জানি কাহার কথা ব্যথিত ভাবছে মনে
সে জনা দেখিল না এ ছবি এমন ক্ষণে
স্বরগে হয়তো মেলে, মেলে না মর্তলোকে।।

বাণী

ওমা	তোর চরণে কি ফুল দিলে পূজা হবে বল।
	রক্ত-জবা অঞ্জলি মোর হ’লো যে বিফল।।
		বিশ্বে যাহা আছে মাগো
		তাতেও পূজা হবে নাকো,
	তাই তো দুঃখে নয়নে মোর শুধুই আসে জল।।
	মনের কোণে অর্ঘ্য রচি’ আঁধার ঘরে একা,
	ডাকলে তোরে সকল ভুলে দিবি না তুই দেখা।
		তখন কি মা দুঃখ-হরা
		শেষ হবে না অশ্রুধারা,
	কি ফুলে তোর পূজা হবে বল — কেন করিস্ ছল।।

বাণী

ওরে গো-রাখা রাখাল তুই কোথা হতে এলিরে
	আষাঢ় মাসের মেঘের বরণ কেমন ক'রে পেলি রে।।
	কে দিয়েছে আলতা মেখে পা'য়
	চলতে গেলে নূপুর বেজে যায় রে; নূপুর  বেজে' যায়।
তোর	আদুল গায়ে বাঁধা কেন গাঁদা রঙের চেলি রে।।
তোর	ঢলঢলে দুই চোখে যেন নীল শালুকের কুঁড়ি রে
তোরে	দেখে কেন হাসে যত গোপ-কিশোরী রে।
তোর	গলার মালার গন্ধে আমার মন
	গুনগুনিয়ে বেড়ায় রে মৌমাছি যেমন রে;
তুই	ঘর-সংসার ভুলালি কোন মায়াতে ফেলি' রে।।

বাণী

ওরে	কে বলে আরবে নদী নাই
যথা	রহমতের ঢল বহে অবিরল
দেখি	প্রেমে-দরিয়ার পানি
		যেদিকে চাই।।
যাঁর	ক্বাবা ঘরের পাশে আব-এ-জমজম
যথা	আল্লা-নামের বাদল ঝরে হরদম,
		যথা ঝরে হরদম-
যার	জোয়ার এসে দুনিয়ার দেশে দেশে
(ওরে)	পুণ্যের গুলিস্তান রচিল দেখিতে পাই।।
যার	ফোরাতের পানি আজো ধরার ‘পরে
	নিখিল নর-নারীর চোখে ঝরে
(ওরে)	শুকায় না যে নদী দুনিয়ায়,
যার	শক্তি বন্যার তরঙ্গ-বেগে
যত	বিষণ্ন-প্রাণ ওরে আনন্দে উঠল জেগে
যাঁর	প্রেম-নদীতে,যাঁর পুণ্য-তরীতে
		মোরা ত'রে যাই।।