বাণী

তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী।
শিশির-সজল ভোরের আকাশে ভাসে তোমারি উদাস ছবি।।
	বিষাদ গভীর কার কল্পনা
	রূপ ধ’রে তুমি ফের আনমনা,
তোমারি মূরতি ধেয়ায় স্বপনে বিরহী সুরের কবি।।
তুমি ধরা দিতে যেন আস নাই ধরণীতে,
একা-একা খেলা খেল সারাবেলা সাথিহীন তরণীতে।
	আঘাত হানিয়া সে-কোন্ নিঠুর
	জাগাবে তোমাতে আশাবরি সুর,
পাষাণ টুটিয়া গলিয়া পড়িবে অশ্রুর জাহ্নবী।।

বাণী

তুমি	কোন্ পথে এলে হে মায়াবী কবি
	বাজায়ে বাঁশের বাঁশরি।
এলো	রাজ-সভা ছাড়ি’ ছুটি,
	গুণিজন তোমার সে সুরে পাশরি’।।
তোমার	চলার শ্যাম-বনপথ
	কদম-কেশর-কীর্ণ,
তুমি	কেয়ার বনের খেয়াঘাটে হলে
	গোপনে কি অবতীর্ণ?
তুমি	অপরাজিতার সুনীল মাধুরী
	দু’চোখে আনিলে করিয়া কি চুরি?
তোমায়	নাগ-কেশরের ফণী-ঘেরা মউ
	পান করাল কে কিশোরী?
	জনপুরী যবে কল-কোলাহলে
	মগ্নোৎসব রাজ সভাতলে,
তুমি	একাকী বসিয়া দূর নদী-তটে
	ছায়া-বটে বাঁশি বাজালে,
তুমি	বসি’ নিরজনে ভাঁট ফুল দিয়া
	বালিকা বাণীরে সাজালে।।
যবে	রুদ্র আসিল ডম্বরু-করে
	ত্রিশূল বিঁধিয়া নীল অম্বরে,
তুমি	ফেলিয়া বাঁশরি আপনা পাশরি,
	এলে সে-প্রলয় নাটে গো,
তুমি	প্রাণের রক্তে রাঙালে তোমার
	জীবন-গোধূলি পাটে গো।।
	হে চির-কিশোর, হে চির-তরুণ,
	চির-শিশু চির-কোমল করুণ।
	দাও অমিয়া আরো অমিয়া,
দাও	উদয়-ঊষারে লজ্জা গো তুমি
	গোধূলির রঙে রঙিয়া।
	প্রখর রবি-প্রদীপ্ত গগনে,
	তুমি রাঙা মেঘ খেল আন্‌মনে,
	উৎসব-শেষে দেউলাঙ্গনে
	নিরালা বাজাও বাঁশরি,
আমি	স্বপন-জড়িত ঘুমে সেই সুর
	শুনিব সকল পাশরি’।।

বাণী

তোমার কবরে প্রিয় মোর তরে একটু রাখিও ঠাঁই।
মরণে যেন সে পরশ পাই গো জীবনে যা পাই নাই।।
	তোমারে চাহিয়া ওগো প্রিয়তম
	কাঁদিয়া আমার কাটিল জনম,
কেঁদেছি বিরহে এবার যেন গো মিলনে কাঁদিতে পাই।।
ঐ কবরের বাসর ঘরে গো তোমার বুকের কাছে
কাঁদিবে লায়লী, মজনু তোমার য’দিন ধরণী আছে।
	যে যাহারে চায় কেন নাহি পায়,
	কেন হেথা প্রেম-ফুল ঝ’রে যায় —
প্রেমের বিধাতা থাকে যদি কেউ শুধাইব তারে তাই।।

নাটিকা: ‌‘লায়লী মজনু’

বাণী

তোমার বীণার মূর্ছনাতে বাজাও আমার বাণী।
তোমার সুরে শোনাও আমার গানের আধেকখানি।।
	শুনব শুধু তোমার কথা
	এবার আমার নীরবতা,
আমার সুরের ছবি আঁকুক তোমার পদ্মপাণি।।

বাণী

	ত্রিজগত আলো করে আছে কালো মেয়ের পায়ের শোভা।
	মহাভাবে বিভোর শঙ্কর, ঐ পা জড়িয়ে মনোলোভা।।
	দলে দলে গগন বেয়ে গ্রহ তারা এলো ধেয়ে,
ঐ	চরণ শোভা দেখবে বলে, ঐ পায়ের নূপুর হওয়ার ছলে
সেই	শোভা কেমন বলতে গিয়ে ব্রহ্ম হলো চিরমৌনী বোবা।।
ঐ	চরণ শোভা দেখার তরে, যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে
	ত্রিভুবন ভুলে অনন্তকাল যোগী থাকেন ধেয়ান ধ'রে।
	ও শুধু চরণ শোভা নয়, ঐ যে পরব্রহ্ম জ্যোতি
	শ্রী চণ্ডী বেদ পুরাণে ওরই প্রেম-আরতি
মা	দেখ্‌ত যদি নিজের চরণ নিজেই দিত বিল্বজবা
	আপনার ঐ রাঙা পায়ে নিজেই দিত বিল্বজবা।।

বাণী

তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, (ওরে) ‌‘আয়’,
বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
(ওগো) কাল্‌-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
বিশ্ব ভরি' ওঠে স্তব নমো নমঃ
অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম।
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
ধরি' অজানা পথ আসিল অনাগত
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।