বাণী

ভুলিতে পারিনে তাই আসিয়াছি পথ ভুলি’।
ভোল মোর সে অপরাধ, আজি যে লগ্ন গোধূলি।।
এমনি রঙিন বেলায় খেলেছি তোমায় আমায়,
খুঁজিতে এসেছি তাই সেই পুরানো দিনগুলি।।
তুমি যে গেছ ভুলে – ছিল না আমার মনে,
তাই আসিয়াছি তব বেড়া–দেওয়া ফুলবনে।
গেঁথেছি কতই মালা এই বাগানের ফুল তুলি’—
আজও সেথা গাহে গান আমার পোষা বুলবুলি।।

বাণী

আদি পরম বাণী, ঊর বীণাপাণি।
আরতি করে তব কোটি কোবিদ জ্ঞানী।।
হিমেল শীত গত, ফাগুন মুঞ্জরে,
কানন-বীণা বাজে সমীরে মর্মরে।
গাহিছে মুহু মুহু আগমনী কুহু,
প্রকৃতি বন্দিছে নব কুসুম আনি’।।
মূক ধরণী করে বেদনা-আরতি,
বীণা-মুখর তারে কর মা ভারতী!
বক্ষে নব আশা, কণ্ঠে নব ভাষা
দাও মা, আশিস যাচে নিখিল প্রাণী।।
শুচি রুচির আলো-মরাল বাহিনী
আনিলে আদি জ্যোতি, সৃজিলে কাহিনী।
কণ্ঠে নাহি গীতি, বক্ষে ত্রাস-ভীতি,
কর প্রবুদ্ধ মা বর অভয় দানি’।।
ব্রহ্মবাদিনী আদিম বেদ-মাতা,
এসো মা, কোটি-দল হৃদি আসন পাতা।
অশ্রুমতী মা গো, নব বাণীতে জাগো,
রুদ্ধ দ্বার খোলো সাজিয়া রুদ্রাণী।।

বাণী

ঘুম টুটেছে ফুল-কলিদের রঙ লেগেছে ফুলবনে।
দখিনা বাতাস আভাসে জানায় আগমনী তার মোর মনে।।
	মন উচাটন, মনে রয় না রয় না
	তার বিনা, কথা আর, কয় না কয় না,
নয়নে ঘুম আর সয় না সয় না — শুধাই তা’র কথা জনে জনে।।
রাঙা রঙের ছোঁয়া লাগে লাজ-রাঙা মোর মনে।
নিশীথ-রাতে পলাশ-বনে মিল্‌ব কি বঁধুর সনে।।

বাণী

তুমি আনন্দ ঘনশ্যাম আমি প্রেম-পাগলিনী রাধা।
তব ডাক শুনে ছুটে যাই বনে আমি না মানি কুলের বাধা।।
	শূন্য প্রাণের গাগরি ঘিরে
	নিতি আসি রস-যমুনার তীরে
অঙ্গ ভাসায়ে তরঙ্গ-নীরে শুনি তব বাঁশি সাধা।।
যুগ-যুগান্ত অনন্ত কাল হৃদয়-বৃন্দাবনে
তোমাতে আমাতে এই লীলা, নাথ! চলেছে, সঙ্গোপনে।
	মোর সাথে কাঁদে প্রেম-বিগলিতা
	ভক্তি ও প্রীতি বিশাখা-ললিতা।
তোমারে যে চায়, মোর মতো, হায়! সার শুধু তার কাঁদা।।

বাণী

পিয়াসী প্রাণ তারে চায়, এনে দে তা’য়।
জনম জনম বিরহী প্রাণ মম
সাথিহীন পাখি সম কাঁদিয়া বেড়ায়।।
চাঁদের দীপ জ্বালি’ খুঁজিছে আকাশ তা’রে
না পেয়ে তাহার দিশা কাঁদে সে বাদল-ধারে।
ঝরে অভিমানে ফুল তারে না-দেখতে পেয়ে,
বহে কাঁদন-নদী পাষাণ গিরি বেয়ে।
আসিব ব’লে সে গেছে চ’লে —
(আমি) আজো আছি বেঁচে তা’রি আশায়।।

বাণী

হে গোবিন্দ রাখ চরণে।
মোরা তব চরণে শরণাগত আশ্রয় দাও আশ্রিত জনে হে॥
	গঙ্গা ঝরে যে শ্রীচরণ বেয়ে
	কেন দুখ পাই সে চরণ চেয়ে
এ ত্রিতাপ জ্বালা হর হে শ্রীহরি, চাহ করুণা সিক্ত নয়নে॥
হরি ভিক্ষা চাহিলে মানুষ নাহি ফিরায়
তোমারি দুয়ারে হাত পাতিল যে, ফিরাবে কি তুমি তায়।
	হরি সব তরী ডুবে যায়
	তোমার চরণ তরী ত’ ডোবে না হায়,
তব চরণ ধরিয়া ডুবে মরি যদি রবে কলঙ্ক নিখিল ভুবনে॥