বাণী

আমার	আপনার চেয়ে আপন যে জন
			খুঁজি তারে আমি আপনায়॥
আমি		শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
			আমারি তিয়াসী বাসনায়॥
		আমারি মনের তৃষিত আকাশে
		কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
		কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
			নিশীথে স্বপনে জোছনায়॥
আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলী-উজল অভিরাম।
		আমারি রচিত কাননে বসিয়া
		পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া
		সে-মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া
			আপনারি গলে দোলে হায়॥

বাণী

এলোঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রেচঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।
		বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর
		পরজ বসন্তের সুর
পান্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।
		কিশলয়ে পর্ণে অশান্ত
		ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত
পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।।
		এলোমেলো দখিনা মলয় রে
		প্রলাপ বকিছে বনময় রে
অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।

বাণী

	ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে।
	আমার প্রলয় সুন্দর এলে॥
	পথে-পথে ঝরা কুসুম ছাড়ায়ে
	রিক্ত শাখায় কিশলয় জড়ায়ে,
	গৈরিক উত্তরী গগনে উড়ায়ে —
	রুদ্ধ ভবনের দুয়ার ঠেলে॥
	বৈশাখী পূর্ণিমা চাঁদের তিলক
		তোমারে পরাব,
মোর 	অঞ্চল দিয়া তব জটা নিঙাড়িয়া
		সুরধুনী ঝরাব।
	যে-মালা নিলে না আমার ফাগুনে
	জ্বালা তারে তব রূপের আগুনে,
	মরণ দিয়া তব চরণ জড়াব
	হে মোর উদাসীন, যেয়ো না ফেলে॥

বাণী

এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি॥
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি॥
কেতকী-কদম-যূথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা,
পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
তড়াগে পুকুরে থই থই করে শ্যামল শোভার নবনী॥
শাপলা শালুক সাজাইয়া সাজি শরতে শিশির নাহিয়া,
শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগামনী-গীত গাহিয়া।
অঘ্রাণে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনি॥
শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,
ভাটিয়ালি গাও মাঝিদের সাথে গো, কীর্তন শোনো রাতে মা।
ফাল্গুনে রাঙা ফুলের আবিরে রাঙাও নিখিল ধরণী॥

বাণী

আমি পথ-মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে। 
গোপন অশ্রু-সম রাতের নয়ন-পাতে।। 
দেবতা চাহে না মোরে 
গাঁথে না মালার ডোরে, 
অভিমানে তাই ভোরে শুকাই শিশির-সাথে।। 
মধুর সুরভি ছিল আমার পরাণ ভরা, 
আমার কামনা ছিল মালা হয়ে ঝ’রে পড়া। 
ভালোবাসা পেয়ে যদি 
আমি কাঁদিতাম নিরবধি, 
সে-বেদনা ছিল ভালো, সুখ ছিল সে-কাঁদাতে।। 

বাণী

কেন	মনে জাগে উদাসিনী গৌরী উমার স্মৃতি!
আর	কত দূরে কত দেরি আনন্দময়ীর আসার তিথি।।
	কেন	পদ্মদীঘি দুলে ওঠে হৃদয়ে
	মোর	নন্দিনী মা আসে কি রাঙা চরণ ল’য়ে?
কেন	নয়নের বাতায়নে উতলা হ’ল, অশ্রুর ভ্রমর-বীথি।।
	তার মন নাই, উন্মনা চিন্ময়ী সে, তাই ছেলের কথা মনে নাই,
	শারদ-শ্রী এলো, পরমা-শ্রী কই — কাঁদি আর পথ-পানে চাই।
	ওকি	ঘরে এসে, নাম ধরে, ডেকে চ’লে যায়
		শিউলির অঞ্জলি ফেলে আঙিনায়,
	ভোরের ভৈরবী বুকে মোর কাঁদে গো, ওকি তার করুণ-গীতি।।

গীতিচিত্রঃ শারদ-শ্রী