বাণী

একি সুরে (কোন্ সুরে) তুমি গান শুনালে ভিনদেশি পাখি
এ যে সুর নহে, মদির সুরা, রে সুরের সাকি।।
		বসি’ মোর জানালা পাশে
		কেন বুক-ভাঙা নিরাশে
যাও ঘুম ভাঙায়ে নিতি সকরুণ সুরে ডাকি।।
তোর ও সুরে কাঁদছে ঊষা অস্ত চাঁদের গলা ধ’রে
ভোর-গগনের কপোল বেয়ে শিশির-অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
		আমি রইতে নারি ঘরে
		কেন প্রাণ কেমন করে
আমার মন লাগে না কাজে, আর জলে ভরে আঁখি।।

বাণী

এসো আনন্দিতা ত্রিলোক-বন্দিতা কর দীপান্বিতা আঁধার অবনি মা।
ব্যাপিয়া চরাচর শারদ অম্বর ছড়াও অভয় হাসির লাবনি মা।।
	সারাটি বরষ নিখিল ব্যথিত
	চাহিয়া আছে মা তব আসা-পথ,
ধরার সন্তানে ধর তব কোলে ভুলাও দুঃখ-শোক চির-করুণাময়ী মা।।
	অটুট স্বাস্থ্য দীর্ঘ পরমায়ু
	দাও আরো আলো নির্মল বায়ু,
দশ হাতে তব আনো মা কল্যাণ পীড়িত-চিত গাহে অকাল জাগরণী মা।।

বাণী

এলো ঐ শারদ রাতি!
শেফালি-সুগন্ধে ভরিয়া পবনে, জ্বালায়ে চাঁদের বাতি।।
বরষার জলধারা ত্যাজিল সে-খরবেগ
ঝরঝর ঝরণে রিক্ত হইল মেঘ,
শ্বেত-হংস খেলে, সারঙ্ সুরে মাতি’।।
আবরণ-হীনা মেঘ ভেসে যায় বাতাসে
কাহার আগমনী প্রকাশে আভাসে,
কদম্ব রেণু মাখি’, এসো প্রিয় সাথি।।

বাণী

এ জনমে মোদের মিলন হবে না আর, জানি জানি।
মাঝে সাগর, এপার ওপার করি মোরা কানাকানি।।
	দুজনে দুকূলে থাকি’
	কাঁদি মোরা চখা-চখি,
বিরহের রাত পোহায় না আর বুকে শুকায় বুকের বাণী।।
	মোদের পূজা আরতি হায়
	চোখের জলে, গহন ব্যথায়,
মোদের বুকে বাজায় বীণা বেদনারি বীণাপাণি।।
	হেথায় মিলন-রাতের মালা
	ম্লান হয়ে যায় প্রভাত বেলা,
সকালে যার তরে কাঁদি, বিকালে তায় হেলাফেলা।
	মোদের এ প্রেম-ফুল না শুকায়
	নিঠুর হাতে কঠোর ছোঁওয়ায়,
ব্যথার মাঝে চির-অমর মোদের মিলন-কুসুমদানি।।

বাণী

একেলা ঢুলিয়া ঢুলিয়া কে যায়।
চলিতে চরণ চরণে জড়ায়।।
এখনো ভাঙেনি মল্লিকার ঘুম
এখনো অমলিন-কবরী কুসুম,
নয়নে নিশির ঝরেনি শিশির
বিহগ পাখায় বিহগী ঘুমায়।।
অভিসার নিশি বৃথাই জাগি কোথা
অভিমানিনী চলে মূর্তিমতী ব্যথা।
ভীরু চকিত চোখে করুণ কাতরতা
রবি না ওঠে যেন মিনতি জানায়।।

বাণী

এসো প্রিয়তম এসো প্রাণে।
এসো সুদূর মোর অভিমানে।।
এসো কম্পিত হৃদয়ের ছন্দে
এসো বিরহের বিধুর আনন্দে,
এসো বেদনার চন্দন-গন্ধে —
		মম পূজার বন্দনা-গানে।।
সুখ-স্বপন হয়ে এসো ঘুমে
এসো হৃদয়েশ, মালার কুসুমে,
এসো তপনের রূপে আঁখি চু’মে —
		ঘুম ভাঙায়ো নিশি-অবসানে।।
এসো মাধবী-কাঁকন হয়ে হাতে
এসো কাজল হয়ে আঁখি-পাতে,
এসো পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে রাতে —
		এসো ফুল-চোর মালতী-বিতানে।।

নাটক : ‘অর্জুন বিজয়’ (নাট্যকার : দেবেন্দ্রনাথ রাহা)